আজি হতে ৪৫ বছর আগে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাড়িতে
বিপথগামী একদল সেনাসদস্য নির্মমভাবে হত্যা করে ।
এসময় বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিব , শেখ কামাল ,শেখ জামাল শিশু রাসেল ,সদ্য
বিবাহিত সুলতানা কামাল , শেখ জামালের স্ত্রী, শেখ ফজলুল হক মনি , আবদুর
সেরনিয়াবাতসহ তিন বাড়িতে পরিবারের প্রায় সকলে নিহত হন । বাড়ির পেছনের
পাইপ বেয়ে নীচে নেমে মৃত্যুপুড়ি থেকে সরে পড়ায় বেঁচে যান আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ
। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা স্বপরিবারে জার্মানি থাকায় বেঁচে যান । এতে
করে বোঝা যায় সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা থেকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করাই ছিল
হত্য কান্ডের উদ্দেশ্য ।৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী
সৈয়দ নজরুল ,তাজউদ্দিন ,মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। যার লক্ষ্য
ছিল বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শূণ্য করে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেয়া ।
কর্নেল (অব:) ফারুক রহমান, রশিদ , ডালিম, নুর চৌধুরিসহ ট্যাংক রেজিমেন্টের
সদস্যরা গভীর রাতে ট্যাংকসহ এ হত্যাকান্ডে অংশগ্রহন করে । তারা খোন্দকার
মোশতাককে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে ।
স্বাধীন বাংলাদেশে দেশি ও বিদেশী চক্রান্তে ঘটনার আকস্মিকতায় জাতি স্তব্ধ হয়ে যায় ।
গভর্নরসহ আওয়ামী লীগ ন্যাপ কমিউনস্টি পার্টিসহ প্রগতিশীল দল ও মুক্তিযোদ্ধা
(এফ এফ) , বিএলএফ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ্য মিলে কোটি কোটি কর্মী কিংকর্তব্যবিমূঢ়
হয়ে পড়ে । সেনাবাহিনী প্রধান শফিউল্লাহসহ তিনবাহিনী,রক্ষীবাহিনী,পুলিশ প্রতিরোধ
করতে পারলনা একদল সেনাসস্যদের। রাস্তায় কোটি জনতার প্রতিবাদের ঢল
নামলোনা । অথচ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষ প্রশিক্ষিত
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্র য্দ্ধু করেছে ।
এ পরিবেশ তৈরি করেছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া হটকারি বিপ্লবিরা । ।এর সঙ্গে যুক্ত হয়
একাত্তুরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের অনুসারিসহ মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা কারি দুই
পরাশক্তি ।
পরবর্তীতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার না করে
বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরি দেন । শুধু তাই নয় ইনডেমেনিটি আইন পাশ করে
বিচার রহিত করেন । পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি সাত্তার , এরশাদ ও প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া
ইনডেমেনিটি আইন বাতিল করেননি ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা শোককে শক্তিতে পরিণত করে ইনডেমেনিটি আইন বাতিল করে
বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের হত্যাকান্ডের বিচারের ব্যবস্থা করে দেশে আইনের শাসন
প্রত্ষ্ঠিা করেন । আদালতের রায়ে কর্ণেল ফারুক , রশিদ গংদের ফাঁসির আদেশ দেয়ার
পর তা কার্যকর করা হলেও আমেরিকায় থাকা রশিদ , কানাডায় বসবাসকারি নুর ,
পাকিস্তানে থাকা ডালিমকে আজও বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি । প্রথম দুজনের
বসবাসের অনুমতি উক্ত দুদেশে পুনর্বিবচনা পর্যায়ে রয়েছে । বাংলাদেশ এ বিষয়ে
আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের ফেরত পাবে বলে আশা করছে ।
বাংলাদেশের মানুষ চায় আইনের শাসন ।“ ও আলোর পথযাত্রী .. মিশে রাত্রি , এখানে
থেমোনা .. ।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এটাই হোক জাতির
অঙ্গিকার।