ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের পরিবার মনে করে, তিনি নিখোঁজ নন, গুম হয়েছেন। তাঁকে অজ্ঞাতনামা কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে। এ আশঙ্কার কথা জানিয়ে চকবাজার থানায় গতকাল সোমবার অপহরণ মামলা করতে গিয়েছিল পরিবার। কিন্তু থানা সে মামলা নেয়নি।
শফিকুল গত মঙ্গলবার বকশীবাজারের বাসা থেকে হাতিরপুলে নিজ কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। তাঁর ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোনই বন্ধ রয়েছে। তবে তিনি নিখোঁজ হয়ে গেলেও ফেসবুকে দেওয়া তাঁর কিছু পোস্ট কে বা কারা মুছে দিয়েছে। ওই পোস্টগুলো যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার গ্রেপ্তারকেন্দ্রিক ছিল। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই সব পোস্ট দেওয়ায় তিনিসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে সাংসদ সাইফুজ্জামান শিখর শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিলেন।
গুম হয়ে যাওয়া সাংবাদিক শফিকুলের ছেলে মনোরম পলক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাঁকে বলেছেন, পুলিশ ঘটনাস্থলের ফুটেজের জন্য অপেক্ষা করছে। এখনো তাঁরা ফুটেজ হাতে পাননি। তিনি আরও বলেন, তাঁর বাবার কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল বলে তিনি শোনেননি। টাকাপয়সার লেনদেনও ছিল না। কাজেই তিনি স্বেচ্ছায় লুকিয়ে আছেন বা তিনি হারিয়ে গেছেন বলে চালিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি মনে করেন, তাঁর বাবাকে কেউ ধরে নিয়ে গেছে। থানা মামলা না নিলে তাঁরা আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
চলতি বছর প্রথম গুমের শিকার হলেন ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম। তিনি দৈনিক পক্ষকাল পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করছিলেন।
মনোরম জানান, হাতিরপুলে তাঁর বাবার অফিসের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ পর্যন্ত তাঁকে দেখা গেছে। তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে তাঁর বাবার ব্যবহৃত গ্রামীণফোনের কললিস্ট সংগ্রহ করেছেন।
ওই কললিস্ট অনুযায়ী, শফিকুলের সর্বশেষ কথা হয়েছিল যুব মহিলা লীগের দুই নেত্রীর সঙ্গে। তাঁদের একজন নীলুফা হোসেন নীলু জানান, শফিকুল যেদিন নিখোঁজ হন, সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি কোথায় আছেন ও কখন ফিরবেন, তা নিয়ে কথা হয় তাঁদের। যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে কথা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে।
কললিস্টে অপু উকিলের নাম থাকলেও তিনি বলেন, শফিকুলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। তবে তিনি (শফিকুল) তাঁকে একটি খুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। ধারাবাহিকভাবে যুব মহিলা লীগের নেতা–কর্মীদের নিয়ে শফিকুল পোস্ট দিচ্ছিলেন। সে কারণে শফিকুলকে দেখা করতে বলেছিলেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শফিকুলের সঙ্গে যুব মহিলা লীগের অনেক নেতা–কর্মীর সুসম্পর্ক ছিল। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁদের ছবি তুলে দিতেন। যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া গ্রেপ্তারের পর তিনি পাপিয়াসহ যুব মহিলা লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন।
শফিকুলের ছেলে মনোরম পলক বলেছেন, তিনি শুধু জানতে চান তাঁর বাবা জীবিত ও সুস্থ আছেন কি না। কোনো অপরাধ করলে তাঁর বাবাকে যেন গ্রেপ্তার দেখানো হয়।