আট বছর পর ফের ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের’ ফাইনালে পা রেখেছে আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে তারা হারিয়েছে ৩-০ গোলের ব্যবধানে।
লুসাইল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) আলবিসেলেস্তেদের হয়ে জোড়া গোল করেন হুলিয়ান আলভারেজ। এক অ্যাসিস্টের সঙ্গে একটি গোল করেন লিওনেল মেসি। ১৯৮৬ সালে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর্জেন্টিনা ২০১৪ সালের পর আরও একবার শিরোপা জেতার সুযোগ পাচ্ছে মেসিদের হাত ধরে।
ফাইনালের টিকিট নিশ্চিতের ম্যাচে এদিন কোনো পাত্তাই পায়নি ক্রোয়েশিয়া। বরং ম্যাচের ৬৯ মিনিটের মধ্যে তাদের জালে ৩ গোল জড়িয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রতিশোধ তুলে নেয় মেসিরা। ২০১৮ সালে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে লুকা মদ্রিচরা ৩-০ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে।
তবে লুসাইল স্টেডিয়ামে তারা কোনো বলই জড়াতে পারেনি আলবিসেলেস্তেদের জালে। গোলের উদ্দেশে ক্রোয়াটদের নেয়া ১২ শটের মাত্র ২টি ছিল লক্ষ্য বরাবর। তবে সেগুলো পরাস্ত করতে পারেনি এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার নেয়া ৯ শটের ৭টিই ছিল লক্ষ্য বরাবর।
এর আগে ম্যাচের ১৮ মিনিট পেরিয়েও আক্রমণে বেশ ব্যাকফুটে ছিল আর্জেন্টিনা। ক্রোয়েশিয়ার ৬৫ শতাংশের বিপরীতে মেসিরা তখন পর্যন্ত মাত্র ৩৫ শতাংশ সময় বল দখলে রাখতে পেরেছিল। তবে এরপরের সময়টা এককভাবে আধিপত্য করে খেলেছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২৫ মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে প্রথম শট নেয় আর্জেন্টিনা। অবশ্য ডি-বক্সের বাইরে থেকে এনজো ফার্নান্দেজের শট সে যাত্রায় ফিরিয়ে দিয়ে দলকে বিপদমুক্ত রাখেন লিভাকোভিচ।
এক মিনিট পর আর্জেন্টিনার রক্ষণে হানা দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। তবে বিপদ বাড়ার আগেই কোভাসিচকে আটকে দেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডাররা। ৩১ মিনিটে গোলের জন্য শট নেন পেরিসিচ। তবে তার শটটি চলে যায় বারের উপর দিয়ে। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ডি-বক্সে লিভাকোভিচের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। সফল স্পটকিকে দলকে এগিয়ে নেন লিওনেল মেসি। এ গোলের মাধ্যমে ১১ গোল করে ফিফা বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের তালিকায় বাতিস্তুতাকে পেছনে ফেলেছেন তিনি।
৩৯ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ক্রোয়াটদের ডি-বক্সে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে লিভাকোভিচকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান হুলিয়ান আলভারেজ। এক মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে রদ্রিগো ডি পলের শট ক্রোয়াট ডিফেন্ডারদের বাধায় লক্ষ্যে থাকেনি। বিরতির আগে গোল শোধের সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। তবে ওতামেন্দি ও এমিলিয়ানো মার্টিনেজের নৈপুণ্যে তাদের সে সুযোগ বিফলে যায়। ২-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতির পর জোড়া পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে ক্রোয়েশিয়া। সোসার বদলি হিসেবে নামেন ওরসিচ আর পাসালিচের পরিবর্তে নামেন ভ্লাসিচ। অবশ্য তাতেও বদলায়নি তাদের ম্যাচের ভাগ্য। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে একই ধার ধরে রাখে আর্জেন্টিনা। ৪৯ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে গোলের জন্য শট নেন লিয়ান্দ্রো পারেদেস। লোভরেন, জিভার্দিওলদের বাধা টপকালেও তার শটটি আটকে দেন গোলবারে থাকা লিভাকোভিচ।
৫৮ মিনিটে পেনাল্টি এরিয়া থেকে গোলের জন্য শট নেন মেসি। তবে লিভাকোভিচের বাধায় সে বল জালে জড়ায়নি। তিন মিনিট পর রক্ষণের শক্তি বাড়াতে পারেদেসকে তুলে লিসান্দ্রো মার্টিনেজকে মাঠে নামান স্ক্যালোনি। পরের মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট করে ক্রোয়াটরা। অবশ্য ডি-বক্সে এগিয়ে এসে দলকে বিপদমুক্ত করেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। বারবার এগিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করায় মদ্রিচরা কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারছিল না। ৬৭ মিনিটে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ক্রিস্টিয়ান রোমেরো।
গোল পরিশোধের বদলে ৬৯ মিনিটে উল্টো আলভারেজ হানায় তৃতীয় গোলটি হজম করে গত আসরের রানার্সআপরা। পাল্টা আক্রমণে ডানপ্রান্ত থেকে বল নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণে ঢুকে মেসি বল বাড়িয়ে দেন ডি-বক্সে থাকা আলভারেজকে। নিঁখুত শটে তিনি পরাস্ত করেন লিভাকোভিচকে। কাতার বিশ্বকাপে এ নিয়ে চতুর্থ গোলের দেখা পেলেন এ তারকা।
৭১ মিনিটে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন নিকোলাস ওতামেন্দি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে পেরিসিচের নেয়া ফ্রি-কিক সরাসরি চলে যায় এমিলিয়ানোর হাতে। তিন মিনিট পর হুলিয়ান আলভারেজকে তুলে পাউলো দিবালাকে নামান স্ক্যালোনি। এবারের বিশ্বকাপে এবারই প্রথম আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে নামার সুযোগ পেলেন এই ফরোয়ার্ড। ৮৫ মিনিটে গোলবারের সামনে শট নিতে ব্যর্থ হয়ে দলকে হতাশ করেন লোভরেন। আর তাতে ৩-০ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মদ্রিচদের।
আগামী ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে ফ্রান্স-মরক্কোর মধ্যে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দল।