দূরবীন অনলাইন ডেস্ক : সরকারের মন্ত্রিসভার নয় জন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ছয় জন। বর্তমানে আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং তথ্যমন্ত্রী। আর মৃত্যুবরণ করেছেন একজন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুঁকি নিয়ে নিজ দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই মূলত তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যারা সুস্থ হয়েছেন, তারা আবারও কাজে ফিরেছেন। দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত আছেন মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও।
আক্রান্ত, তবুও ব্যস্ত হাছান মাহমুদ : মন্ত্রীদের মধ্যে সর্বশেষ আক্রান্ত হয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গত ১৬ অক্টোবর পরীক্ষার ফল পজেটিভ আসে। এরপর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে তার শারীরিক কোনো জটিলতা নেই।
বুধবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ জানান, মন্ত্রী মহোদয়ের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতির দিকে। তিনি নিজে সুস্থবোধ করেছেন বলে ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন। ফেসবুকে নিজের পোস্টে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্য মন্ত্রীর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনাকালীন প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয়ে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন তথ্যমন্ত্রী। পরিবার ও সহকর্মীদের নিষেধ সত্ত্বেও বিভিন্ন কাজে মন্ত্রণালয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন মন্ত্রী। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায়ও মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র স্বাক্ষর অব্যাহত রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি অক্ষুণ্ন রাখতে ড. হাছান গত ক’দিনে অনেকগুলো নথিপত্র পর্যালোচনা ও স্বাক্ষর করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
তথ্যমন্ত্রী এর মধ্যে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের নির্মাণকালের মেয়াদ বৃদ্ধি, চলচ্চিত্রের কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যকারদের সম্মানী, রাশপ্রিন্ট অবলোকন, বিদেশি শিল্পী-কলাকুশলীদের আগমন, তাদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি, তথ্য অধিদফতর ও গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের পদ সৃজন ও মঞ্জুরী, অধিদফতরগুলোর টিও অ্যান্ড ই-তে যানবাহন অন্তর্ভুক্তিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ইতোমধ্যেই স্বাক্ষর করেছেন। প্রতিদিনই প্রয়োজনমাফিক নথিপত্র হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী নেগেটিভ : পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান গত ১৩ অক্টোবর করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করানো হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুর রহমান জানান, স্যার রেগুলার অফিস করেছেন। দাপ্তরিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণেই হয়তো আক্রান্ত হয়েছেন।
শাহেদ বুধবার বলেন, পর পর দু’বার টেস্ট নেগেটিভ এসেছে। বর্তমানে তার কোনো জটিলতা নেই। তবে বয়স ৭৭/৭৮ বছর হওয়ায় তিনি এখনও হাসপাতালে আছেন। দ্রুতই তাকে রিলিজ দেওয়া হতে পারে।
ছুটে বেড়িয়েছেন খালিদ মাহমুদ : গত ১৫ সেপ্টেম্বর নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর করোনা শনাক্তের রিপোর্টে পজিটিভ আসে। তিনি বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন। তার কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকায় দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
তার দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, করোনা শুরুর পর থেকেই প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে ছিলেন। এসব কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীও আক্রান্ত ছিলেন : শুরুর দিকে করোনায় আক্রান্ত হন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। গত ৪ জুন বান্দরবান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হলে ৬ জুন টেস্টে ফলাফলে তার করোনা পজিটিভ জানা যায়। এরপর ৭ জুন তাকে বান্দরবান সেনা জোন থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় সিএমএইচ ভর্তি করা হয়। তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
আক্রান্ত হয়ে সুস্থ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, মারা গেছেন তার স্ত্রী : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানুর করোনা শনাক্ত হয় গত ১২ জুন। মন্ত্রীর একান্ত সচিব হাবিবুর রহমানও করোনা আক্রান্ত হন। পরে ২৯ জুন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মন্ত্রীর স্ত্রী মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
বাণিজ্যমন্ত্রীও আক্রান্ত ছিলেন: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত ১৭ জুন করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় পজিটিভ ফল পান। এরপরই তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা ভাইরাসের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কাজে মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ী এবং স্টেক হোল্ডারদের সাথে টানা বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
পরিবেশ মন্ত্রী সুস্থ: কোভিডের উপসর্গ নিয়ে গত ১১ আগস্ট রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনেরর নমুনা টেস্ট করলে পরদিন ফলাফল পজিটিভ আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করানো হয়। তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীও আক্রান্ত ছিলেন: পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক গত ২ জুলাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। প্রতিমন্ত্রী করোনায় পজিটিভ হয়ে ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
করোনায় মারা গেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী: করোনা ভাইাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুর পর হঠাৎ অসুস্থ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ ১৩ জুন রাতে বাসায় হার্ট অ্যাটাক করেন। রাতেই তাকে রাজধানীর সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর দ্বিতীয়বার তার হার্ট অ্যাটাক করে। এর পরপরই তিনি মারা যান। পরে করোনা পরীক্ষায় তার ফল পজেটিভ আসে।