দেশের বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে এক দিনে ২৮ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বিকেলে পাঠানো নিয়মিত বন্যাসম্পর্কিত তথ্যে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, দেশে এখন পর্যন্ত বন্যায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এ জেলায় এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর বেশি মৃত্যু হয়েছে সিলেট জেলায়। জেলাটিতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় মারা গেছে যথাক্রমে ১ ও ৩ জন। সব মিলিয়ে সিলেট বিভাগে ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সিলেট বিভাগের পর বন্যায় বেশি মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এ বিভাগে মারা গেছে ১৮ জন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও জামালপুর জেলায় পাঁচজন করে মারা গেছে। আর শেরপুর জেলায় মারা গেছে তিনজন। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলায় তিনজন ও লালমনিরহাট জেলায় একজন মারা গেছে বলেও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বেশি মৃত্যু হচ্ছে পানিতে ডুবে। এ পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। আর বজ্রপাতে মারা গেছে ১৪ জন।
এদিকে, মৌলভীবাজারের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে আসায় নদ-নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও হাওড়াঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এ জেলার সাত উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি। এখনো হাওড়ের পানিতে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার একাধিক সড়ক পানিতে নিমজ্জিত। ফলে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগব্যাধি।
এ ছাড়াও এক সপ্তাহ ধরে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে সুনামগঞ্জের ছাতকে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের পানি বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই উপজেলা। সড়ক ও রেললাইন বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বানের তোড়ে ভেসে গেছে বাড়িঘর।
হবিগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসিরা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে আজমিরীগঞ্জ বাজারের নিচু এলাকায় প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে দোকানপাট ও অর্ধশতাধিক বাড়িঘর।
এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় নিরাপদ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সিলেট বিভাগের অন্তত ৩০টি উপজেলার মানুষ ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। এতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে জেলার চার উপজেলার নদীবেষ্টিত চর, নিম্নাঞ্চল, আঞ্চলিক সড়কসহ নদীতীরের বসতবাড়ি। কয়েক দিন ধরে পানি বৃদ্ধিতে নতুন করে এই জেলায় অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে এলাকার মানুষ নিজেদের থাকার জায়গা ও গবাদি পশু নিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে।
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীতে পানি কমতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্রে বেড়েছে। এই দুই নদীর পানি ২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বন্যার কবলে পড়ায় জেলার ৩২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে ৪৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না।