মোশাররফ হোসেন : কার্বন নি:সরনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ব ।এর বিরূপ প্রভাবে মানুষের জীবনযাত্রার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বীগ্ন বিজ্ঞানীরা। তারা চলতি গ্রীষ্মে উষ্ণতা বৃদ্ধির মাত্রা দেখে রীতিমত গবেষণায় বসেছেন ।তারা বলছেন বায়ুমন্ডল ও ভূমন্ডলে আসতে পারে স্থায়ী পরিবর্তন ।মেরু অনচলে আর্কটিক সাগরের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচচতা বেড়ে যাবে । দাবানলে পুড়ে আমাজনসহ বিশ্বের বনানচল কমে যাবে ।বন্যা ,খরা , জলচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড় বেড়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে । প্রাকৃতিক ভারসাম্যে যে পরিবর্তন আসবে তাতে আর আগের জায়গায় ফিরে আসার সুযোগ থাকবেনা ।
স্টকহোম রেসাইলেন্স সেন্টারের বৈজ্ঞানিক ও গবেষক ওয়েন গিফানি সমপ্রতি বলেছেন, তাপপ্রবাহের (হিট ওয়েব) মাত্রা যেভাবে বাড়ছে তা কোথায় গিয়ে দাড়াবে অনুমান করা কঠিন ।আকস্মিক এ পরিবর্তন অপ্রত্যাশিত ও শক্তিধর ।২০১৯ সালে “নেচার” জার্নালে তিনি এক প্রতিবেদনে বলেন , মেরু অনচলে বরফ গলার মাত্রা ২০৩০ সালের পর দ্রুত বাড়বে ।কিন্তু এখন বায়ুমন্ডলে তাপপ্রবাহের মাত্রা দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বকে এজন্য ঐসময় পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে হবেনা ।
এই মুহূর্তে কানাডা ও আমেরিকার বনানচল দাবানলে পুড়ছে । কানাডার যে সব জায়গা বরফে ঢাকা থাকে সেসব জায়গা তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস । টরন্টো ,অটোয়া ,মনন্ট্রিয়াল ,ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, আলবার্টা,সাসকাচুয়াননের শহর গুলোতে চলছে তাপপ্রবাহ । ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি ।জুলাই মাসে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লিটন গ্রাম পুড়ে যায় ।মানুষ মারা যায় ৬০০র বেশি । ১০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয় অন্যত্র । সেখানের বনানচলে এখনও চলছে দাবানল ।ভ্যানকুভারের অনেক জায়গায় আকস্মিক তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন বিপর্যস্থ ।
২০২০ সালে কানাডার দাবানল এলাকা ছিল ৫৩১ । ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৭২ । এসব দাবানল নিয়ন্ত্রণে আধুনিক বিমান “ ওয়াটার বোম্বার সিআই ৪১৫ ”ব্যবহার করা হয় ।যার রয়েছে ৬ হাজার ১৩০ লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন পানিবাহী ট্যাংক ।তদুপরি ডিএইচসি টারবো হেলিকপ্টারের ৭০০০ পাউন্ড ধারণক্ষমতার গ্যাস ও পানি ব্যাবহার করা হয় ।এ মুহুর্তে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বনানচলের দাবানল নিয়ন্ত্রণে হিমিশিম খাচ্ছে কানাডা, মেক্সিকো ও আমেরিকার ফায়ার সার্ভিসের বিশাল বাহিনি ।
কানাডার আলবার্টা রাজ্যজুড়ে রয়েছে বিশাল বনানচল । এখানে রয়েছে বিভিন্ন খনিজদ্রব্যের বিশাল আধার ।উত্তরপূর্বানচলে একদা কানাডার অন্তর্ভুক্ত ছিল আলাস্কা । বন ও খনিজ দ্রব্যে ভরা এ রাজ্য বহুবছর আগে আমেরিকার কাছে বিক্রয় করে দেয় ।
অন্যদিকে আমেরিকার ওয়াশিংটন ,ওরেগনের মত শহরগুলোর বনানচলে চলছে দাবানল।গরমে দুর্বিসহ অবস্থা ।মানুষও মারা গেছে । যুক্তরাস্ট্রের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল সোয়েইন বলেছেন , এবার যুক্তরাস্ট্রের তাপমাত্রা বেড়েছে ১০-১২ ডিগ্রি।যা আগে বাড়তো ১- ২ ডিগ্রি ।এটাই উদ্বেগের কারণ ।আবার আলজেরিয়া ,গ্রীস ও জাপান, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা অনেক বেড়েেেছ ।এর প্রভাবে বেড়েছে ঘূর্ণিঝড় , খরা ,জল”্ছাস,বন্যা নানা মহামারি ।
বিশ্বের পরাশক্তিসমুহের মধ্যে সামরিক পরীক্ষাক্ষেত্র হিসেবে আর্কটিক সাগর ব্যবহার হওয়ায় বরফে চিড় ধরেছে । এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে তলিয়ে যাবে বহু দেশ ।। সর্ব উত্তরের দেশ কানাডা ও গ্রীণল্যান্ড সহ সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি দেশসমুহ ক্ষতিগ্রস্থ হবে বেশী ।
প্রশান্ত মহাসাগরের তীরের রাজ্যসমুহে তাপদগ্ধ হলেও আটলান্টিক মহাগরের রাজ্যসমুহ শীতল । কানাডা ও আমেরিকার এসকল রাজ্যের জীবনযাত্রা আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে এখন পরিবর্তন হচ্ছে । বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে এ পরিবর্তন । কার্বন নি:সরন বিষয়ে মহাসতর্কতা খুবই জরুরি । ।জ্বালানি ব্যবহার ও সামরিক ও বেসামরিক বর্জ্য পানি ও মাটিতে নির্গমনের আধুনিক ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই । জেগে উঠতে হবে মানব জাতিকে । বিশ্ব উদ্যোগ ছাড়া বাঁচার উপায় নেই ।
সিবিসি নিউজ জানায,ব্রিটিশ কলাম্বিয়া র হোয়াইট রুক লেকের৩২৫বর্গ কিলোমিটার দাবানল আরও ৪০বর্গ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে ছড়িয়ে পড়েছে । হাইওয়ে ৯৭ এর স্যামন রিভার রোড, ওয়েসট সাইড রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে সেন্ট্রাল ওকনাগান । আর্মস্ট্রং ও এসপেলুমাসিন থেকে ১০ হাজার নাগরিক সরে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন রাজজো সরকার ।