মোশাররফ হোসেন: গেল ১২ বছরের তুলনায় কল্যানকামী দেশ কানাডার জীবন যাপন দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। মুদ্রাস্ফীতির হার এখন ৩.১%। এ হিসাব ব্যাংক অব কানাডা ও পরিসংখ্যান কানাডার। বর্তমান দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি চলছে । খাদ্যের মধ্যে দুগ্ধজাত খাদ্য +৮,৬% সব্জি +৮,৩% মাংস +৯,৬%বেকারি+১১,৫%, বেড়েছে। আবার বাসা ভাড়া ৬,৯% বেড়েছে। মর্টগেজ ব্যাংকরেট ৫,০০% ফিক্সড।তেলের মূল্য ৩৯,৬% বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার ১,৪৫- ৫০ ডলার।
এরকম অবস্থায় ব্রিটিশ কলম্বিয়া ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফলাফল বলছে আগামী বছরের সূচনাতে কানাডার দ্রব্য মূল্য আরও ৫%-৭% ভাগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। বনাঞ্চলে আগুন, বন্যার ফলে কানাডার নিজস্ব উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গম, ভুট্টা, আলু ডাল উৎপাদন কম। আমদানি নির্ভর দেশ হওয়ায় এই সমস্যা বিবেচনা করতেই হবে। তদুপরি উত্তরগোলার্ধের সর্বশেষ দেশ হওয়ার জন্য যাতায়াত খরচ সর্বাধিক। সময়ও বেশি লাগে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশের এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যাতায়াতের সময় লাগে। টরেন্টো থেকে কেলগেরি আকাশ পথে সাড়ে ৪ঘন্টা লাগে। অনুমান করুন। তারপর শীতে বরফের প্রভাব তো আছেই।
বর্তমানে টরেন্টো হচ্ছে কানাডার সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহানগর। মনটিরিয়াল কিংবা এডমন্ট , ভানকুভার বড় নগরী হলেও কর্পোরেট সদর দপ্তর ও শিক্ষা ,স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সবচাইতে বেশী টরেন্টো তথা অনটারিও প্রদেশে। একারণেই এখানকার জীবন যাপন খরচ সবচাইতে বেশি।
বর্তমানে এক বেডরুমের একটি বাসা ভাড়া ২২০০ডলার।যা ১০বছর আগে ছিল ৮০০- ৯০০ ডলার। বাড়ির পাতালে একটি ছোট কক্ষ ভাড়া এখন ৬০০- ৭০০ডলার, আগে ছিল ৩০০- ৪০০ডলার। একটি দুই বেডরুম ,একটি বাথরুম কনডো ছিল ২লক্ষ ডলার, যা এখন ৬- ৭লক্ষ ডলার। বাংলো বাড়ি ছিল ৪- ৫ লক্ষ ডলার, এখন ১২- ১৩ লক্ষ ডলার। সবকিছুই এখন আকাশচুম্বি।
এরকম অবস্থাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ভর্তি হয়ে পড়তে আসা ছাত্র ছাত্রীরা এখন মহাবিপাকে। একবছরের বৃত্তি নিয়ে আসা সবাই কাজ করতে পারে সপ্তাহে ২০ঘন্টা। তবে তাও আসন্ন এপ্রিল মাসের পর এটা বাড়ানোর কথা বলা হলেও তা সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী মেথু মিলার একথা জানিয়ে বলেন, বরং অর্থনৈতিক সংকট, আবাসন ও খাওয়ার খরচের নিশ্চয়তা না দিয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে কোন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তি করাতে পারবেনা। এমনকি ১০হাজার ডলারের পরিবর্তে ২০হাজার ৬৩৫ ডলারের ডকুমেন্টস বিমানবন্দরে দেখানোর নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটা মূলতঃ প্রতারণা রোধের কৌশল। উল্লেখযোগ্য আগামী দুই বছরে ৮লক্ষ ৭হাজার ছাত্র কানাডার ভিসা পাবেন।
বর্তমান বাজার চিত্র
১) চাল: ৮ পাউন্ড বাসমতি : ১০- ১৪ ডলার ,
২) মুরগি: প্রতি পাউন্ড ২.৮৯- ৩.২৯ডলার,
৪) গরু: প্রতি পাউন্ড ৪.৪৯ডলার,
৫) খাসি : প্রতি পাউন্ড ৫.৯৯ডলার
শুকরেরে মাংস এক ডলারের নীচে।
৬)ডিম: ৩০টির বক্স ১০-১২ডলার
৭) মাছ ইলিশ ৮০০গেরাম, পাউন্ড ২০ডলার,
৮) রুই মাছ, পাউন্ড ২,৮৯ডলার,
৯) মৃগেল , পাউন্ড, ৪.৪৯ডলার,
১০) কাতলা, পাউন্ড, ২.৪৯ ডলার
১১) মসুর ডাল ৮পাউনড পেকেট ১২ডলার,
১৩) ভেজিটেবল তেল ৩লিটার ১০- ১২ডলার, কেনোলা তেল একই।
১৪) দুধ২% ৪ লিটার ৭ডলার, ৩% ৮ডলার।
১৫) সাগর কলা : ৯৯সেন্ট পাউন্ড
মসলা ,মরিচ, হলুদ, ধনেগুড়া, জিরা গুড়া , এলাচি ,দার্শনিক, লংসহ সব মসলার দাম আকাশ ছোঁয়া। আপেল, কমলা আংগুরসহ সব উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের। তারপর ও দাম সহনীয় নয়।
একারণেই এখন কানাডার জীবন কঠিন।
কোভিডকালীন সময়ে নাগরিকদের ভর্তুকি দিলেও কানাডার সরকার এবার নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা করবে বলে জানান হয়েছে। আগামী বাজেটে তা কার্যকর করার কথা। কর্পোরেট গ্রুপ ও সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তা কতটুকু কার্যকর করবে সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে ডিজিটাল যুগে বিদ্যুত চালিত গাড়ি শুরু হলেও জিএমসি, ফোরড , পরচি, টেরেসলার,মারসিডিস, টয়োটা, হোনডা, মাজদা, সেনেতরা ,ফক্স ওয়াজেন,সহ আধুনিক গাড়ির রকমারি নকশা ও দৌড়ের ক্ষমতা তুখোড়। একপেরেস, হাইওয়েতে ১৮,১৬,১২ ,৮লেনের মহাসড়ক জুড়ে গতির সংগে ছুটে যায় টেকসি,জিপ,মাইক্রোবাস,বাস,মালবাহি ট্রাক, লরির বহর। ছন্দে ছন্দে ,দুটি আনন্দে,, ।কিন্ত এসবই এখন উচ্চ মূল্য। ব্যবহার করা গাড়ি থেকে নতুন সব গাড়ির দাম বাড়ানো হয়েছে। ইনসুরেন্স থাকলেও পার্কিং খরচ বেড়ে যাওয়া ও জায়গার অভাবে একই পরিবারের গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে। সর্বোপরি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলাফল নিম্নচাপ। পাবলিক যানবাহন, ট্রেন, বিমানে চলাচল বেড়েছে। বাসের মত মাসিক টিকিটে একই দেশের ভেতর বিমানে চলাচল করেন বড় বড় কোম্পানির কর্তা, শিক্ষক, আইনজীবি,গবেষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, কনসটেরাকসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের লোকজন। অবশ্য জীবন যাপন খরচ বৃদ্ধি এ শ্রেণীর মানুষের কোন প্রভাব বিস্তার করেনা। এজন্য আসন্ন কঠিন জীবন মনে রেখেই কানাডা আসুন। নতুবা বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে ছাত্র ও বাস্তহারাদের ভীড়
নতুন সমস্যা এখন কানাডাতে। বাস্তহারাদের নিয়ে টরনটোর মেয়র অলিভিয়া চাও বিপাকে আছেন। অনটারিও সরকারের আবাসন সংকট সমাধান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সুদূর পরাহত।
আবাসন সংকট ও দোরববো মূল্যের উর্ধগতির জন্য টরনটোর বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে ছাত্র ও বাস্তহারাদের ভীড় বেড়েই চলছে। কাজ না পাওয়ার জন্য এই অবস্থা তৈরি হচ্ছে বলে পরিসংখ্যান কানাডা তাদের বিবরণীতে উল্লেখ করেছে।