প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ আজ বলেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বইগুলি অনুসরণ করে ‘কলকাতায় বঙ্গবন্ধু’ নামে তার প্রামাণ্যচিত্রের স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন, কলকাতার দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে অনেক লেখালেখি ও গবেষণা হয়েছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তার আত্মজীবনী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাঁর বাবার স্মৃতি নিয়ে লেখা বইগুলো থেকে পাওয়া তথ্যগুলো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।
ভারতীয় জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা এখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ‘কলকাতায় বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের একটি ৩০ মিনিটের তথ্যচিত্রের চলমান কাজের বিষয়ে অবহিত করেন।
ঘোষ বর্তমানে ঢাকা ও টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন লোকেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর প্রামাণ্যচিত্রের শুটিং করতে এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ সফর করছেন।
তিনি বলেন, প্রামাণ্যচিত্রটির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে সম্মতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন,”তিনি সম্মতি দিয়েছেন বলে আমি খুবই খুশি। আমি বিশ্বাস করি, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর কলকাতার জীবন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাব।”
গৌতম ঘোষ গত ৪ এপ্রিল কলকাতায় মাওলানা আজাদ কলেজের একটি শ্রেণীকক্ষে শুটিংয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির কাজ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষে সেখানে অধ্যয়ন করতেন তখন এটির নাম ছিল ইসলামিয়া কলেজ।
ঘোষ বলেন, “কলকাতায় ছবির শুটিং করার সময় আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। যখন আমি ক্যামেরা চালাচ্ছিলাম আমার মনে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধু কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।”
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের কলকাতার অংশ নিয়ে অনেক লেখা পাওয়া গেলেও অডিও ভিজ্যুয়াল আকারে তা খুব একটা তুলে ধরা হয়নি।
জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, বঙ্গবন্ধুর উপর এ ধরণের তথ্যচিত্র তৈরি করা একটি বিশাল দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
ঘোষ বলেন, তিনি নীহার চক্রবর্তী নামে একজনকে খুঁজে পেয়েছেন যিনি কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর কলেজ জীবনের সাক্ষী।
তিনি বলেন,”আমরা ভাগ্যবান যে তিনি এখনও বেঁচে আছেন। তিনি তার ৯৮ বছর বয়সে এখনও তাঁর প্রাণবন্ত স্মৃতি ধারণ করে আছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ (ইন্ডিয়া চ্যাপ্টার)-এর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে ছবিটি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন।
ডা. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের কলকাতার দিনগুলি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ জাতির পিতার সেখানে রাজনীতির হাতে খড়ি হয়েছিল।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে অবস্থানকালে ঘোষের চলচ্চিত্র ইউনিটকে সব ধরনের সহায়তা দেবে।
আলম বলেন, কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই উদ্যোগ নিয়েছে এবং চলতি বছরের ১৯ মার্চ কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।
তিনি বলেন, “আমরা বঙ্গবন্ধুর কোলকাতার জীবনকে গণমানুষের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি কারণ সেই কলকাতার দিনগুলো ছাড়া বঙ্গবন্ধুকে সার্বিকভাবে জানা সম্ভব হবে না।”
চলতি বছরের জুনের মধ্যে প্রামাণ্যচিত্রটি মুক্তি দেয়া সম্ভব হবে বলে প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন ।
১৯৪৬ সালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি কলকাতার বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
ভারত সরকার বেকার হোস্টেলের ওই কক্ষে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত বিছানা, চেয়ার, টেবিল ও শেলফ সংরক্ষণ করে একটি স্মরণীয় জাদুঘর নির্মাণ করেছে।