মোশাররফ হোসেন: বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা যেমন কলংকজনক অধ্যায়। ২১আগস্ট ২০০৪, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ হত্যার চেষ্টা আরও একটি কলংকজনক অধ্যায়। এটা কোন রাজনৈতিক সংস্কৃতি?
আওয়ামী লীগ মনে করে তৎকালীন বিএনপি সরকার এ হামলার জন্য দায়ী। হামলার ঘটনায় শেখ হাসিনা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ নিহত হন ২৪জন নেতা ও কর্মী।
ট্রাক মঞ্চে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে রমনা ভবনসহ তিন দিক থেকে গ্রেনেড হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। পরিকল্পিত ছিল এ হামলা। হুজিদের তিনটি দল এ কাজ করার পর ট্রাক মঞ্চে মানবঢাল করে মেয়র হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন মায়া, ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন।
ট্রাকে বসে পড়ার পর নেতৃবৃন্দ ও নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত অবঃ মেজর জেনারেল সিদ্দিকী শেখ হাসিনাকে দ্রুত রূপালী রংয়ের বুলেট প্রুফ মার্সিডিজ বেনজ গাড়িতে তুলে ড্রাইভারকে গাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেন। গাড়ি ছাড়ার সাথে সাথে বংগবনধু এভিনিউ ও জিরো পয়েন্ট বরাবর শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এসময নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে শুয়ে ও বসিয়ে গাড়িটি ছুটে যায় সচিবালয়ের আবদুল গনি সড়ক ধরে । শাহবাগ মোড় হয়ে সোজা ধানমন্ডি ৬ নম্বর রোডের সূধাসদনের নিজ বাড়িতে পৌছে দোতলায় গিয়ে পানি পান করে হাফ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশ বৃদ্ধি করা হয়। ততক্ষণে তার বাড়ির চত্বরে সাংবাদিক ও নেতৃবৃন্দ পৌছে যান।
কী ঘটেছিল সেদিন ? হামলা করেছে কারা। সামরিক বাহিনীর আরজেস ৮৪৴৭২গ্রেনেড সন্ত্রাসবাদীদের হাতে কীভাবে গেল। আফগানিস্তান যুদ্ধে এটা ব্যাবাহার হয়েছে বলে সেদিন সন্ধ্যায় রেয়াব সাংবাদিকদের জানান। এসবই পরবর্তীতে উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনার জন্য এখনও জেলে রয়েছেন সাবেক সরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা। আদালতের রায়ে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে।
অপরদিকে গ্রেনেডের ইসপিলিনটারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন পর মারা গেছেন সাবেক মেয়র হানিফ। এ সময় ইসপিলিনটার বিদ্ধ হয়ে ভয়াবহ অবস্থায় চিকিৎসা নেন দেশবরেননো নেতা আবদুর রাজ্জাক , সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোফাজ্জল হোসেন মায়া, ওবায়দুল কাদের অসংখ্য নেতা ও কর্মী। সাংবাদিকদের অনেকেই সেদিন আহত হন।
গ্রেনেডের বিকট শব্দে আক্রান্ত হয়ে একটি কানের মারাত্মক ক্ষতি হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিদেশে গিয়ে তার কানে যন্ত্র বসাতে হয়েছে। চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালে মারা যান আইভি রহমান।
এটা কোন রাজনৈতিক সংস্কৃতি? বিরোধী নেতা ও কর্মী দের রাজনৈতিক সমাবেশে লাঠি গুলি টিয়ার গ্যাস নয়, যুদ্ধের গ্রেনেড! বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের এখনই সময় । এজন্য জালাও , পোড়াও, হত্যার রাজনীতি আর নয়।