মিজানুর রহমান: লালমনিরহাট সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ফেয়ার প্রাইজধারী ৩৩ হাজার টিসিবি কার্ড স্বশরীরে উপস্থিত থেকে বিতরন শুরু করেছেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।এসময় প্রতিটি কার্ডধারীর তথ্য যাচাই বাছাই করায় এক ব্যাক্তি একাধিক কার্ডের মালিক সেইসব কার্ড স্থগিত রাখা হয়।
নির্ধারিত মূল্যে টিসিবির সরবরাহকৃত পন্য বিতরণে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনিয়ম দৈনিক আজকের বসুন্ধরা সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, এই খবর প্রকাশিত হবার পর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নড়ে চড়ে বসেন। তদন্ত করে দেখেন মহেন্দ্রনগর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট সহ বেশ কিছু ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিরা পূর্বের কার্ডগুলো স্কানিং করে কৌশলে টিসিবির মাল তুলে নিচ্ছে, লাইনে দাঁড়ানো টিসিবি কার্ডধারীরা মাল হাতে না পেতেই বরাদ্দ কৃত মালামাল শেষ হয়েছে বলে ডিলার ঘোষনা দেন। এতে কার্ডধারীদের সাথে ডিলারদের হট্টোগোল হয়, কোথাও কোথাও ডিলার অবরুদ্ধ থাকেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে তাৎক্ষনিক ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।এই অনিয়ম রুখতে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা ফেরদৌস জেলা প্রশাসকের সাথে পরামর্শ ক্রমে উপজেলা তহবিল থেকে নতুন করে ৩৩ হাজার কার্ড তৈরী করেন।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা ফেরদৌস প্রতিটি ইউনিয়নে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে নতুন কার্ড বিতরণ করছেন। প্রতিটি কার্ডের তথ্য এবং ছবি মিল রয়েছে কিনা যাচাই করে বিতরন করতে গিয়ে সকাল থেকে রাত প্রযন্ত নিরলস ভাবে কাজ করতে হচ্ছে। এতে করে সাধারন মানুষ অত্যন্ত খুশী হয়েছে। ৩৩হাজার কার্ডের মধ্যে মোগলহাট, বড়বাড়ি, পঞ্চগ্রাম, কুলাঘাট ইউনিয়নে বিতরন শেষ করা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে বাকি ইউনিয়ন গুলো বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
নতুন কার্ড হাতে পাবার পরে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সাইদুল ইসলাম জানান, এতদিন শুধু আমার পরিবারে আমি শুধু কার্ড দিয়ে মাল উঠাতাম আজকে আমার ভাইয়ের কার্ড হাতে পেলাম, আমার ভাইয়ের কার্ড দিয়ে অন্য কেউ মাল উঠাতো আমরা সেটা জানতাম না,আমার ভাইয়ের সংসার আলাদা একটি কার্ডের মাল দিয়ে দুটি পরিবার চালানো কষ্ট হতো,সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন এবং ইউওনো এবার এসব অনিয়ম বন্ধ করে কার্ড বিতরণ করায় আমরা সাধারন মানুষ উপকৃত হয়েছি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বলেন, ইতিপূর্বে টিসিবির কার্ড যখন বিতরণ করা হয়েছিল সময় স্বল্পতায় সেটা যাচাই বাছাই করার সুযোগ পাওয়া যায়নি,ফলে কিছু অসাদু ব্যাক্তি এটি সুযোগ নিয়ে স্কানিং করে টিসিবির মাল উত্তোলন করে নিতো, এতে প্রকৃত কার্ডধারীরা তাদের পন্য উঠানো থেকে বঞ্চিত হতো। এটা আমাদের নজরে আসার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমরা পরামর্শ করে নতুন কার্ড তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেই,এই খাতে কোন বরাদ্দ না থাকায় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পরামর্শে উপজেলা তহবিল থেকে এটি সম্পন্ন করি।প্রতিটি কার্ড যাতে প্রকৃত সুফল ভোগী পায় এজন্য আমি এবং আমার ইউওনো প্রতিটি ইউনিয়নে যাই সকাল থেকে বিতরন শুরু করে শেষ না হওয়া প্রযন্ত আমরা অবস্থান করি।একেকটি ইউনিয়নে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার প্রযন্ত কার্ডধারী এগুলো বিতরন করতে অনেক সময় রাত ০৯টা বাজলেও আমরা সেটা শেষ করে এসেছি। এতে সাধারন মানুষ উপকৃত হয়েছে,অনেকে নাম বসিয়ে আইডি কার্ডের সাথে মিল নেই ছবির মিল নেই একাধিক কার্ড হাতিয়ে নিয়েছে,সেটা কোথাও পঞ্চাশটি প্রযন্ত সেই দুর্নিতী অনেকটা রোধ করা গিয়েছে।জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে এটা দ্বায়িত্ব মনে করে আমি এবং আমার পরিষদের ইউওনো স্বচ্ছতার সাথে কাজটি করার চেষ্টা করেছি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা ফেরদৌস বলেন,টিসিবি কার্ড নিয়ে অনেক গুলো অভিযোগ আমার কাছে আসে,এরপর আমার উপজেলা চেয়ারম্যান সহ পরামর্শ করে আমরা সিদ্ধান্ত নেই নতুন কার্ড তৈরী করে এই অনিয়ম বন্ধ করবো।সেই লক্ষ্যে আমি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় সহ প্রতিটি ইউনিয়নে
স্বশরীরে উপস্থিত থেকে যাচাই স্বাপেক্ষে কার্ড বিতরণ করছি, এতে আমাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম হলেও আমি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের দ্বায়িত্ব এবং কর্তব্য মনে করে কাজটি করছি,এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে এটা দেখেই আমাদের ভাল লাগছে।