মোশাররফ হোসেন : সৃষ্টির আদি যুগ থেকে আজ অবধি পৃথিবীতে মানুষকে জীবনের সঠিক পথ দেখিয়েছেন বিভিন্ন গোত্রনেতা , ধর্মীয় নেতা, ঋষি, মনীষি,দার্শনিক , বিজ্ঞানী এবং বিবর্তনের ধারায় জাতীয় নেতৃবৃন্দ । ইতিহাসের পরিক্রমায় মানুষ নিজেকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে প্রমাণ করেছে ।গড়ে তুলেছে যুগোপযুগি দেশ ।চাহিদা পূরণে যাযাবর যুগে খাদ্য আহরণে মানুষ দেশ থেকে দেশে ঘুরেছে । বুদ্ধি দিয়ে আবিস্কার করেছে আগুন । বন্য প্রাণি শিকার করে খাওয়া , শস্য ও ফলমুল চিনতে শেখে । এরপর যুথবদ্ধ বসবাস শুরু করে । বুদ্ধিমান পুরুষ হতো গোত্রনেতা ।
এখান থেকেই দলনেতা চিন্তা করে সকলের জীবনযাপনের উপযোগি চলার সঠিক পথ দেখাতেন । খাওয়া , পরা, আচরণ, নিয়ম কানুন প্রচলন হয়েছিল । সমাজ গড়ে তোলার পর নেতা নিজে সামনে থেকে আদর্শ কাজ করতেন । অন্যরা তাকে অনুসরণ করতে শুরু করেন ।
পরবর্তীতে হস্তলিপি , শিললিপি যুগ পেরিয়ে কাগজের আবিস্কারের পর মানুষ পড়তে ও লিখতে শুরু করেছিল ।যোগাযোগ শুরু হয় এক এলাকা থেকে অন্যত্র । গড়ে ওঠে পল্লীসমাজ । শহুরে জীবন । ভাববিনিময় ও পণ্য আদান প্রদান করে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয় । ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সভ্যতা । মূলত: নদী ও সাগরতীরে এসব সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটে । মুদ্রা আবিস্কারের পর পালতোলা নৌকারবহরে শুরু হয় বাণিজ্য ।এশিয়া ও আফ্রিকার পর ইউরোপ আমেরিকা ,অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশ মিলে আজকের বিশ্ব ।
এখন বিজ্ঞানের যুগে মানুষের জীবনযাপন ,আচারআচরণ ,সংস্কৃতি আধুনিক রূপলাভ করেছে । দেশে দেশে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ।মুূহূর্তে পৃথিবীর একদেশ থেকে অন্য দেশে যোগাযোগ করা যায় । গমন করা যায় । পারস্পরিক চাহিদা পূরণ করছে মানব সমাজ ।
এখন গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের যুগে সমাজতান্ত্রিক চিন্তার দেশ থাকলেও হালে দেশে দেশে ধর্মীয় ও বর্ণবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে । তারপরও প্রতিটি দেশের নেতৃবৃন্দ নিজেরা আদর্শ কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছেন তাদের দেশকে । সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সামাজিক বিধিবিধান ও আইন মেনে মানুষ জীবন যাপন করছে ।এর বাত্যয় হলে যে কোন ঐতিহাসিক নেতা ছিটকে পড়ছেন ।মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করছেন । এতে জাতীয় অবদান গুরুত্ব পাচ্ছে । ডিজিটাল যুগে পিছনে নয় সামনে এগিয়ে যেতে হবে ।
আরও পড়ুন:
মানুষের দুই হাত , পা, চোখ নাক মুখ সবই সামনে চলে । পিছনে নয় ।রকেটের যুগে ঘোড়ায় চড়ে নেতৃত্ব দেয়া যায়না । মানুষকে পবিত্র ও সঠিক পথে চলার কথা বলে নিজে অপবিত্র কাজ করলে নেতা হওয়া যায়না ।মানুষ তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে।এটা পতন ডেকে আনে ।
যুগে যুগে বাংলাদেশে পীর আউলিয়া ,সুফীসাধক , সাধু সন্নাসীসহ ধর্মযাজক যারা এসেছেন সকলেই অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন । খেতেন সীমিত । পদব্রজে নৌকায় করে চলাফেরা করতেন ।সাধারণে তারা ছিলেন অসাধারণ । তাই মানুষ তাদের সম্মান করতেন্ । আজও করেন ।
আর এখন বাংলাদেশের অনেক ধর্মীয় নেতার জন্য বিপুল খাবার পরিবেশেন করেন তাদের অনুসারিরা । অনেকে বিলাসবহুল কোটি টাকার গাড়ীতে চড়েন ।হেলিকপ্টারে চড়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ধর্মীয় সমাবেশে বক্তৃতা করেন ।এত টাকা আসে কোথা থেকে । আর মানুষ তাতে যোগ দেয় পায়ে হেটে ,রিকশা বাস , ট্রেনে চড়ে ।এটা আদর্শ নেতৃত্ব নয়।
রাজনৈতিক দল না হয়েও রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের নির্দেশ দেয়া আইনসম্মত নয় ।রাষ্ট্রীয় ও বক্তিগত সম্পদ ভাংচুর ও আগুন দেয়া কোন ধর্মীয় কাজ ? অনুসারিদের নির্দেশ দিয়ে নিজে দামী রিসোর্টে অবকাশে যাওয়া যায় ? এটা ভাববার সময় হয়েছে ।দোষীদের আইনস্মত শাস্তি প্রদান জরুরি ।
বাংলাদেশের সাধারণ স্কুলে যেখানে রাজনৈতিক দলের অনুসারি সংগঠন গড়ে তোলা যায়না । একইভাবে এতিমখানা ও মাদ্রসায় সে সুযোগ নেই । এসব এখন পর্য্যবেক্ষণ করা দরকার ।পাশাপাশি চিহ্নিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতাদের গতিবিধি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে মনিটরিং করা জরুরি হয়ে পড়েছে ।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে । মধ্যম আয়ের দেশ । পিছনে নয় সামনে এগিয়ে যাবার সময় । কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি নয় দেশের স্বার্থ বড় । এটা সরকার ও দেশবাসির মনে রাখা দরকার ।
কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি যদি পথ হারায় সেজন্য সে একাকি গাইবে , “পথহারা পাখি ..কেঁদে ফিরে একা ..। কিন্তু জনগন তাদের কর্মদক্ষতা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবেন । ১৯৭১ সালে দেশের মানুষ সেটা প্রমাণ করেছে । মনে রাখতে হবে ‘এ লড়াই বাঁচার লড়াই .. এ লড়াই মরণজয়ী করতে হবে রে ..।