দুই দশক আগে এশিয়া মহাদেশে আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়ে নকআউট পর্বে পা রেখেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এশিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্বকাপে যেন ২০ বছর আগের সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনলো কোরিয়ানরা।
এবারও গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর টিকিট পেলো দক্ষিণ কোরিয়া। দুই দশক আগে কোরিয়ানদের সেই জয়ে বিতর্কের ছোঁয়া থাকলেও এবার প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো তারা। ম্যাচের শুরুতে পিছিয়ে গেলেও দুই গোল ফিরিয়ে দিয়ে ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে এশিয়ান দেশটি।
শেষ ষোলোয় উত্তরণ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আগের ম্যাচ থেকে ছয়টি পরিবর্তন এনে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) কাতারের আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামে পর্তুগাল। ম্যাচের ৫ মিনিটেই এগিয়ে যায় তারা। পেপের উঁচু করে বাড়ানো বলটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কোরিয়ার ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন রাইটব্যাক ডিয়েগো ডালোট। তার কাটব্যাক থেকে লক্ষ্যভেদ করে পর্তুগিজদের লিড এনে দেন রিকার্ড হোর্তা।
ম্যাচের শুরুতেই গোল হজম করে গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে ওঠে দক্ষিণ কোরিয়া। ১৭ মিনিটে গোলের দেখাও পায় এশিয়ান দেশটি। কিন্তু কিম জিন-সুর নেওয়া শট পর্তুগালের জালে আশ্রয় নিলেও তিনি অফসাইডে থাকায় তার গোল বাতিল হয়ে যায়।
যদিও মিনিট দশেক পর ঠিকই সমতায় ফেরে কোরিয়ানরা। তবে এতে পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ধন্যবাদ দিতে পারে তারা। কোরিয়ার কর্নার থেকে বল রোনালদোর কাঁধ হয়ে আসে কিম ইয়ং গিয়োনের পায়ে। বল জালে জড়াতে কোরিয়ান ডিফেন্ডারের কোনো ভুল হয়নি।
মিনিট দুয়েক পর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পেয়েছিলেন সিআর সেভেন। কিন্তু কোরিয়ান গোলরক্ষক কিম সিউং-জুকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। ৩৩ মিনিটে ডালোটের দুরপাল্লার শটও রুখে দেন কোরিয়ান গোলরক্ষক।
প্রথমার্ধের শেষদিকে আরও একবার গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন রোনালদো। তবে কিম সিউং-জু ডি-বক্সের বাইরে থেকে ভিতিনিয়ার নেওয়া শট ঠেকানোর পর কাছ থেকে নেওয়া লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন পর্তুগাল অধিনায়ক। ফলে ১-১ গোলের সমতায় মধ্যবিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধেও গোলের সুবর্ণ সুযোগ হাতাছাড়া করেন রোনালদো। ৫২ মিনিটে ভিতিনহার কাছে বল পেয়েও বলে-পায়ে ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারেননি রোনালদো। যদিও তার আগেই লাইন্সম্যান অফসাইডের সংকেত দেন। দিনটি বোধহয় রোনালদোর মতো ছিল না। নাহলে তার মতো গোলশিকারি এত সুযোগ একসঙ্গে কদাচিৎ হাতছাড়া করেন।
টুর্নামেন্টে টিকে থাকার তাগিদে সব ছেড়ে আক্রমণে মনোযোগী হয় দক্ষিণ কোরিয়া। ৭০ মিনিটে গোলের ভালো সুযোগও পেয়েছিল তারা। কিম জিন সুয়ের কাছ থেকে বল পেয়ে ফাঁকায় সন হিউং মিন জোরালো শট নিয়েছিলেন। তবে কোরিয়ান অধিনায়কের হাফ ভলি ব্লক করেন পর্তুগিজ ফুলব্যাক হোয়াও ক্যান্সেলো।
ম্যাচ যখন নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছে, তখন কোরিয়ানরাও ধাবমান হচ্ছেন টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের দিকে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে ম্যাচ যখন অতিরিক্ত সময়ে গড়িয়েছে তখনই এশিয়ান টাইগারদের জাদুতে মুহুর্তের মধ্যে বদলে গেলো পরিস্থিতি। নিজেদের ডি বক্সের সামনে থেকে একা থাকা সন হিউং মিন বল নিয়ে ছুটে যান প্রতিপক্ষের ডি বক্সের দিকে। সেখান থেকে নাটমেগ করে বল বাড়িয়ে দেন সতীর্থ হোওয়াং হি চানকে। তার ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়েই কাঙ্ক্ষিত লিড পায় কোরিয়ানরা।
ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই এইচ গ্রুপের তলানিতে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যদিকে, ঘানার বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা উরুগুয়ে হতে যাচ্ছিলো শেষ ষোলোয় পর্তুগালের সঙ্গী। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের ওই গোলে কোরিয়ানরা এক লাফে চলে আসে দ্বিতীয় স্থানে। উরুগুয়ের সঙ্গে পয়েন্ট আর গোল ব্যবধান সমান থাকলেও লাতিন আমেরিকান দলটির চেয়ে বেশি গোল দেওয়ায় শেষ ষোলোর টিকিট পায় এশিয়ান টাইগাররা।