মহামারির প্রভাবে গেল বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আংকটাডের হিসাব অনুযায়ী আগামী বছরও বিনিয়োগ প্রবাহ নিম্নমুখী থাকবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
আঙ্কটাডের ইনভেস্টমেন্ট ট্রেন্ডস মনিটর শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উন্নত দেশগুলোয় এফডিআই হ্রাসের হার সবচেয়ে বেশি, ৬৯ শতাংশ। ২০২০ সালে এসব দেশে সম্মিলিত এফডিআইয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার যা ২০২০ সালে ৪২ শতাংশ কমে ৮৫৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ১৯৯০-এর পরে এত কম বিনিয়োগ দেখেনি বিশ্ব। ২০০৮-২০০৯ সময়কালে সারা বিশ্বে চলা অর্থনৈতিক সংকটকালেও এত কম বিনিয়োগ হয়নি। এই সময়ের চেয়েও ৩০ শতাংশ কম বিনিয়োগ হয়েছে গত বছর। বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। ধারণা করা হচ্ছে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২১ সালেও সারা বিশ্বে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কম এফডিআই প্রবাহ যাবে।
আঙ্কটাডের বিনিয়োগ বিভাগের পরিচালক জেমস ঝান বলেছেন, ‘বিনিয়োগের ওপর মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে এ বছরও সতর্ক থাকবেন।’ আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ৪৯ শতাংশ এফডিআই কমেছে। আটলান্টিক মহাসাগরের অপর পার ইউরোপেও এফডিআই প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। দুই-তৃতীয়াংশ পরিমাণ বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে সেখানে। এছাড়া যুক্তরাজ্যে এফডিআই শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। অন্যান্য উন্নত বিশ্বের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় এফডিআই কমেছে ৪৬ শতাংশ। তবে ইসরায়েল ও জাপানে এ সময় এফডিআই বেড়েছে।
সব মিলিয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বে ১২ শতাংশ কমেছে বিনিয়োগ প্রবাহ। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিনিয়োগ কমেছে ১৮ শতাংশ, এশিয়ার উন্নয়নশীল বিশ্বে বিনিয়োগ কমেছে ৪ শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোয় গত বছর এফডিআই প্রবাহ বেশি ছিল। বস্তুত, এখন বৈশ্বিক জিডিপির ৭০ শতাংশই যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোয়। উন্নত দেশগুলোয় যেখানে বিনিয়োগ কমেছে ৪৬ শতাংশ, সেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় কমেছে ১২ শতাংশ। বিশ্বের এফডিআইয়ের বড় গন্তব্য হলো চীন। গত বছর চীনে বিনিয়োগ বেড়েছে মাত্র ৪ শতাংশ।