মোঃ আনিসুর রহমানঃ প্রোটিয়ারা পাহাড়সম লক্ষ্য বেঁধে দিল বাংলাদেশকে। দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ৪১৩ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেট হারিয়ে ২৭ রান।
৫ রান করে অপরাজিত আছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। শেষ বেলায় মুলদারের বলে গালিতে দাঁড়ানো হার্মারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তামিম ইকবাল। এর পরই আলো স্বল্পতায় দিনের খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি।
আগামীকাল চতুর্থ দিন জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ৩৮৬ রান, হাতে আছে ৭ উইকেট। অন্যদিকে, ওই ৭টি উইকেট নিতে পারলেই জিতে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। একই সঙ্গে সিরিজ জেতার পাশাপাশি সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিতে পারবে তারা।
এর আগে প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৪৫৩ রান সংগ্রহ করে প্রোটিয়ারা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে টাইগারদের ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ২১৭ রান।
এদিকে পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকে স্বাগতিকরা। অবশ্য সমানতালে উইকেটও তুলতে থাকে বাংলাদেশি বোলাররা। স্বাগতিকদের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ৬০ রানে। এ সময় তাইজুলের হয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক ডিন এলগার। ২৯ বলে ২৬ করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত ১৪ রানে তাইজুলের শিকার হন কিগান পিটারসেন। ৪১ রানে সারিল এরউইকে আউট করেন খালেদ আহমেদ। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করা তাইজুল দ্বিতীয় ইনিংসে তার ঘূর্ণিতে নাকাল করতে থাকেন প্রোটিয়াদের। রিকেলটনকে তিনি ব্যাক্তিগত ১২ রানের বেশি করতে দেননি টাইগার স্পিনার।
এর আগে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে সারিল এরউইয়ের একটি শট মিরাজের দিকে ছুটে যায়। বল গিয়ে লাগে মিরাজের পেটে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আঘাত পাওয়ার পর স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। এরপর মাঠে ফিরে এসে তুলে নেন ক্রিজে স্থায়ী হতে থাকা বাভুমাকে। তিনি ৫৬ বলে ৩০ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন। এরপর ৬ রান করা মুল্ডারকে ফেরালে ইনিংস ঘোষণা করে প্রোটিয়ারা। কাইল ভেরেইন্নে ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এর আগে সব কটি উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসে ২১৭ রান করে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের ইনিংসের জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় দিন ওপেনার ও প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় আউট হন দলীয় ৩ রানে। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও তামিম ইকবাল মিলে গড়েন ৭৯ রানের জুটি। দলীয় ৮২ রানের মাথায় আউট হন তামিম। হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে থাকতে তাকে শিকারে পরিণত করেন উইয়ান মুল্ডার। ৫৭ বলে ৪৭ রান করে ফিরে যান দেশসেরা ওপেনার।
তামিম আউট হওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্তকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সেই মুল্ডারই। টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক নামের পাশে যোগ করতে সক্ষম হন মাত্র ৬ রান। তার সবশেষ দশটি ইনিংসকে পাশাপাশি সাজালে দাঁড়ায়: ০, ১,৭, ৮৮, ১৩, ০, ৩৭, ০, ২ ও ৬। যার গড় ১৭.১১। মুমিনুল ফিরে গেলে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের ব্যাটে লড়াই করে বাংলাদেশ। তবে লিটন বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি প্রোটিয়া বোলারদের তোপের মুখে। ১৪ বলে ১১ রান করে অলিভিয়েরের বলে সরাসরি বোল্ডআউট হন তিনি। দ্বিতীয় দিন শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা তোলে ১৩৯ রান।
তৃতীয় দিনের শুরুতেই বৃষ্টি হানা দেয় পোর্ট এলিজাবেথে। বৃষ্টির বাগড়ার পর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলির জুটিতে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। এ দুজনের ব্যাটে তৃতীয় দিন স্কোরবোর্ডে যোগ হয় আরও ৫৩ রান। এরপর ইয়াসির আলিকে শিকারে পরিণত করেন মহারাজ। ৮৭ বলে ৪৬ রান করে আউট হয়েছেন ইয়াসির। মহারাজ নিজের বলে নিজেই ইয়াসিরের ক্যাচ ধরেন।
ইয়াসির আউট হওয়ার সময় মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৪২ রান নিয়ে। নামের পাশে আর ৯ রান যোগ করার পর মুশফিককে ফিরিয়ে দেন সিমন হারমার। ১৩৬ বলে ৫১ রান করে বিদায় নেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তাইজুল ইসলাম আউট হন ৫ রান করে। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজও ১১ রানের মাথায় মহারাজের শিকার হন। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন এবাদত হোসেন। প্রোটিয়াদের হয়ে তিনটি করে উইকেট পান হারমার ও মুল্ডার। দুটি করে উইকেট নেন মহারাজ ও অলিভিয়ের।
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৫৩ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেন কেশভ মহারাজ। এলগার ছাড়াও হাফসেঞ্চুরি করেন কিগান পিটারসেন, টেম্বা বাভুমা ও ডিন এলগার। পিটারসেন ৬৪, বাভুমা ৬৭ ও এলগার ৭০ রান যোগ করেন স্কোর বোর্ডে। বাকিদের মধ্যে রায়ান রিকেলটন ৪২, উইয়ান মুল্ডার ৩৩ ও সিমন হারমার ২৯ রান করে। এদের মধ্যে ডিন এলগার, কিগান পিটারসেন, রায়ান রিকেলটন, উইয়ান মুল্ডার, কেশভ মহজারাজ ও সিমন হারমারের উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম।