নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে নানামুখী আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের নামও আছে। মেধাবী কৃতি এই আমলা এখন এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন। এই নীরবতার কারণ রাষ্ট্রপতি পদের জন্য অপেক্ষা বলেও অনেকে ব্যাখ্যা করতে চাইছেন। মশিউর রহমান আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত একজন ব্যক্তি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর কর্মজীবনের সততা এবং বুদ্ধিদীপ্ততা নিয়ে কোন রকম সংশয় নেই। তিনি সব সময়ই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাকে বিবেচনার অনেকগুলো যৌক্তিক কারণ আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।ড. মশিউর রহমান একজন কৃতি আমলা। সিএসপি হিসেবে তিনি সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি তার চাকরি জীবনে নানা বাক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সময় কাটান এবং নিজেকে অর্থনৈতিক বিষয়ে একজন বোদ্ধা আমলা হিসেবে প্রমাণিত করেন। ড. মশিউর রহমান ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি ইআরডি সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলেও মশিউর রহমানকে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন মেধাবী হিসেবে পরিচিত ড. মশিউর রহমান বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। অর্থনীতির উপর অগাধ পাণ্ডিত্য রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তিনি অনেকটাই নীরবতা পালন করছেন। কেন নীরবতা পালন করছেন এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য ড. মশিউর রহমানই ভালো দিতে পারবেন। ড. মশিউর রহমানকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির ভাবার কারণ হলো এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হচ্ছে এমন এক সময় যখন নানা কারণেই এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এই নির্বাচন অংশগ্রহণ মূলক হবে কিনা, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ক্রমশ দানা বেঁধে উঠছে। সেই সময়ে এমন একজন রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন যাকে নিয়ে জাতীয় অঙ্গনে কোন বিতর্কিত নেই এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার গ্রহনযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। সেরকম গুটিকয়েক ব্যক্তির মধ্যে মশিউর রহমান একজন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন জাতীয় পরিমণ্ডলের যে অবস্থায় থাকুক না কেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেন তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে এবং পশ্চিমা কূটনীতিকরা যেন অবাধে এবং খোলামেলা ভাবে তার সাথে কথা বলতে পারে সেটি নিশ্চিত হওয়া জরুরী। সে দিক থেকে ড. মশিউর রহমানের নাম অবশ্যই প্রথম দিকে থাকবে। কারণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তিনি বেশ গ্রহণযোগ্য। যদিও পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সময় ড. মসিউর রহমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছিল এবং তিনি ছুটিতে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই সময়টা তার জন্য ছিল সবচেয়ে দুর্বিষহ সময়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পদ্মা সেতুতে কোন দুর্নীতি হয়নি এবং এসবের সঙ্গে ড. রহমানের কোন সম্পর্কই ছিল না। কিন্তু তারপরও তখন একটি কঠিন সময় তাকে পার করতে হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তিনি পরিচিত এবং পছন্দের মুখ হিসেবে বিবেচিত হন। তাছাড়া একজন জ্ঞানী এবং পন্ডিত ব্যক্তি হওয়ার কারণে পশ্চিমা দেশগুলো তার সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এইসব বিবেচনা থেকেই অনেকে মনে করছেন যে ড. মশিউর রহমান যদি শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে পা রাখেন তাহলে অবাক হবার কিছু না। উল্লেখ্য যে বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হচ্ছে এবছর এপ্রিলে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সরকারকে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কে রাষ্ট্রপতি হবেন এটাই চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী যাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পছন্দ করবেন তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। শেষ পর্যন্ত তাই দেখার বিষয় বঙ্গভবন কার অপেক্ষায়…