পুরান ঢাকার লালবাগ-চকবাজার এলাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে বহিষ্কৃত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের বাসায় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের সত্যতা পায়নি পুলিশ।
র্যাবের পক্ষ থেকে রাজধানীর চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলা দুটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পুলিশ এ তথ্য উল্লেখ করেছে। এতে করে অস্ত্র ও মাদক মামলা থেকে দায় মুক্তি পাচ্ছেন ইরফান। যদিও নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আদালত থেকে তার জামিন মেলেনি এখনো।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, তাকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, তার কাছে কোনো অস্ত্র ও মাদক ছিল না। তার সহযোগী জাহিদের কাছ থেকে এই অস্ত্র ও মাদক পাওয়া গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, অস্ত্র ও মাদক তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদানে কোথাও বলা হয়নি যে ওই অস্ত্র ও মাদক তার পজিশন থেকে পাওয়া গেছে। দায়ের করা মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকার কথা বলা হলেও জব্দ তালিকায় ম্যাজিস্ট্রেটের কোনো স্বাক্ষর নেই। মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না যে ওই অস্ত্র ও মাদক তার ছিল। সাক্ষ্য প্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় এই দুই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (মিসটেক অব ফ্যাক্ট) দেওয়া হয়েছে।
ইরফানের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইরফানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের মামলার তদন্ত করেছে লালবাগ থানা পুলিশ। আমরা তদন্ত করে যা পেয়েছি, তা রিপোর্টে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ইরফানের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মিসটেক অব ফ্যাক্ট।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর রাতে ধানমন্ডিতে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ‘সংসদ সদস্য’ লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর ও গালিগালাজ করা হয়। পথচারীরা এই দৃশ্য ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। পুলিশ হাজি সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার ও গাড়ি জব্দ করে। পরদিন এ ঘটনায় ইরফানসহ আরো চারজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় দু-তিনজনকে আসামি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান।
২৬ অক্টোবর চকবাজারের দেবীদাস লেনে হাজী সেলিমের বাসায় দিনভর অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেয়া হয়। বাসায় অবৈধভাবে মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুইজনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন। পরে মাদক ও অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে দুটি করে মোট চারটি মামলা দায়ের করে র্যাব। যার দুই মাস পর অস্ত্র ও মাদক মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলো পুলিশ।