মোশাররফ হোসেন: একটি স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশ। একটি লাল সবুজ রঙের জাতীয় পতাকা। একটি জাতীয় সংগীত, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। সর্বোপরি ৫৪ হাজার বর্গ মাইল একটি ভূখন্ড এবং একটি সংবিধান।
৩০লক্ষ শহীদ ও ২লক্ষ মা-বোন স্ত্রীসহ নারীদের সম্ভ্রমহারানো এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ। বিশ্বের রোল মডেল বাংলাদেশ। উন্নয়নের মহাসড়কে।
একমাত্র ভাষাভিততিক দেশ বাংলাদেশ। ২৫ বছরের দীর্ঘ বঞ্চনা ও নির্যাতন পাকিস্তান থেকে পৃথক হবার যে সংগ্রাম বাঙালিরা করেছে তার নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ। জেল, জুলুম তাকে দমাতে পারেনি।
ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২র শিক্ষা কমিশন, ১৯৬৬ সালের ৬দফা এবং ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রাম তথা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ডাক তারই। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সংসদীয় আসনের ২টি বাদে সব ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্ত প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান সংসদ না ডেকে আলোচনার নামে কুটকৌশলের আশ্রয় নেন। আওয়ামীলীগকে দেশ শাসনের ক্ষমতা না দেয়া বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঢাকা আক্রমণের পরই বিডিআর ওয়ারলেসের তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করার আহ্বান জানান।
অতঃপর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাড়ে ৭কোটি মানুষের ২কোটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ধবংসাত্মক আক্রমণে ভারতে আশ্রয় নেন।
১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ বাংলাদেশ ভূখন্ডের ভেতর মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এর নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতাকামী সেচ্ছ্বাসেবক বাহিনী মুজিব নগর সরকারকে অভিবাদন জানায়।
এরপর কোলকাতার থিয়েটার রোডে বাংলাদেশ সরকার এর কার্যালয়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি অঞ্চল ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।
গড়ে ওঠে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র। মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের মানুষকে যুদ্ধের খবর ,মুক্তিযুদ্ধের গান, কবিতা, নাটক প্রচার করে উজ্জীবিত রাখে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল খেলে অর্জিত অর্থ সরকারকে দান করে।
মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী গান, আপেল মাহমুদ এর গাওয়া সাড়ে সাল কোটি মানুষের আরেকটি নাম, মুজিবর, মুজিবর…শোন একটি মজিবরের থেকে লক্ষ মজিবরের কন্ঠ স্বরের ধ্বনি…আকাশে বাতাসে ওঠে রণি…কিংবা রথীন্দ্রনাথ রায়ের গাওয়া, মুজিব বাইয়া যাওরে,, মাগো ভাবেই কেন,, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে… তবুও শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি, এরকম ভূবনমোহন সংগ্রামী গান মুক্তিযুদ্ধের ৯মাসে মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণকে উজ্জীবিত রাখে।
এখন চলছে, যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই,,সহ অনেক গান। প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, মুজিব ভাই শর্ট ফিল্ম, লিরিক, কবিতা, নাটক।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একটি বড় অংশের বিচার হয়েছে। তবে মেজর নুর চৌধুরী ,ডালিম, রিসালদার মোসলেম এখনও আত্মগোপনে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের চেষ্টা চলছে।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধৈর্য ও সংগ্রামের ফলে টুংগিপাড়া ও গোপালগঞ্জ আজ জেগে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল ঘিরে সহজ ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। দেশ ও বিদেশের মানুষ প্রতিদিন সমাধি স্থলে গমন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ যেন এক মুজিব লোকনতরে, কোটি কোটি মুজিব ঘরে ঘরে ,, ।