নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ১১ জেলায় সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ জনে। গতকাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৫৪ জন। এর মধ্যে ফেনীতেই মারা গেছে ২৩ জন।
শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি (ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার)। মোট মৃতের সংখ্য ৫৯। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১৪, ফেনীতে ২৩, চট্টগ্রামে ৬, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ১, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১, কক্সবাজারে ৩ এবং মৌলভীবাজারে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ১ জন (মৌলভীবাজার)। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪১ জন, নারী ৬ জন আর শিশু রয়েছ ১২ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ সিলেট, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
মোট ৬৮টি উপজেলা বন্যাপ্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন ও পৌরসভা ৫০৪টি। বর্তমানে মোট ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৫টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৫৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭০২ জন।
পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৩ হাজার ৯২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেগুলোতে মোট ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ জন লোক এবং ৩৬ হাজার ১৩৯টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য মোট ৫১৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে ১০ দিনে সাপে কেটেছে ১১২ জনকে:
লক্ষ্মীপুরে ভয়াবহ বন্যায় সাপের প্রকোপ বেড়েছে। এতে বাড়িঘরে ও পানিতে হাঁটাচলার সময় গত ১০ দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে ১১২ জনকে সাপে কেটেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে ৮০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) আহাম্মদ কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় বন্যায় বিস্তীর্ণ এলাকা পানিবন্দি। এতে গর্তে থাকা সাপগুলো লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এখনো বন্যার পানি একেবারে না কমায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এসব উপজেলাবাসী। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় অনেকে সাপে কামড়ের শিকার হয়েছে। জেলা সদরসহ ৪টি হাসপাতালে ১১২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে ৮০ জন, রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ জন, রামগঞ্জে ১৪ জন, কমলনগর ১১ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাতে সদরের চররুহিতা এলাকায় বাড়ি যাওয়ার পথে আহসান হাবিব তুহিন নামে এক যুবককে সাপে কাটে। তুহিন জানান, রাতে তিনি বাড়ি যাচ্ছিলেন। বাড়ির সামনে পানি জমে থাকায় অন্ধকারে হঠাৎ তাকে সাপে কাটে। পরে তিনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এখন তিনি সুস্থ আছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) আহাম্মদ কবীর বলেন, বন্যা পরিস্থিতির কারেণ সাপের উপদ্রব বেড়েছে। এ ধরণে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ইনজেকশন রয়েছে। এখনো পর্যন্ত যাদেরকে সাপে কেটেছে সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অনেকে ইনজেকশন দেওয়ার পরপরই বাড়ি ফিরেছেন। আবার কয়েকজনকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢল এবং টানা বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় ডুবেছিল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১৫টির অধিক জেলা। এর ফলে একদিকে যেমন তৈরি হয় মানবিক বিপর্যয় অপরদিকে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রেও পড়ে বিরূপ প্রভাব। মোবাইল অপারেটর কোম্পানির টাওয়ারের গ্রিনফিল্ড ও নিচের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পানিতে ডুবে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় দুই হাজারের বেশি সাইট। কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি বলেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল বেশি।
তবে এখন পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় ফের সচল হতে শুরু করেছে এসব অচল মোবাইল টাওয়ার। বর্তমানে কবলিত এলাকার প্রায় ৯৯ শতাংশ টাওয়ারই সচল করা সম্ভব হয়েছে।
শনিবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, এখন বন্যা কবলিত ১১টি জেলায় ২৫৪টি টাওয়ার সাইট অচল হয়ে আছে। যার শতকরা পরিমাণ ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
এরমধ্যে নোয়াখালী জেলায় ৪৩টি, লক্ষ্মীপুর জেলায় ১১টি, ফেনী জেলায় ৭২টি, কুমিল্লা জেলায় ৯টি, ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলায় ২৪টি, চট্টগ্রাম জেলায় ১৮টি, খাগড়াছড়ি জেলায় ১৪টি, হবিগঞ্জ জেলায় ১৫টি, মৌলভীবাজার জেলায় ৮টি, সিলেট জেলায় ৩২টি ও কক্সবাজার জেলায় ৮টি মোট ২৫৪টি টাওয়ার অচল হয়ে আছে। এর বিপরীতে এই ১১টি জেলার মোট টাওয়ার রয়েছে ১৪ হাজার ৫৫১টি। যারমধ্যে এখন সচল রয়েছে ১৪ হাজার ২৯৭টি। অর্থাৎ অচল টাওয়ারের পরিমাণ ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
অপরদিকে, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি টাওয়ার অচল হয়ে পড়ে গত ২২ আগস্ট। ওইদিন ১২টি জেলায় বন্যার পানিতে অচল হয়ে যায় ৫টি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির প্রায় ২ হাজার ২৫টি সাইট।