1. doorbin24bd@gmail.com : admin2020 :
  2. reduanulhoque11@gmail.com : Reduanul Hoque : Reduanul Hoque
February 6, 2025, 3:30 pm
সংবাদ শিরোনাম :

এক বছরে ২ সরকার, ‘বিলম্ব’ পিছু ছাড়েনি ট্রেনের

  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
  • 24 বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালের পর ২০২৪, ইতিহাস সৃষ্টির এক বছর। এই এক বছরে প্রবল প্রতাপশালী এক সরকারের পতন হয়েছে, এসেছে নতুন সরকার। অথচ কোনো সরকারই ট্রেনের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে পারেনি। একবার ট্রেনের টাইম শিডিউল ঠিক হলে কখনও দুর্ঘটনা, কখনও আগুন, কখনও বগি লাইনচ্যুত হওয়া, আবার কখনও আন্দোলনসহ নানা কারণে বিপর্যয় হচ্ছে শিডিউলের। ফলে বরাবরের মতো ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।

এ ছাড়া নতুন নতুন ট্রেনের উদ্বোধন এবং রেললাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় মানুষকে যেমন আনন্দ দিয়েছে, তেমনি ট্রেনের ভাড়া বেড়ে যাওয়া, আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়া মানুষকে কষ্ট দিয়েছে। অন্যদিকে, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা তো আছেই। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি লোক দেখানো নির্বাচনে জিতে ১১ জানুয়ারি পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি ৪ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান। ৮ আগস্ট অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হিসাব করলে দেখা যায়, বিদায়ী বছরের প্রথম ছয় মাস দেশ চালিয়েছেন শেখ হাসিনা এবং শেষ ছয় মাস মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ন্যস্ত।

 

শেখ হাসিনার ৬ মাসে রেলওয়েতে যা ঘটেছে

বছরের শুরুতে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। নির্বাচনী সহিংসতায় ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস (৭৯৫) ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ট্রেনের মোট চারটি বগি পুড়ে যায়। রাত ৯টা ৫ মিনিটে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে শুরু করে। ১০টা ২০ মিনিটে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওই ঘটনায় চারজন আগুনে পুড়ে নিহত হন এবং পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া তাদের দেহগুলো সে সময় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া দগ্ধ ও ধোঁয়ায় অসুস্থ হওয়া আট যাত্রীকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার পৌনে তিন ঘণ্টা পর শোক জানান তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। পরে রেলপথের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় নির্বাচনের আগে ৬ ও ৭ জানুয়ারি ৩২টি ট্রেন চলাচল স্থগিত রাখা হয়।

১০ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঢাকা রেলপথে বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ চালু করা হয়। এটি হয় কক্সবাজার রুটের দ্বিতীয় ট্রেন। ট্রেন দুটি কক্সবাজারের মানুষসহ পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে, কিন্তু বারবার অ্যাকশন নিয়েও টিকিট কালোবাজারি রোধ করতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে।

১১ জানুয়ারি নতুন সরকারের রেলপথমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম। তিনি রাজবাড়ী-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকটি বড় সহিংসতার পর পাঁচটি আন্তঃনগর ট্রেনে প্রাথমিকভাবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) লাগায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু দায়সারা কাজ আর প্রযুক্তিজ্ঞান কম থাকায় শুরু থেকে সিসি ক্যামেরাগুলো কোনো কাজে আসেনি, হয় অর্থের অপচয়। ওই সময় যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান  বলেছিলেন, ট্রেনের জন্য ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রটোকলে বলা আছে, কোচের মধ্যে কমপক্ষে দুটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও সিসি ক্যামেরা থাকতে হবে। কাজটি এমনভাবে করতে হবে যাতে করে টেকসই হয়। কিন্তু তৎকালীন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান সিসি ক্যামেরাগুলোর দেখভালের দায়িত্ব যাত্রীদের ওপর ছেড়ে দেন এবং ক্যাবল যাতে না ছিঁড়ে তার কোনো স্থায়ী সমাধান তিনি দিতে পারেননি।

জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটলেও বড় দুর্ঘটনা ঘটে ১৭ মার্চ। ওই দিন দুপুর ২টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এতে নয়টি বগি রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে যায়। ঘটনার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে একটি এবং আখাউড়া থেকে একটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে আসে। দুটি দল উদ্ধার কাজ শুরু করে ৭টার পর। প্রায় চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় নয়টি কোচ ও ট্রেনের ইঞ্জিন লাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ১৪ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয় ট্রেন চলাচল।

১৮ মার্চ তৎকালীন রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবির জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকায় বিজয় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগে শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে বর্তমানে একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। দুটি লাইন সচল করে চট্টগ্রামের সঙ্গে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে অন্তত তিন দিন সময় লাগবে।

৩ এপ্রিল থেকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বিশেষ ট্রেনের যাত্রা শুরু হলেও শুরুতেই শিডিউল ধরে রাখতে পারেনি রেলওয়ে। ফলে ট্রেনগুলো বিলম্বে ঢাকা ছাড়ে। তবে, তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম দাবি করেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরে ট্রেনে যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি হয়নি। তারা খুব সহজেই টিকিট পেয়েছেন। এবার মানুষের কোনো অভিযোগ নেই।

তবে, শিডিউল বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করেন তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী। তিনি বলেন, পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ট্রেন সমন্বয় করার জন্য পশ্চিমাঞ্চলের কর্মকর্তাদের আমরা ঢাকায় নিয়ে এসেছি। কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। কিন্তু খুব বেশি বিলম্ব হবে, এটা আশা করছি না। বিলম্বগুলো সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য চেষ্টা করব।

৫ এপ্রিল ঈদযাত্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা থেকে রক্ষা পায় দুটি নন-স্টপ আন্তঃনগর ট্রেন। দুর্ঘটনাটি ঘটলে ঈদের আগে লোকোমোটিভ দুটি থেকে শুরু করে আমদানি করা নতুন কোচের ব্যাপক ক্ষতি হতো এবং হাজারও যাত্রী হতাহত হতেন। কোনো ধরনের সিগন্যাল না থাকা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। তবে, দুই ট্রেনের লোকোমাস্টারের মধ্যে যোগাযোগ হওয়ায় ট্রেন দুটি রক্ষা পায়।

২২ এপ্রিল থেকে দেশের বড় রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে বসানো হয় টিকিট ভেন্ডিং মেশিন। কিন্তু যাত্রীদের অর্থ সাশ্রয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়াতে এতে তারা আগ্রহী হননি। ফলে এ প্রকল্পের পুরো টাকাই জলে গেছে বলে মনে করেন যাত্রীরা। ২৪ এপ্রিল থেকে সব ধরনের রেয়াতি-সুবিধা (ছাড়) বাতিল করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে নির্ধারিত ভাড়ায় ফিরে আসায় আগের দিনের তুলনায় আসনের মূল্য বেশি দেখায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা।

এদিকে, এপ্রিল-মে মাসের গরমে ‘রেললাইন বেঁকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে’ জানিয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে ট্রেনের গতি কমিয়ে ট্রেন চালাতে বলা হয়। এ ছাড়া অসহ্য গরমে এসি/ফ্যান না থাকায় লোকোমাস্টারদের শার্ট খুলেও ট্রেন চালাতে দেখা যায়।

৩ মে গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার সিগন্যালে কাজীবাড়ি ছোট দেওড়া এলাকায় তেলবাহী ওয়াগন ও যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই উদ্ধার অভিযান শেষ করতে ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। সে সময় ওই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

এদিকে, বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও উন্নত করার জন্য ২২ জুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ও ভারত। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ সুযোগ নেয় প্রতিবেশী দেশটি। ভারতের নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়। ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে ‘ভারতই বেশি লাভবান হবে এবং বাংলাদেশের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হতে পারে’ বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।

ওই সময় রেল ট্রানজিট সমঝোতা চুক্তি বাতিলের দাবিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ২৬ জুন রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান আইনি নোটিশ পাঠান।

জুলাই মাসের শুরু থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। তখন বিভিন্ন জায়গায় ২/৪/৫/৮ ঘণ্টা করে ট্রেন থামিয়ে রাখেন আন্দোলনকারীরা। ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে দুপুরের দিকে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়।

আন্দোলনের মধ্যে ১৯ জুলাই ঢাকায় আসার পথে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয় কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস। মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় নতুন কেনা তিনটি কোচ। এতে রেলওয়ের ক্ষতি হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। একই দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হামলা করা হয় সোনার বাংলা, কক্সবাজার, পারাবত এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি ট্রেনে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কয়েকটি কোচ।

কারফিউ জারির পর সারা দেশে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। এতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে রাষ্ট্রীয় এ পরিবহন খাত। ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত বিক্রি হওয়া ট্রেনের টিকিটগুলোর অর্থ ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে রেলওয়ে। রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ জানায়, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলে প্রতিদিন অন্তত চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

এ বিষয়ে তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা ২২ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছি। বিভিন্ন জায়গায় সিগন্যালিং ব্যবস্থার সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ট্রেনে আগুন দেওয়া, ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে দেওয়াসহ বেশকিছু কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

১ আগস্ট থেকে সীমিত আকারে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও, তিন দিন পর আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়। ৫ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৫ আগস্ট পতন ঘটে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের।

 

রেলওয়েতে যা ঘটেছে ড. ইউনূসের ৬ মাসে

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৮ আগস্ট অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেন তিনি। দীর্ঘ ২৭ দিন বন্ধ থাকার পর ১৫ আগস্ট থেকে সারা দেশে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরুর ঘোষণা আসে। আস্তে আস্তে শঙ্কা কাটার পর মানুষও ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। স্বাভাবিক হতে থাকে ট্রেন চলাচল।

একপর্যায়ে সারাদেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলাচলকারী তিনটি আন্তঃদেশীয় ট্রেন চালানো সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে বারবার মেইল করা হলেও কোনো সাড়া দেয়নি প্রতিবেশী দেশটি। অবশেষে ১০ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে ঢাকায় আটকে থাকা আন্তঃদেশীয় ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি প্রায় পাঁচ মাস পর ভারতে ফিরে যায়। ওই দিন সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নীলফামারীর ডোমারের চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে ভারতের হলদিবাড়ী প্রবেশ করে ট্রেনটি।

এর আগে, ২১ আগস্ট ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ফেনীর ফাজিলপুর এলাকায় রেলপথ ও শায়েস্তাগঞ্জ রেলসেতু ডুবে যায়। ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন এ পথে বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। ২৫ অক্টোবর ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে আসার সময় রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে পঞ্চগড়গামী আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (৭৯৩) লাইনচ্যুত হয়।

নতুন সরকার ট্রেনের ই-টিকিটিংয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনে নভেম্বর মাসে। টিকিটপ্রত্যাশীরা ওয়েবসাইটে দেখতে পান, একসঙ্গে কতজন টিকিট সার্চ করছেন, কতজন বুকিং ইন প্রোগ্রেসে আছেন এবং সার্চ করা গন্তব্যের টিকিট না থাকলে কোথায় কোথায় টিকিট আছে, সেই নির্দেশনা।

১২ নভেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. নাহিদ হাসান খান জানান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালাউদ্দিন রিপন এবং তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত ২৪টি ট্রেনের লিজ বাতিল করে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

২ ডিসেম্বরে ক্রু-সংকটে আটকে যায় পদ্মা রেল সংযোগের পুরো রুটের উদ্বোধন। কথা ছিল ওই দিন সকাল ৬টায় খুলনা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে বেলা ১১টায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন পদ্মা রেল-সংযোগ প্রকল্পের পুরো রুটে হুইসেল বাজাবে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর-খুলনা-বেনাপোল সেকশনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের দ্বার খুলবে। কিন্তু পরিকল্পনায় ছেদ পড়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের আট ঘণ্টার বেশি কাজ না করার সিদ্ধান্তে।

১২ ডিসেম্বর রহনপুর সীমান্তের রেলওয়ে ট্রানজিট পয়েন্ট পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশে নেপাল দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন ললিতা সিলওয়াল বলেন, পণ্য পরিবহনের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর ও ভারতের সিঙ্গাবাদ রেলপথকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করতে চায় নেপাল। তবে, এ মুহূর্তে যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর কোনো পরিকল্পনা নেই। সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা-জয়দেবপুর-ঢাকা রুটে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন চালু করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার।

৪৪৬টি রেল দুর্ঘটনায় ৪৫৫ জনের মৃত্যু

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৪৪৬টি রেল দুর্ঘটনায় ৪৫৫ জন মারা যান। আহত হন ৩০৪ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে বুড়ো হয়ে গেছে। ট্রেনের কোচ, ইঞ্জিনগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। অনেক এলাকার রেলপথও তার মেয়াদ পার করেছে। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে রেলকে তার যৌবনে ফেরাতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
© All rights reserved © 2024 doorbin24.Com
Theme Customized By Shakil IT Park