সংযম, আত্মশুদ্ধি এবং ত্যাগের মাস রমজান। রহমত (আল্লাহর অনুগ্রহ), মাগফিরাত (ক্ষমা) ও নাজাত (দোজখের আগুন থেকে মুক্তি) লাভের আশায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার, পানাহার ও সকল পাপ কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। রোজা পালনের জন্য শেষ রাতে সেহরি খাওয়া প্রত্যকে মুসলমানের জন্য আবশ্যক। অনেকেই সেহরি খেলেও রোজার নিয়ত করেন না বা নিয়ত না করেই রোজা রাখেন। তবে, অনেকেই জানেন না রমজান মাসে রোজা রাখা যেমন ফরজ তেমনই রোজার নিয়ত করাও ফরজ। বিষয়টি বিভিন্ন সহিহ হাদিসে নিশ্চিত করা হয়েছে।
রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন, মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকালের রোজা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়। (সহিহ বোখারি : ১/২, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৬)। ফরজ রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম। (সুনানে আবি দাউদ : ১/৩৩৩, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)। রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে। (সহিহ বোখারি : ২০০৭, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)। পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ, প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। (সহিহ বোখারি : ১/২, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৯৫)।
অতেএব, নিয়ত ছাড়া সারাদিন না খেয়ে থাকলে রোজা হবে না। তাই, শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার আগে বা পরে রোজার নিয়ত করা আবশ্যক। নিয়ত মুখে জোরে শব্দ করে উচ্চারণ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। মনে মনে একনিষ্ঠ সংকল্পের সঙ্গে রোজার নিয়ত করতে হবে। রোজার নিয়ত রাখার ক্ষেত্রে অন্তরের সংকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র মুখে নিয়ম উচ্চারণ করলেই সেই নিয়ম কবুল নাও হতে পারে যদি মনে রোজা রাখার জন্য দৃঢ় সংকল্প না থাকে। তাই রোজা রাখার আগে মনের সংকল্প অত্যন্ত জরুরি। রোজার নিয়ত আরবি ভাষায় করলে সওয়াব বেশি আর অন্য ভাষায় করলে সওয়াব কম এমন কোনো নির্দেশনা কোরআন বা হাদিসে দেওয়া হয়নি। রোজাদাররা আরবি কিংবা নিজের ভাষায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে রোজার নিয়ম করতে পারবেন।
পাঠকদের জন্য রোজার বহু প্রচলিত দুইটি নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ তুলে দেওয়া হলো।
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আংতাস সামিউল আলিম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল তোমার পক্ষ থেকে পবিত্র রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
এছাড়া, সেহরির পর অন্যভাবেও রোজার নিয়ত করতে পারবেন। بِصَوْمِ غَدٍا نَوَيْتُ مِنْ شَهْرِ رَمَضَان
উচ্চারণ: বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামাদান। অর্থ: আমি রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি।