নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আত্মসমর্পণ করা চারজন জঙ্গির মধ্যে দুইজনের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায়। এদের একজনের নাম নাঈমুল ইসলাম, অন্যজন কিরণ হোসেন শামীম ওরফে হামিম। তারা দুইজনই বন্ধু এবং বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। এলাকায় তারা ধার্মিক ও বিনয়ী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু স্থানীয় মসজিদের এক ইমামের খপ্পরে পড়ে পাল্টে যায় তাদের জীবন। মগজ ধোলাই করে তাদের পরিচালিত করা হয় জঙ্গিবাদে।
নাঈমুল সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নের দাড়ামুদা গ্রামের আবু তালেবের ছেলে এবং কিরণ ওরফে হামিম একই এলাকার মোখলেছুর রহমানের ছেলে। হত দরিদ্র পরিবারের এই দুই বন্ধু স্থানীয় খোয়াজউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেন। বর্তমানে তারা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। নাঈমুরের বাবা ঘোড়ার গাড়ি চালান। অন্যদিকে কিরণের বাবা দর্জির কাজ করেন এবং ছোট একটি চায়ের দোকান চালান।
যেভাবে জঙ্গি বানানো হয় নাঈমুল ও কিরণকে
২০১৭ সাল। নাটোরের বাগতিপাড়া থেকে আসা স্থানীয় মসজিদের ইমাম জুয়েল রানা এই দুই তরুণকে টার্গেট করেন। পরে ওই ইমামের মাধ্যমেই তাদের হাতেখড়ি। তারা অল্প সময়ে ওই ইমামের ভক্ত হয়ে উঠেন। পরে নামাজের মাশ্লাহ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে ওই ইমামকে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দেন এলাকাবাসী। চাকরি চলে যাওয়ার পরের বার বার ইমাম জুয়েল রানা ধাড়ামুদা গ্রামের অবসর প্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতাউর রহমানের বাড়িতে আসতেন বলে দাবি করেন এলাকাবাসী। তবে গত দুই থেকে তিন মাস ওই ইমামকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা তিনিই ওই দুই তরুণকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন।
কিরণের বাবা মোখলেছুর রহমান জানান, আমার ছেলে ও নাঈমুর ইমামের সঙ্গে চলা ফেরা করতো। গত দুই তিন মাস আগে নারায়ণগঞ্জ চাকরির কথা বলে বাড়ি থেকে দুইজন এক সঙ্গে বের হয়। তারা একটি জুট মিলে চাকরি করে বলে বাড়িতে জানিয়েছিল। গত ১২ নভেম্বর বাড়িতে এসে ১৪ নভেম্বর আবার চলে যায়। গত শুক্রবার বিভিন্ন লোকের মুখে শুনতে পাই আমার ছেলে জঙ্গি। তাকে আটক করেছে।
নাঈমুলের চাচা ধাড়ামুদা গ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি জানান, আমার ভাতিজা গ্রামের সহজ সরল ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। তার এমন কাজে আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছি।
সাঁথিয়ার খোয়াজউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সিরাজউদ্দৌলা জানান, নাঈমুল ও কিরণ দুজনই তার প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। তারা এলাকায় এলে বিভিন্ন ছেলে তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতো। এলাকার অন্য ছেলেদের বিষয়ে এখন আমারা চিন্তিত হয়ে পড়েছি।
এ ব্যাপারে নন্দনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিটন জানান, তারা দুজনই আওয়ামী পরিবারের সদস্য। বছর দু’এক আগে রাজশাহী থেকে এক হুজুর এসেছিল। তারা দুজনই তার মুরিদ হন এবং তাদের ব্রেন ওয়াশ করে তাদের ভিন্ন পথে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ওই দুজন সম্পর্কে আমরা খোঁজ নিয়েছি। তাদের নামে থানায় কোনো মামলা নেই।