প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) নিজ দফতরে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তিনি এ পদত্যাগপত্র পাঠালেও তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনার। এর কারণ, পদত্যাগপত্রে উল্লেখিত দায়িত্ব গ্রহণের তারিখসহ বেশ কিছু ভুল।
নিজ পদ থেকে পদত্যাগের এই পত্রে মুরাদ হাসান উল্লেখ করেছেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গত ১৯ মে ২০২১ খ্রি. তারিখের ০৪.০০.০০০০.৪২১.৮৪.০০৪.১৯.১৪২ নম্বর স্মারকমূলে আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।’ সে হিসেবে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ২০১৯ সালের ১৯ মে তাকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে হিসেবে তিনি দায়িত্বে ছিলেন আড়াই বছরেরও কিছু বেশি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠান সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। এখন সেটি প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। তবে এর আগেই দায়িত্বপ্রদানের তারিখের ভুলটি সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও পদত্যাগপত্রের শুরুতে ‘বিষয়’-এর পর কোলন (:) এর স্থানে তিনি লিখেছেন বিসর্গ (ঃ), ‘থেকে’-এর স্থানে লিখেছেন ‘হতে’, ‘সশ্রদ্ধ’-এর স্থানে লিখেছেন ‘স্ব-শ্রদ্ধেয়’, ‘খ্রি.’-এর স্থানে লিখেছেন ‘খ্রি:’, এবং শেষের দিকে ‘অব্যাহতি’-এর স্থানে লিখেছেন ‘অব্যহতি’।
এর আগে, বিভিন্ন সময় বিতর্কিত মন্তব্য করায় মঙ্গলবারের (৭ ডিসেম্বর) মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে নিজ দফতর থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আগামীকালের মধ্যে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। যা মুরাদ হাসানকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাতে তার বাসভবনে ডাক্তার মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এবং আমি আজ রাত ৮ টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছি।
বেশকিছু দিন ধরে বিভিন্ন কারণে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। কখনও বিরোধী দলের নেতাকর্মী নিয়ে আবার কখনওবা চলচ্চিত্র জগতের লোকদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। তবে এবার আরও ভয়ংকর তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি অডিও ক্লিপ। যেখানে কথা বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। অপর প্রান্তে ছিলেন চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। পুরো বক্তব্যে ‘অশ্রাব্য’ কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। তবে এ নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী কিংবা মাহিয়া মাহির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর দুদিন আগেই ইউটিউবে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার পরিবারের এক নারী সদস্যকে উদ্দেশ্য করে অশালীন বক্তব্য দেন ডা. মুরাদ হাসান। প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে হাস্যরস করতে করতে ওই নারীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন তিনি।
মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ি উপজেলা) আসনের সাংসদ। তাঁর বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।