ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে সমালোচনা করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসবে আমরা দুই হাত প্রসারিত করে থাকব, তাকে বুকে আগলে নেয়ার জন্য। কিন্তু যে সময়ে তিনি বাংলাদেশে আসছেন, সেই সময়ে দুই হাত প্রসারিত করে থাকা নয়, দুই হাত শক্ত করে রাখা, তাকে ফেরানোর জন্য। অসাম্প্রদায়িক মানবের দেশ ভারতে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে এ মুহূর্তে তার (নরেন্দ্র মোদি) বাংলাদেশে আসা এবং তাকে স্বাগত জানাতে না পারা আমাদের জন্য দুঃখজনক।’
সোমবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘গতকাল (রোববার) পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা যথাযথ সম্মান করব। নিশ্চয়ই তাকে যথাযথ সম্মান অবশ্যই করবেন, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ দামোদর নরেন্দ্র মোদিকে এবার সম্মান করতে পারছে না। একজনও তাকে সম্মান করবে না। এই অবস্থায় তিনি আসবেন কী আসবেন না, আমরা জানি না।’
তিনি বলেন, ‘আমি আরেকটা কথা বলতে চাই, শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আমাদের কোনো কথা নেই। আমরা চিনি আমাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং জন্মদিন পালিত হয় তাহলে বাংলাদেশের সমগ্র লোককে নিয়ে সেটা পালন করা উচিত এবং করতে হবে। শুধু আওয়ামী লীগ এবং সরকার যদি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের নেতা, বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী একা আওয়ামী লীগের পালন করার কোনো অধিকার নেই।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনার বাবা হতে পারেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আসম আবদুর রবের বাবা, সিরাজুল আলম খানের বাবা, নুরে আলম সিদ্দিকীর বাবা, তোফায়েল আহমেদের বাবা, বলতে গেলে আমারও বাবা। তাহলে আমার বাবার জন্মদিন, আসম আবদুর রবের বাবার জন্মদিন, শাহজাহান সিরাজের বাবার জন্মদিন, লতিফ সিদ্দিকীর বাবার জন্মদিন পালন করতে হলে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষের বঙ্গবন্ধু, শুধু আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু নয়। সেজন্য নেত্রী শেখ হাসিনা আপনি একটু ভেবে দেখবেন, ৪২ বছর শাসনের পর কর্নেল গাদ্দাফি (লিবিয়া) ক্ষমতা ও জীবন হারিয়েছেন, মিশরের হোসনি মোবারকও হারিয়েছেন। আপনাকেও বলি, আপনি ভালো হয়ে যান, মানুষের নেতা হোন, মানুষের দুঃখে আপনি বেরিবেল হোন, বড় বড় কথা বলবেন না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনি দেশ চালাতে পারছেন না। আপনাকে শিখণ্ডী বানিয়ে যত কুকাম আছে, সমস্ত কুকাম আপনার নামে করা হচ্ছে। আপনি না থাকলে এই সমস্ত শয়তানেরা, পাপিয়ারা থাকতে পারবে না।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এ নেতা বলেন, ‘২৭ কোটি টাকা বাক্সে থাকে, আর ৭ লাখ টাকা বের করতে আমার কষ্ট হয়- এই দেশ জন্ম দিয়েছিলাম আমরা। তাই বলব, শেখ হাসিনা আপনি সাবধান হোন। আর ১৫দিন আছে। যেভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী পালন করছেন, তাতে মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। আমি কালকেও গ্রামে গিয়েছিলাম, একজন মানুষের মুখেও বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীর কথা শুনিনি। যা আছে রেডিও-টেলিভিশনে আছে, পত্র-পত্রিকায় আছে, মানুষের মুখে, বুকে নাই। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মানুষের বুকে চাই। আপনাদের মতো অপদার্থের কারণে শেখ মুজিব জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে।’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।