আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রেনেড হামলা নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু খালেদা জিয়া তা করতে দেননি। দেশে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল আর সংসেদে সেটা নিয়ে কোনো আলোচনায় হলো না!
গ্রেনেড হামলার ঘটনার ১৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাগ্যক্রমে আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছি, কিন্তু আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। অগণিত লোক আহত হন এবং আহত অবস্থায় পরবর্তীতে অনেকে মারা যান। এখানে যারা উপস্থিত আছেন তাদের অনেকের শরীরে এখনও স্প্লিন্টার রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুসহ আমাদের পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর কেন্দ্রীয় কারাগারের জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে ছয়টা বছর দেশে আসতে পারিনি। আমরা বিদেশের মাটিতে বসেই তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি, কবর জিয়ারত করেছি। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমরা মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে কাজ করে চলেছি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পরই দেশের মানুষ প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছিল। সরকার জনগণের জন্য কাজ করে সেটা নিশ্চিত হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে গভীর চক্রান্ত করে আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। আমরা যে ভোট পায়নি তা নয়, কিন্তু সেটা ছিল বিরাট ষড়যন্ত্র। তারপর ২০০৪ সালে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার হত্যাকাণ্ড। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমি বলতে চাই, জাতির পিতার হত্যাকারী তাদেরকে ইনডেমনিটি দেয়া হয়। এই চক্রান্তের সঙ্গে খন্দকার মোশতাক যেমন জড়িত তেমনি জিয়াউর রহমানও জড়িত ছিলেন । এই কারণে খন্দকার মোশতাক যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন তখন জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান করেন।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা যারা একটি পরিবারকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করেছে, তাদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদেরকে পুরস্কৃত করেন জিয়াউর রহমান। জিয়া যে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল সেটাতো কর্নেল ফারুক, রশিদ বিবিসির কাছে সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেছেন। খুনিদের সাথে জিয়ার যোগাযোগ ছিল, তাদের সম্পর্ক ছিল এটাতো দিবালোকের মতো স্পষ্ট। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটান। এই ঘটনায় তারেক রহমান যে জড়িত এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের বিভিন্ন কথায় বিষয়টি বের হয়ে এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বিএনপি। কিন্তু সেটা এফবিআইয়ের তদন্তে এটা বের হয়। তদন্তে বিএনপি নেতা দোষী সাব্যস্ত হয় এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়। সেখানে যে রায় দেয় তাতে সেটা নিয়ে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান এবং শফিক রেহমান তাদের নামও বেরিয়ে আসে। তারাই জয়কে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। এটা আমরা খুঁজে পেতাম না যদি এফবিআই তদন্ত না করতো, বা এ মামলার রায়ে না দিত। এভাবে তারা একটা খুনের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল।
তিনি বলেন, হানিফ ভাইয়ের কথা মনে পড়ে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় হানিফ ভাইসহ সবাই আমাকে যেভাবে মানববর্ম তৈরি করে বাঁচিয়েছিলেন, আমি জানিনা এমন অবস্থায় কেউ বাঁচতে পারে কিনা। আল্লাহ নিজে আমাকে বাঁচিয়েছেন। পরপর দুটি গ্রেনেড ছোড়া হয়। এর মধ্যে দু-তিনটা গ্রেনেড অক্ষত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকার যদি এই ঘটনার সাথে জড়িত নাই থাকতো তাহলে তারা আলামত নষ্ট করলো কেন? ওই গ্রেনেড হামলার পরেই তারা সিটি করোপরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার নির্দেশে এসে পুরো এলাকা ধুয়ে দেয়। একটা অবিস্ফোরিত গ্রেনেড যেটা ওখানে পাওয়া গিয়েছিল সেই গ্রেনেডটা একজন সেনা অফিসার আলামত হিসেবে রাখতে চেয়েছিলেন বলে খালেদা জিয়া তাকে চাকরিচ্যুত করেন। কোনো আলামত তারা রাখতে চাননি। তারপর আপনারা জানেন, তারা বোমা হামলা নিয়ে একটা নাটক বানায়। পার্লামেন্টের অনেক সদস্য গ্রেনেড হামলায় আহত হন।
তিনি বারও বলেন, খালেদা জিয়া সংসদে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, ‘উনাকে আবার কে মারতে যাবে!’। আমাদের বলতে হয়, আপনিতো মারতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। এই রকম তাচ্ছিল্যের কথা বলে সংসদে আমাদেরকে কোনো রকম কথা বলতে দেয়া হয়নি। গ্রেনেড হামলায় আমাদের সংসদ সদস্যরা আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন, আমাদের সেই অধিকারটুকু ছিল না যে আমরা এই বিষয় নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা করব। এতে প্রমাণিত হয়, বিএনপি সরাসরি এর সঙ্গে জড়িত ছিল।