মোশাররফ হোসেন : ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিনবদলের সনদ ঘোষনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা । ২০২১ সালে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ । চলছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি ।আগামী ২৬ মার্চ এজন্য বড় কর্মসূচি রয়েছে । ঐতিহাসিক দিনটিতে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর ।
বিশ্ব মিডিয়া বলছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের আদর্শ । সামনে থেকে যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পাশাপাশি মাথাপিছু আয় যেমন বেড়েছে তেমনি অর্থনৈতিক প্রবৃিদ্ধ দাঁড়িয়েছে ৭.২ ভাগ ।করোনার মধ্যেও পরিকল্পিত কর্মসূচি গ্রহন করে মৃত্যুহার রোধ করা ও অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিয়ে কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন অব্যাহত রাখা , সময়মত পরীক্ষিত বন্ধু দেশ ভারত ও বৃটেন থেকে টিকা এনে জনগনকে দেয়া শুরু করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ । অথচ আমেরিকা ও ইউরোপ এখনও টিকা নিয়ে বিপাকে আছে । মৃতুহারের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র । ট্রাম্পের সমযোচিত নেতৃত্বের ঘাটতিতে এ সমস্যায় পড়ে যুক্তরাষ্ট্র । এখন বাইডেন তা কাটাতে দিনরাত কাজ করছেন ।
২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পৌছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে । ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে । গেল ১২ বছরে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট , আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহীসোপান নির্ধারন , ভারতের সাথে সীমান্ত চুক্তি ,বিদ্যিত উৎপাদন ৩ হাজার থেকে ৩২ হাজার মেগাওয়াট, বিনামূল্যে অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ ̈বই প্রদান , অনুদান প্রদানের আগে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ সত্তেও নিজ অর্থে পদ্মা সেতু(চীনের কারিগরি সহায়তা) নির্মীণাধীন মেট্রো রেল( জাপানের জাইকার সহায়তায়), কর্ণফুলি টানেল , চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার রেল সংযোগ,মহেশখালির মাতারাবড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর , পটুয়াখালির পায়রায় সমুদ্র বন্দর ,চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকে রূপান্তর , ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে ৩য় টার্মিনাল নির্মাণ , আরও একটি আন্তরর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্যোগ , ১৯৬৫ সালের পর ভারতের সাথে ঢাকা কোলকাতা , ঢাকা আগরতলা , খুলনা কোলকাতাসহ বিভিন্ন সীমান্তে রেল যোগাযোগ পুন: স্থাপন , ভারত ও নেপালের সাথে ট্রানজিটে মালামাল পরিবহন , বিদু ̈ত সংযোগ , রূপপুরে পারমানবিক বিদুৎকেন্দ্র (রাশিয়ার সহায়তা ) পুকুরিয়ায় কয়লা বিদ্যূৎকেন্দ্র (ভারতের সহায়তা),আটলেনের মহাসড়ক ঢাকা ভাংগা, ঢাকা চট্টগ্রাম , চারলেন ঢাকা সিলেট , ঢাকা টাংগাইল ক্সতরি হচ্ছে । ঢাকা চট্টগাম বুলেট টেধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । বিদ্যূত চালিত টেধনটি ৩ঘন্টা ৩৭ মিনিটে গন্তবে ̈ পৌছাবে । এসবই জনকল্যানে ।এককথায় উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ ।
তবে সম্প্রতি সারা দেশে আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় ৭০ হাজার বাসস্থান করেছে সরকার। ভুমিহীন ও দরিদ্র মানুষকে বাসস্থান দিয়ে সরকার ইতিহাস গড়েছে ।বানিয়েছে পংঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাড়ি । শিক্ষাক্ষেত্রে স্কুল ,কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয় , মাদ্রাসার উন্নয়ন করা হয়েছে । বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে । ৫৬০ টি মডেল মসজিদের পাশাপাশি মন্দির , বিহার , গীর্জার উন্নযনের কাজ চলছে । দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য সেনা ,নৌ ও বিমানবাহিনীকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে প্রযুক্তি দিয়ে । বেড়েছে সেনানিবাস, নৌঘাটি, বিমানঘাটি । য্ক্ত হয়েছে যুদ্ধজাহাজ,সাবমেরিন, ফাইটার জেট । সামরিক ও বেসামরিক কমকর্তা , কর্মচারিদের বেতন ভাতা অতীতের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে ।মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও একই হারে বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসুবিধা আধুনিকায়ন করা হয়েছে ।“আমার গ্রাম আমার শহর” চিন্তাধারা স্বয়ংসপূর্ণ পল্লীসমাজের আধুনিক সংস্করন । এতে সারা দেশের সব উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে সমবায় গড়ে তুলে কৃষিকাজ ,মৎস্য , পশুপালন ,ডেইরিসহ যাবতীয় নকর্মকান্ড যুক্ত করা হয়েছে । গড়ে তোলা হবে কুটির শিল্প । বিপনন ব্যাবস্থা ও ব্যাংকিং সুবিধাও থাকবে । উন্নত দেশে রূপান্তরের মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘকে যুক্ত করে বাংলাদেশ কুটনৈতিক সাফাল্য আশা করছে । আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে । চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সংগে বৈঠকের পর রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিয়ানমার । তার আগে ভাসান চরে লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসবাসের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ মানবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । এজন্যই বঙ্গবন্ধুর মত শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের হৃদয়জুড়ে । এটাই এখন ঈর্ষার কারণ । মাইনাস হাসিনা নিয়ে তাই প্রতিনিয়ত চলছে দেশী ও বিদেশী চক্রান্ত ।
কেন ষড়যন্ত্র : টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি.. আল জাজিরা..এরপর কী…
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবাওে হত্যা ,জেলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি চারজাতীয নেতা হত্যা , মুক্তিযোদ্ধা সেনা ও বিমাানবাহিনী কর্মকর্তা হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বাংলাদেশকে পাকিস্থানি চিন্তাধারায় ফিরিয়ে নেয়া শুরু করেছিল একাত্তুরের পরাজিত দেশী ও বিদেশী শক্তি ।
কিন্তু বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ১৯৮১সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে । শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৫ দলীয় জোট গড়ে ওঠে । এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এ চেতনার বৃহত্তর জোট দৃঢ়তর হয়েছিল । তবে ২০০১ সালে বিএনপির ৭ দলীয় জোট জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে কোণঠাসা করার পাশাপাশি বিএনপি জামাতের নেতা ও যুদ্ধাপরাধী নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রী করে । শুধু তাই নয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে আর জে এস গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও একটি কানের ভয়ানক ক্ষতি হয় । সেদিন ট্রাকে মঞ্চ মানববর্ম তৈরি করে আবদুর রাজ্জাক, মেয়র হানিফ , মোফাজজল হোসেন মায়াসহ জাতীয় নেতারা শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়েছিলেন । বুলেটপ্রুফ গাড়িতেও দুইদফা গুলি করা হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও জিরো পয়েন্টে । মারা যান মহিলা নেত্রী আইভি রহমানসহ ১৪ নেতা ও কর্মী ।পুলিশ কিছুই করতে পারেনি । নেতাদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাক ,সুরনজিত সেন গুপ্ত, মেয়র হানিফ , মায়া ,ওবায়দুল কাদেরসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন । পরবর্তী ঘটনা দেশবাসির জানা । সেদিনের ঘটনার প্রধান লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা । আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব শূণ্য করা । কিন্তু আল্লাহতায়ালা শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখলেন । দেশ আজ তার নিরলস কর্মে এগিয়ে চলেছে ।
২০০৬ সালে বিএনপি নির্বাচন ও তত্তাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে তাদেরই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের সাঙ্গে টানাপোড়নের একপর্যায়ে সেনাবাহিনী সহয়তায় তত্তাবধায়ক সরকার গঠন করেন। অত:পর ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে । তবে পরবর্তীতে সংবিধানে সংশোধনী এনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে তত্তাবধায়ক সরকার প্রথা বিলুপ্ত করে। ইনডিমিনিটি বিল বাতিল করে বঙ্গব্ন্ধুর খুনিদের বিচার করে শাস্তিপ্রদান , একাত্তুরের যুদ্ধাপরাধী এনডিপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরি ও জামাতের নেতাদের বিচার করে ফাঁসি দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করেন । এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে । ফলে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তির মধ্যে বিরোধ প্রসারিত হয়ে পেশাজীবি ,বুদ্ধিজীবি , সংবাদপত্র ,টিভি চ্যানেল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে । রাজনীতির মেরুকরনে প্রগতিশীলদের একটি অংশ শুধূমাত্র শেখ হাসিনার বিরোধীতা করতে গিয়ে নিজেদের তৃতীয় শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে পারেনি । আবার জাতীয় পার্টি সরকারে সংযুক্ত হয়ে নিজেদের শক্তিশালী বিরোধী দলে পরিনত করতে পারেনি । এরশাদের মৃত্যুর পর তারা সংগঠনকে শক্তিশালী রূপ দিতে চেষ্টা করছে । এরকম পরিস্থতে সংসদের ভেতরে ও বাইরে অনচলিক ও জাতীয় ইসু ̈ভিত্তিক কোন কর্মসূচি নিয়ে জনগনের কাছে যেতে পারেনি সরকার বিরোধী কোন রাজনৈতিক দল ও জোট। তাদের অভিযোগ নির্বাচনে কারচুপি ও প্রশাসন ব্যাবহার করে আওয়ামী লীগ বার বার সরকারে টিকে থাকছে । আসলে রাজনীতি মাঠের বিষয় । কর্মসূচি দিয়ে নেতা নেত্রীরা ঘরে থেকে যান । নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি না করে সহিংসতা করলে কোন সরকার সে সুযোগ দেয়না । মানুষ ,গাড়ি ,রেল , বাস রাস্তার পার্শ্ববর্তী দোকান অফিসে আগুন দিয়ে পোড়ানোর রাজনীতি জনগনের কাম্য নয়। আধুিনক প্রযুক্তির যুগে রাজনীতি ধরন বদলে গেছে । জনমত গড়ে তুলতে হলে নগর ছেড়ে গ্রামে যেতে হয় । মানুষের আয় গেল ২০ বছরে বেড়ে গেছে । তাদের আনচলিক ইসু ̈কে জাতীয় রূপ দিতে হলে সরকারের দুর্বল দিক চিহ্নিত করতে হয় । পেশী ও টাকা দিয়ে সবকিছু করা যায়না ।
বাংলাদেশে মধ্যস্বত্বভোগী একটি শ্রেণী তৈরি হয়েছে । তারা সব আমলের কাজী । এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবি , পেশাজীবি , এনজিও ,বিদেশী রাস্ট্রদূত , সংবাদপত্র ,টিভি চ্যানেল । এরা দেশে তত্বাবধায়ক সরকারের পরিবেশ তৈরি করে । শুধু ক্ষমতালোভ । এদের সঙ্গে দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের অনেকেই যোগ দেন । আর তাতে যুক্ত হয়ে পড়ে বিদেশী মোড়ল রাস্ট্র । এসব বিষয় বাংলাদেশের মানুষ এখন বোঝে । বাংলাদেশের সংবিধানে এখন আর ৯০দিনের নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকারের বিধান নেই ।
অন্যদিকে বিদেশে বসবাসকারি কিছু বাংলাদেশী ব্যবসাযী ,অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্তা, পলাতক, পেশাজীবি ,সাংবাদিক রাষ্ট্রবিরোধী ও বক্তিবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত । তারা বসবাসকারি দেশে ভাল কাজ না করে অসত্য ভিডিও তৈরি করে ডলার ও পাউন্ড ,ইউরো আয় করে । এদের একটি দল লন্ডন ও নিউইয়র্কে বসে এসব কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
সম্প্রতি করোনার অ্যাষ্ট্রাজেনকা টিকা ভারতের সেরাম ইনসটিটিউট থেকে পাওয়া যাবেনা বলে বিদেশী সংবাদ সংস্থা এপি সংবাদ প্রকাশ করেছিল । এ নিয়ে যখন তোলপাড় তখন ভারত ও বাংলাদেশের সরকার বক্তব্য দেয় । অত:পর ২০ লক্ষ ডোজ টিকা বাংলাদেশে পাঠায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বিনাখরচে এটা পায় বাংলাদেশ । এরপর ৩ কোটি ডোজ টিকা পাবে নূন্য ̈তম খরচে । ভারত একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে পরীক্ষিত বন্ধুদেশ । তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক । এপি তাহলে কেন ভুল তথ্যের ওপর রিপোর্ট করেছিল ?
একই উদ্দেশ্যে কাতারভিত্তিক টিভি আল জাজিরা “অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টারস মেন ”নামে একটি অনুসন্ধ্নাী প্রতিবেদন প্রচার করেছে । যার মূল লক্ষ ̈ শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । খন্ডিত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে যেসব কথা উপস্থাপন করা হয়েছে তাকে পেশাদার প্রতিবেদন বলা যায়না । সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরনে তারা বাত্যয় ঘটিয়েছে । দুর্বলতা আছে বিভিন্ন অংশে । অভিযোগের শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি ।
রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে অপরাধীদের সম্পর্ক জোড়া দেয়া যে চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে পুরো প্রতিবেদনে এর প্রমাণ অনুপিস্থিত । তাছাড়া প্রতিবেদনের প্রধান তিন চরিত্র বাংলাদেশে বিতর্কিত এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চক্রের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম সরাসরি সম্পৃক্ত । পাশাপাশি পরিকল্পিত এ প্রতিবেদনে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে উজ্জল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সুকৌশলে বিতর্কিত করা এবং সেনাবাহিনীতে বিশৃংখলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়েছে । বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মুখপাত্র ডুজেরিক মিডিয়ায় বলেছেন ,জাতিসংঘ এটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রতিবেদনের সবচেয়ে দুর্বল দিক হচ্ছে , যাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর লোক হিসেবে দেখানো হয়েছে তাদের কারো সঙ্গে তার কোনরকম যোগাযোগ আছে এমন প্রমাণ দেখাতে পারেনি আল জাজিরা । বাস্তবে এ বিষয়টি প্রতিবেদনে অনভিপ্রেত মনে হয়েছে ।
প্রতিবেদনে আরও একটি বিষয় উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে । যা হচ্ছে ,টেলিফোনে আঁড়িপাতার জন্য বাংলাদেশ ইসরায়েল থেকে প্রযুক্তি কিনেছে । ‘পিকসিক্র ’ নামের একটি হাঙ্গেরীয় কোম্পানীর সঙ্গে ২০১৮সালে চুক্তির একটি দলিল তুলে ধরা হয়েছে । হাঙ্গেরীর বুদাপেষ্টে একজন আইরিশ মধ্যস্থতাকারির সহযোগিতায় দুই ইসরাইলীর সাথে বৈঠকের কিছু অংশ তুলে ধরে । তারা আদৌ ইসরাইলী কিনা ,এ তথ্য নেই ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ঢাকায় মিডিয়াকে বলেছেন , ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কুটনৈতিক কোন সম্পর্ক নেই ।এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত । বাংলাদেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির অপচেষ্টা । তদুপরি এরকম চুক্তি বিষয়ক বৈঠক কোন বেসামরিক বক্তির উপিস্থিতিতে কখনও করা হয়না । তাছাড়া ক্রয়চুক্তিতে ইলেকট্রনিক সরনজাম প্রস্তুতকারি দেশের নাম হাঙ্গেরী উল্লেখ করা হয়েছে । পিক সিক্সের মুখপাত্র মেলোনি এ বিষটি অস্বীকার করে আন্তর্জতিক মিডিয়ায বক্তব্য দিয়েছেন ।
সর্বোপরি বিশ্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশর আর্থ সামাজিক উন্ন্য়নের জন্য সরকারের ভুমিকা প্রমাণিত । অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক সরকারকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল জাজিরা কাজ করছে ।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সুশৃংখল বাহিনী হিসেবে বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছ্। দেশের যে কোন দুর্যোগে তারা বুক পেতে দেয় ।জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে তারা গৌরবের সংগে কাজ করছে । সেই বাহিনীকে বিশ্বের কাছে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে আল জাজিরা । সশস্রবাহিনী থেকে আইএসপিআর এর তীব্র প্রতিবাদ করেছে । বাংলাদেশের আদালতে আল জাজিরার বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতার কারনে একজন আইনজীবি নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য আবেদন করেছেন । এর শুনানি শুরুর তারিখ ঘোষনা করেছে । বাংলাদশেজুড়ে চলছে প্রতিবাদ ।
তথ্যমন্ত্রী ড: হাসান মাহমুদ মিডিয়ার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বাংলাদেশে মিডিয়া স্বাধীনভাবে কাজ করছে । সরকার চাইলে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করতে পারতো । তবে আদালতের নির্দেশনা পেলে তা কার্যকর করা হবে । বিশের ৭টি দেশে আলজাজিরা তাদের ভিত্তিহীন রিপোর্টের জন্য নিষিদ্ধ¦ । ভারতেও কিছুদিন বন্ধ ছিল ।
তিন চরিত্র ডেভিড বার্গম্যান , সামি ও তাসনিম খলিল ?
এ তিনজনই বাংলাদেশের ̧গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিতর্কিত । ডেভিড বার্গম্যান অনেক আগে থেকেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের বেতনধারী সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমান সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করে তখন সে তিনটি রিপোর্ট করেছিল । আযাদ জাজমেন্ট, ১,ও ২ এবং সাঈদী ইনডাইক্টমেন্ট :১৯৭১ ডেথস ।
শেষেরটিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বার্গম্যান প্রশ্ন তোলেন । সাঈদী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরির বিচার থামাতে কোন সূত্র ছাড়া মনগড়া তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করেন । তিনি ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রয়ারি ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস ট্রিবিউন সাময়িকীতে লেখেন , আইসিটি, ক্যান ওয়ান সাইডেড ট্রায়ালস বি ফেয়ার ? ট্রাইবুনাল তার পর্য্যবেক্ষনে বলেন , আমরা বিস্মিত এই দেখে যে কীভাবে ও কিসের ভিত্তিতে বিদেশী নাগরিক ডেভিড বার্গম্যান মুক্তিযুদ্ধ সর্ম্পকে ন্যায়ভ্রষ্ট মানসিকতা নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছেন । সরকার এসব বিষয়ে আইনের দিক খতিয়ে দেখতে পারে।
মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় আদালত সেসময় বার্গম্যানকে কারাদন্ড দিয়েছিলেন ।
আল জাজিরার অপর কুশীলব তাসনিম খলিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ছাত্র থাকাকালীন সময় ডেইলি স্টারের শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করতেন ।তবে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে একটি বিতর্কিত রিপোটের্র কারনে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় যৌথবাহিনী তাকে আটক করেছিল । পরবর্তীতে ছাড়া পেয়ে সুইডনে চলে যান। সিলেটের বিশ্বনাথে তার বাড়ি। জামায়াতের কবি ,সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত তাসনিমের বাবা কাসেমি মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর ছিলেন ।
প্রতিবেদনে অন্যতম চরিত্র সামি দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন । সে কথা বলার সময় হারিস আহমেদ নাম এক ব্যক্তিকে উপস্থাপন করা হয় । হারিস বুদাপেস্টে মোহাম্মদ হাসান নামে বসবাস করছেন । তার কথার ওপর ভিত্তি করে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকারি ও রাজনৈতিক পদ পদবী ও সরকারি কেনাকাটার দুর্নীতির ইংগিত দেয়া হয়েছে । অপর প্রান্তে কার সংগে হারিস কথা বলেছে তা বলা বা দেখানো হয়নি? হারিসের বক্তব্য দেখানো হলেও এর সঠিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি প্রতিবেদনে । অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের আত্মপক্ষ সমর্থণ বক্তব্য ভিডিও ক্লিপে দেখানো হয়নি ।
এতে করে আল জাজিরার প্রতিবেদনটিকে অসম্পূর্ণ , উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ও মনগড়া বলা চলে । এসব কারণে আলজাজিরা সৌদি আরব ,র্তুরস্ক , মিশর , সিরিয়া ,জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিষিদ্ধ ।