মোশাররফ হোসেন: বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে।অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ ছুঁয়েছে। খাদ্যে স্বয়ং সম্পুর্ণ। নিজ অর্থায়ণে পদ্মা সেতু। রেলও চলছে সেতুতে। আগামীমাসে উত্তরা থেকে মেট্রো রেলে মতিঝিল যাতায়াত করবে ঢাকার মানুষ। অক্টোবরে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবে রেল। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমুদ্রের বুকে বিমান নামবে, উঠবে। কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল দিয়ে মানুষ যাতায়াত করবেন। তাও অক্টোবর মাসে।
এত অর্জনের মূলে যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করাটা এখন যার প্রধান লক্ষ্য। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। সংবিধান অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার যখন বদ্ধপরিকর ঠিক তখন সংবিধান বহির্ভূত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে বিএনপি জোট আন্দোলন করছে।
এরকম অবস্থার মধ্যে সমাবেশ ও শোভাযাত্রা, পদযাত্রায় ঢাকা ও জেলা ,বিভাগীয় শহর এখন সরব।
ঢাকার প্রবেশ পথ বন্ধ করে অচল করার চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ তা করতে দেয়নি। অপরদিকে আওয়ামীলীগ, ১৪ দলীয় জোট সংবিধানের আওতায় নির্বাচনের পক্ষে শান্তি সমাবেশ করে চলেছে।
এ যখন অবস্থা, তখন জামায়েত ইসলামীর নেতা, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আজীবন দন্ডিত দেলোয়ার হোসেন সাঈদী জেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান। কিন্ত মৃত্যুর পর জামাতের নেতা ও কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পুলিশ কঠোরভাবে দমন করে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন নানাভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের আড়ালে বিএনপি জোটকে সহায়তা করতে চাইছে তখন ভারত ,চীন ও রাশিয়া তাদের সতর্ক বার্তা দিয়েছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন এখন ভুরাজনৈতিক ইস্যু হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের বিষয়ে কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাতে ১৭আগস্ট অগ্নি রায় বিশেষ প্রতিবেদনে লিখেছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের নির্বাচন নিয়ে চাপ দিলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কারো জন্য সুখকর হবেনা মনে করছে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক সূত্রের খবরে একাধিক বৈঠকে ভারত একথা জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে।এমনকি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় ভারত যে খুশি নয় তা ওয়াশিংটনকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক এটা যুক্তরাষ্ট্রের মত ভারতও চায়। কিন্ত হাসিনা সরকারকে অস্থির করতে যুক্তরাষ্ট্র যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য শক্তিধর দেশের জোট জি-২০ সম্মেলনে একই মঞ্চে বসবেন বাইডেন মোদি শেখ হাসিনাসহ নেতৃবৃন্দ। জামাতী ইসলামিক রাজনৈতিক ছাড় দেয়া হলে ভবিষ্যতে ঢাকা মৌলবাদের দখলে চলে যাবে। উদার পরিবেশ যা আছে তা আর থাকবেনা।
ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত বিপজ্জনক, কাবুলে তালেবান আর বাংলাদেশের সীমান্তে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বাড়লে চীনের চাপ বৃদ্ধি পাবে। তা কাঙ্খিত নয় ভারত ও ওয়াশিংটনের।
অপরদিকে ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত দি হিন্দু’ র জনপ্রিয় রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ফ্রন্ট লাইনের কলামিস্ট প্রণয় শর্মা ২০আগসট লিখেছেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামীলীগে বিদায়, ভারত শুধু নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অস্থিরতা ও সন্ত্রাস বৃদ্ধি করবে। শেখ হাসিনাকে নির্বাচন ২০২৪ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ প্রয়োগ করছে তা সবার জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
এতে আরও বলা হয়েছে,ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য, রেল, ও সড়ক যোগাযোগ বৃটিশ ভারতের মতই চলছে। বাংলাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরিতে ভারত সরকার সহযোগিতা করছে। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রও রফতানি করছে। ভারী শিল্প নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আবার নৌপথে ৮০ভাগ বাণিজ্য করছে। সামরিক খাতে ভারতের তুলনায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আছে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার পেকুয়ায় বাংলাদেশের সাবমেরিন কেন্দ্র তৈরি করে দিয়েছে চীন।সাবমেরিন সরবরাহ করেছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফ্রিগেট সামরিক বাহিনীর এয়ারক্রাফট সরবরাহ করেছে। চীনের বিনিয়োগ ২.৩৭ বিলিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ১.২৩ বিলিয়ন। তবে বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে জাপান। মাতারবাড়িতে বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র জাপান করেছে।
বাংলাদেশের রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরি করছে রাশিয়া। সর্বোপরি চীনের কারিগরী সহায়তা নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ বাংলাদেশের উন্নয়নে চোখে পড়েছে বিশ্বাবাসীর।
এরকম দেশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার জন্য সরকার ও শেখ হাসিনার প্রয়োজন রয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তাই ভারত, রাশিয়া, চীন একাট্টা। তাদের পাশাপাশি জাপান কোরিয়া ও মধ্য প্রাচ্যের দেশের স্বার্থ আছে। এমনকি বন্দরের স্বার্থ রয়েছে। বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা বলয়ে ভারত চীন, রাশিয়া ও বাংলাদেশ কোনভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দিতে চাইবেনা।
তারপরও ভারত এখন বাংলাদেশের পাশে বড় প্রতিবেশী হিসেবে ১৯৭১ সালের মতই সতর্ক রয়েছে। জি ২০ সম্মেলনে ভারত সাংবিধানিকভাবে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগামী সরকার গঠনের বিষয় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করার প্রস্তাব দেবে বলে আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে জানা গেছে।
এমনকি এসময় বাইডেন ও শেখ হাসিনার বৈঠক হবার সম্ভাবনাও রয়েছে। অপরদিকে জোহান্সবার্গে শুরু হওয়া বিকৃস সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জি পিংয়ের সাথে শেখ হাসিনার বৈঠক হবার কথা রয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। আন্দোলন, নির্বাচনের অংশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশ নিলে অবাক হবার কিছু নেই। আর সেটার ইংগিতও রয়েছে।
তারপরও বিদেশের টাকায় টাকায় পরিচালিত সুজন, পরিবেশ আন্দোলন, অধিকার, টাইপিং বিভিন্ন এনজিও এবং চিহ্নিত দুটি পত্রিকার বহুল বিতর্কিত সম্পাদক, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসে চিহ্নিত কিছু অনলাইন, মোসাদ, আইএসএসসহ নানানভাবে নির্বাচনের আগেই গোয়েন্দা সংস্থা অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরা জল ঘোলা করে তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় নিতে চান। এরা দেশবিরোধী। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ওরা চায়না।।
বাংলাদেশ কখনও কারো কাছে মাথা নত করেনি। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে আঘাত এলে বাঙালি একযোগে রুখে দাঁড়ায়। জনগণকে নিয়ে সব পরাশক্তিকে কৌশলে পরাজিত করে সামনে এগিয়ে যাবেন একজন শেখ হাসিনা। এ বিশ্বাস জনগণের আছে।