মোশাররফ হোসেন: আকাশ বাণী, কোলকাতা দূরদর্শন বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত দুটি মিডিয়ার নাম। আকাশে ভৃ উপগ্রহ পাঠানোর আগে বাংলাদেশের মানুষ বিবিসি রেডিও ও টেলিভিশন, ফক্স টিভি, গার্ডিয়ান পত্রিকা, সিএনএন, নিউইয়র্ক পোস্ট, ভারতের বিভিন্ন টিভি ও পত্রিকা থেকে তথ্য জেনে নিত।
ইমেইল ও ফ্যাক্সে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে উচ্চতর ডিগ্রি নেবার জন্য আবেদন করতো। সে যুগ অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে এখন সরাসরি ইমেইল ঠিকানায় আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপের অধিকাংশ দেশে উচ্চতর পড়াশোনা করার জন্য বৃত্তি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। নিজের কিংবা বাবা ও মায়ের জমা করা টাকা ও জমি জমা বিক্রয় করে বিমানে উঠছেন। উদ্দেশ্য একটাই সোনার হরিণের খোঁজে উড়াল দেয়া।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ওয়েবসাইট থেকে সকল তথ্য জেনে, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি বিষয়। বৃত্তি ৪ বছরের না কি এক বছরের। দেখে নিতে হবে। এরপর রয়েছে আবাসন, খাওয়া, যাতায়াত, কাপড়সহ অনেক খরচ। নতুবা বাৎসরিক পড়া, আবাসন, খাওয়া, যাতায়াত, ঔষধ, কাপড় মিলে কানাডায় এখন কম করে খরচ হবে ৪৩ হাজার ডলার। এটা ৪বছরে দাঁড়াবে ১লক্ষ ৭২হাজার কানাডিয়ান ডলার। বেশি ও লাগতে পারে। একবছর বৃত্তি নিয়ে কানাডা আসার পর ছাত্র ছাত্রীদের সুবিধায় চাকুরি করার সুবিধা আগে ছিল সপ্তাহে ২০ ঘন্টা, এখন ৪০ ঘন্টা। কিন্তু মাসে ২২০০ ডলার আয় করলেও আবাসন মাসে ৮০০-১০০০ ডলার ও খাওয়া সহ অনান্য মিলে ৮০০ ডলার খরচ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে টিউশন ফির টাকা বাংলাদেশ থেকে নিতে হবে। এটা অবশ্যই ভাবনার বিষয়।
তদুপরি আই ই এল টি এস করা ও বিমান ভাড়া তো আছে। রয়েছে গরমের দেশ থেকে তীব্র শীতের দেশে বসবাস। এটা কম করে ৬মাস। এতো গেলো ছাত্র ছাত্রীদের কথা।
এবার বলবো আই ই এল টি এস করে কানডা আসা সবচেয়ে ভাল। এতে ৩ মাসে পেয়ে যাবেন পার্মানেন্ট রেসিডেনসি কার্ড। চার বছরে নাগরিকত্ব। যদি টানা বসবাস না করেন তাহলে সবকিছু বিলম্বিত হবে।
আর যারা টুরিস্ট ভিসায় এসে বসবাস করবেন তাদের আশ্রয় চাইতে হবে। এটার জন্য আলাদা পদ্ধতি আছে। এগুলো সবই কানাডার ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট থেকে ভাল মতো জেনে নিতে হবে। ইমিগ্রেশন আইনজীবীরা যা বলবেন তাও নিজে ওয়েবসাইট দেখে নেয়া জরুরি। নতুবা অসুবিধায় পড়তে হবে। প্রতারিত হতে পারেন ।
চলতি বছরে শুরু হয়েছে কানাডা সরকারের বিদেশি ইমিগ্রান্ট প্রক্রিয়া। আগামী ২০২৪ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে বিভিন্নভাবে ৫ লক্ষ ইমিগ্রেন্ট আনবে কানডা। পড়াশোনা এখন মুখ্য নয়, কানাডা এসে বসবাস ও প্রতিষ্ঠিত হওয়া সবার লক্ষ্য। শূন্য থেকে সবকিছু শুরু করতে হয়। এটা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিদেশে ভিন্ন সমাজের সংগে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। কেননা পড়াশোনাও আজকাল বাণিজ্য। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট সব তথ্য দেয় না। এখানে আবেগ নয় বাস্তবতা বড়। চাকুরির বাজার সংকুচিত হয়ে গেছে । স্বাস্থসেবা ভাল। বিনা খরচে হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা বিলম্বিত হচ্ছে। তিন মাস পর একবার তাদের পাওয়া যাবে। সব মিলে সোনার হরিণের খোঁজে এলেও কানাডা সে নিশ্চয়তা দেবে না। কাজ করতে হবে সবসময়। জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে হবে। নতুবা বিদেশ ভূত মাথা থেকে নামিয়ে রাখা ভাল।
ইমিগ্রেশন, কানাডা অথবা immigration.ca ভালভাবে পড়ুন। টুরিস্ট ভিসায় কানাডা আসার পর ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয় উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর নাগরিকদের। তারা আমেরিকা ও কানাডার নির্মাণ শিল্প ও কৃষি কাজ করে। কিন্তু এশীয়দের সে সুযোগ নেই। উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর সংগে এরকম চুক্তি আছে। তিন মাস, ছয় মাস, একবছর ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয় ।নবায়নও করা হয়। তাই দালালদের খপ্পরে না পড়ে বৈধভাবে কানাডা আসা উত্তম। ইউরোপ ও আমেরিকার সোনার হরিণের খোঁজে আবেগের কোন সুযোগ নেই ।
কানাডা আসার পর করনীয়ঃ
কানাডা আসার পর যারা দক্ষ কোটায় তারা সোসাল ইন্সিওরেন্স কার্ড ও স্বাস্থ বিষয়ক কার্ড, অবতরণ কাগজসহ সরাসরি আবেদন করে কাজ খুঁজে নিতে পারেন। তিন মাস পর পার্মানেন্ট রেসিডেনসি কার্ড পেয়ে গেলে নতুন আগমন কোটায় ভাষা কোর্স সমাপ্ত করা দরকার হবে। যাদের ভাষাগত সমস্যা নেই তারা চাকুরিতে প্রবেশ করতে পারবেন। সমস্যা হল পূর্বের পেশা সংশ্লিষ্ট কাজ শুরু নিয়ে। নতুবা ভিন্ন কাজ শুরু করে নিজ পেশাগত কাজে ফিরে আসতে হবে । এছাড়া চাকুরির বাজার সংশ্লিষ্ট তিন মাস থেকে একবছর এর পরে চাকুরি করা। আবার ব্যবসা করলে লাইসেন্স কোর্স করে টা শুরু করা। এক্ষেত্রে রিয়েল স্টেট, মর্টগেজ, ইমিগ্রেশন, আইনজীবী, ইনকাম ট্যাক্স, মিডিয়া, রেস্টুরেন্ট, সোলএজেন্ট, বিপনন, নির্মাণ শিল্প, স্বাস্থ ক্লিনিক, এনজিও, পরিবহন, , বিদ্যুত, কাঠ, সেলাই বিষয়ক দক্ষ কারিগর, রকমারি দোকান, গ্রোসারিসহ রকমারি কাজ করছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। রয়েছে সংগীত, নৃত্যসহ মিউজিকের স্কুল । বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, আইনজীবী হিসেবে আদালতে কাজ, ডাক্তার ও প্রকৌশলী বসে থাকে না। তবে বাংলাদেশসহ সব দেশের ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিক্ষকদের কানাডার নির্ধারিত কোর্স সমাপ্ত করতে হবে।
বেশ কঠিন মূল ধারার কাজ। তবে সবই সম্ভব।দরকার ধৈর্য্য ও সাহস। এরপর পরিবারের সদস্যদের পড়াশোনা ও সহধর্মিণীর কাজ সবাই মিলে এগিয়ে যেতে হবে অনেক দূরে। সন্তানদের পড়াশোনা খরচ নেই দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত।বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবে বৃত্তি। পরিবহন ও স্বাস্থ খরচ নেই। এসব সরকারি খরচে চলে। আইন শৃঙ্খলা আমেরিকার চেয়ে ভাল।
রয়েছে খেলার মাঠ। সব এলাকায় পার্ক সংলগ্ন। এসব দেখে সিটি কর্পোরেশন। ইনডোর, জিমন্যাসিযাম তো অবশ্যই থাকবে। পার্টি ও বনভোজনে মেতে ওঠা এবং নাচ, গান ও থিয়েটার, ফিল্ম উৎসবে আনন্দে মেতে থাকে বহুজাতিক সংস্কৃতির দেশ কানাডা। তবে এলাকাভিত্তিক পাঠাগার গড়ে তোলে সব শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য। এককথায় জীবন যাপন চলে সবাই মিলে। মানুষ মানুষের জন্য কাজ করে এগিয়ে চলে কানাডা। সবাই আইন মেনে কাজ করে। সবার অধিকার নিশ্চিত করা আছে। তাই বলে আইন ভঙ্গ হয় না? খুব কম। কল্যাণকামী রাষ্ট্র কানাডা। শীতের তীব্রতা ও তুষার অতিক্রম করে সাদা জমিনে লাল মাপেল লীফ অংকিত পতাকা উড়িয়ে সামনে এগিয়ে চলেছে কানাডা। বিশ্বে আর এমন কোন দেশ নেই। তবে কোভিড ১৯ ও যুদ্ধের জন্য জীবন যাপন খরচ আকাশ ছুঁয়েছে। উত্তরণের উপায় বের করে নাগরিক সেবা করে চলেছে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার ।