আবু নাঈম সোহাগ নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় দায় নিতে নারাজ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। শীর্ষ কর্মকর্তারা। গতকাল জরুরি সভা শেষে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম একই সুরে বলেছেন—সোহাগ ভুল করেছে, তার শাস্তি সে পেয়েছে। আমরা দায় নেব কেন? ‘জালিয়াতি হলে তিনি (আবু নাঈম সোহাগ) ব্যক্তিগতভাবে করেছেন। এ দায় বাংলাদেশের ফুটবল ফেডারেশনের নয়। এ ঘটনার সঙ্গে ফিন্যান্স কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই। সে যদি সঠিকভাবে করত, তবে নিষিদ্ধ হতো না। এ ঘটনার দায় আমরা নেব না’—গতকাল জরুরি সভা শেষে বলছিলেন বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘কী হয়েছে এবং কেন হয়েছে—তা জানাতে চাই। এ জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এ ব্যাপারটা যেন আগামীতে পুনরায় আর না ঘটে।’ বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা জালিয়াতির ঘটনার দায় কাঁধে নিতে অস্বীকৃতি জানানো সালাম মুর্শেদী নিশ্চিত করতে চান ভবিষ্যতে বাফুফের কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা থাকবে, ‘আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা দ্রুত বাস্তবায়ন করব। আমাদের স্বচ্ছতা যেন আরও বাড়ে সেদিকে নজর দেব।’
সম্প্রতি ফিফা বাফুফের যে কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে, তার মধ্যে ছিলেন আব্দুস সালাম মুর্শেদীও। এ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আব্দুস সালাস মুর্শেদী বলেন, ‘এএফসি-ফিফা থেকে নিয়মিত চিঠি আসে আমাদের কাছে। আমরা নিজেদের মতো করে উত্তর দিই। আবু নাঈম সোহাগ তার ক্ষমতা সঠিকভাবে ব্যবহার করেনি। এ কারণেই সে শাস্তি পেয়েছে।’ ব্রিফিংয়ের এক পর্যায়ে আব্দুস সালাম মুর্শেদী দাবি করেন, বাফুফের অভ্যন্তরে কোনো দুর্নীতি হয়নি, ‘কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। একটা জিনিস ক্রয় করতে সে (সোহাগ) সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করেনি। এ কারণে তদন্ত করেছে ফিফা। জালিয়াতি হলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে করেছেন।
তিনি অর্থ একটা জায়গায় পাঠিয়েছেন; কিন্তু এ দায়টা বাংলাদেশের ফুটবল ফেডারেশনের নয়।’ ফিফার নোটিশ পাওয়া ও তদন্ত চলাকালে কেন আবু নাঈম সোহাগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? প্রশ্নের উত্তরে আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেছেন, ‘একটা বিষয় আপনাদের মাথায় রাখতে হবে—কোনো ঘটনার তদন্ত চলাকালে কাউকে নিষিদ্ধ করা যায় না।’ ব্যর্থতার দায়ভার মাথায় নিয়ে ফুটবল ফেডারেশন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা আছে কি না? প্রশ্নটা যত্নের সঙ্গে এড়িয়ে যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী। ফিফার পর বাফুফে সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছে। এখানেই কি দায়িত্ব শেষ স্থানীয় ফুটবল সংস্থার; ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না? জানতে চাইলে আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেছেন, ‘আমরা তদন্ত করে যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখব। আমরা সুস্পষ্টভাবে কোনো অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ বাফুফে জালিয়াতির সঙ্গে একাধিক স্টাফ জড়িত থাকলেও তাদের নাম আসছে না। এ নিয়ে বাফুফে শীর্ষ কর্মকর্তারা অবশ্য কিছু বলেননি। সংস্থাটির সূত্রের খবর, এরই মধ্যে সিনিয়র স্টাফদের নিয়ে একাধিক আলোচনায় বসেছিলেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। সব কার্যক্রমে সাবধানে পা ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইমরান হোসেন তুষারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হলেও বাফুফের সার্বিক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ কর্তারা। এ নিয়ে নির্বাহী কমিটির জরুরি সভার বাইরেও একাধিকবার আলোচনা হয়েছে বলে বাফুফের একটা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে সাবেক ফুটবলারদের ক্ষোভ কিছুতেই প্রশমিত হচ্ছে না। তারা ঘটনার পেছনে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন। সাবেক ফুটবলার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘আবু নাঈম সোহাগ জালিয়াতির সুবিধাভোগী। পেছনে থেকে বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তারাও সুবিধা নিয়েছেন। তাদেরও দায় নিতে হবে। দায়দায়িত্ব নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।’