মোশাররফ হোসেনঃ ডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন বিতর্কে এবার সোচ্চার হলেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। এক যুক্ত বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানিয়ে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ এক প্রেস বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, বাঙালির সবচেয়ে গৌরবের মাসই হচ্ছে বিজয়ের মাস, ডিসেম্বর। অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি এই বিজয়ের মাসেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, আমাদের সমস্ত অর্জনকে চূড়ান্তভাবে কালিমা লেপন করা হচ্ছে। আমরা দেখতে পারছি দেশ যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করছে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, ঠিক সেই সময়ে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান অর্থাৎ আজকের মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে আগামী ১৬ ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান হকি ফাইনাল ম্যাচের ভেন্যু নির্ধারণ করে কলংকিত করা হচ্ছে আমাদের হকিকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে মিরপুরের একাডেমি মাঠে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উড়ানোর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। দুটিকেই ইচ্ছাকৃত ও ষড়যন্ত্র করেই করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি; যা আমাদের সমস্ত লড়াই-সংগ্রাম-অর্জনকে লুট করারই সামিল। এই সমস্ত কিছুই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের সময়ে দেশে ঘটতে দেখা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যারা এগুলো করেছে তারা কোনভাবেই সৎ উদ্দেশ্যে করেনি।
আমরা দেখলাম স্বাধীন বাংলাদেশে মিরপুরের একাডেমি মাঠে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উড়ানোর ধৃষ্টতা দেখাল পাকিস্তান ক্রিকেট দল। এই ঘটনাকে কোনও ক্রমেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই, দেখা যাবে না। এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পতাকা উত্তোলন সুস্পষ্টভাবেই ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তারা যে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেনি, সেটা বলার সুযোগ নেই। কারণ ৭১’এ সরাসরি যুদ্ধে পরাজিত শক্তি পাকিস্তান যে আজও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি বা স্বীকার করেনি- তা তারা নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে এবং অতীতেও করেছে। এমন নজীর আমরা পূর্বেও লক্ষ্য করেছি। ৮০’র দশকেও দেখেছি এই বাংলায় ইমরান খানের ধৃষ্টতা!
বাংলাদেশ ক্রিকেট শাসক সংস্থা বিসিবি পুরোপুরি নিশ্চুপ! আমরা অবাক হচ্ছি এ ব্যাপারে সরকারের নীরবতা প্রত্যক্ষ করেও। এমন একটি ঘটনায় তাদের নীরবতা কি জাতি হিসেবে আমাদের দুর্বলতা ও চেতনায় কালব্যাধিকেই ইঙ্গিত করে না? আমাদের চেতনা কি এতোখানিই ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে? এভাবে চলতে থাকলে আমাদের যে এক সময় প্রতিবাদেরও কোনও সুযোগ থাকবে না- এর চেয়ে মর্মান্তিক নির্জীবতা ও দেউলিয়াপনার উদাহরণ কি পৃথিবীর কোথাও আছে?
এমতাবস্থায়, আমরা মনে করি, ক্রীড়ামন্ত্রী তার দায় এড়াতে পারে না, সরকারও তার দায় এড়াতে পারে না। এতো কিছুর পরে আমরা মনে করি না যে স্বাধীন বাংলাদেশে এই দায়িত্ব পালনের অধিকার আর তাদের আছে। আমরা ক্রীড়ামন্ত্রী, হকি ফেডারেশন ও বিসিবিকে তীব্র নিন্দা এবং ঘৃণা জ্ঞাপন করছি এবং তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।
আমরা মনে করি, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের এ আচরণকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমকে অপমান করেছে। সুতরাং, আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অনতিবিলম্বে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তো বটেই; তাদের দেশের সরকারের তরফ থেকেও ক্ষমা ও ভুল স্বীকারের আনুষ্ঠানিক বার্তা আশা করছি।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, আমরা এর প্রতিবাদ স্বরূপ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি-বর্গের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং আগামীকাল সোমবার সকাল ১১ টায় জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে।
স্বাক্ষরকারীদের নাম:
আবদুল গাফফার চৌধুরী, ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সংসদ সদস্য এরমা দত্ত, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান, সাবেক ভিসি, সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চান, জেনারেল হারুনুর রশিদ, আবেদ খান, রামেন্দু মজুমদার, জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, জেনারেল আব্দুর রশিদ, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, প্রধান সম্পাদক, জিটিভি,গোলাম কুদ্দুস, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান, অধ্যাপক শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ড. আতিউর রহমান, ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, এ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মফিদুল হক, অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, ডাঃ সারওয়ার আলী, কাজী মুকুল, আসিফ মুনীর, কবীর চৌধুরী তন্ময়, ক্যাপ্টেন শাহাব (বীর উত্তম), অধ্যাপক ডাঃ নুজহাত চৌধুরী শম্পা, কামাল পাশা চৌধুরী, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ ও রাসেদ চৌধুরী।