মোঃ আনিসুর রহমানঃ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে বলে যে আশঙ্কা করা হয়েছিল তা বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। গত দুই দিনে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মৃত্যু এবং আক্রান্তের হার দুটোই দ্বিগুণের মত বেড়েছে। গতকালের হিসেব অনুযায়ী- করোনাভাইরাসে (২৪ ঘন্টায়) ৩৯ জন মারা গেছেন। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২১২ জন। এর আগের দিন গত সোমবারের হিসেব মতে- (২৪ ঘণ্টায়) ১৯ জন মারা গেছেন। শনাক্ত হন ২ হাজার ১৩৯ জন। শনাক্ত ১০ সপ্তাহের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাড়াল ৬ হাজার ২৫৪ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৮১৩ জন (৭৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ) এবং নারী এক হাজার ৪৪১ জন (২৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ)। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭৪৯ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৭টি ল্যাবরেটরিতে ১৬ হাজার ৬০২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ১৫ হাজার ৯৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়ালো ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৯৫২টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে এটা জানা গেল।
এদিকে আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী- বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। আর বিশ্বে করোনা সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ ২৪তম অবস্থানে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত এশিয়ায় করোনা সংক্রমণে একেবারে শীর্ষে অবস্থান করছে। সুতরাং পরিস্থিতি মোটেই ভালো না। গত তিন দিন আগেও করোনায় মৃত্যুর হার নিম্নমুখী ছিল। কিন্তু গত দুই দিনে তা উর্ধ্বমুখী। একই সঙ্গে শনাক্তের হারও উর্ধ্বমুখী।
শীতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে একাধিকবার সতর্ক করেছেন সকলকে। কিন্তু তার সতর্কের পরও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হয়নি। মাস্ক ব্যবহারে অনিহা লক্ষ্য করা গেছে। এ অবস্থায় সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- এখন থেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে ঢাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কোভিড করোনাভাইরাস নিয়ে বলা হয়েছে আরেকটু শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। শীতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মাস্ক ব্যবহারে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় মাস্ক ব্যবহারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। ঢাকায় করোনার বিষয়ে কোনো সেফটি মেজার্স দেখা যাচ্ছে না।
রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যার কমপক্ষে দ্বিগুণ। শতকরা ৮০ ভাগ করোনা সংক্রমিত রোগীর কোনো ধরনের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায় না। ফলে অনেকেই ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করাতে আসেন না। নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত না হওয়ায় করোনা সংক্রমিত রোগী রাস্তা-ঘাটে ঘুরে, যানবাহনে চড়ে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। করোনার ভ্যাকসিন কবে পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত। যে কারণে এখন থেকেই মুখে মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে দেশব্যাপী ব্যাপক গণসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো প্রয়োজন বলে তারা মন্তব্য করেন।
আমরা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলতে চাই- শীতে করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে হলে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব সবাইকে মেনে চলতে হবে। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মানতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার যে সিদ্ধান্ত তা অবিলম্বে কার্যকর করা হোক। প্রয়োজনে জরিমানা করে মাস্ক ব্যবহারসহ সকল নিয়ম-কানুন মানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।