দেশের বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি নিয়ে আতঙ্কিত বা হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নতুন বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে ইভ্যালির গ্রাহকদের তিনি এ পরামর্শ দেন।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত ইভ্যালির নতুন বোর্ডের প্রথম সভা শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে ইভ্যালির গ্রাহকদের তিনি এ পরামর্শ দেন।
ধানমন্ডিতে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নতুন বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে ফেসবুক স্ট্যাটাসে মাহবুব কবীর মিলন লেখেন- ‘যা কিছু দেখবেন শুনবেন জানবেন, আতঙ্কিত বা হতাশ হবেন না। আস্থা বা বিশ্বাস রাখুন, অপেক্ষা করুন। কষ্ট যা হবে, আমার হবে। হয়তো তিনগুণ কষ্ট বেড়ে যাবে, এই যা। যা হবে বিন্দু পরিমাণ বিচ্যুতি বা অনিয়ম বা ম্যানিপুলেশন থাকবে না। সময় দিন। অপেক্ষা করুন।’
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ এবং ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। এরপর ২১ অক্টোবর প্রকাশিত লিখিত আদেশে সংশ্লিষ্ট কর্মপন্থা ঠিক করে দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ বোর্ডের নতুন পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিও নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
নতুন পরিচালনা পর্ষদের যেসব নির্দেশনা মানতে হবে
‘হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রথম সভায় আদালতের আদেশ সম্পর্কে কমিটিকে অবহিত করবেন। একইসঙ্গে তিনি ইভ্যালির অডিট রিপোর্টসহ মূল বিষয় এবং তাদের করণীয় বিষয়টি তুলে ধরবেন।’
‘বোর্ডের সদস্যরা কেপিএমজি এর রহমান হককে দিয়ে ইভ্যালির অডিট রিপোর্ট তৈরির করাবে। প্রতি অর্থবছরে ইভ্যালির আর্থিক লেনদেন, গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহের সময় ও ব্যয়, বর্তমানে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে থাকা ইভ্যালির টাকা, ইভ্যালির সদস্য, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও বিগত বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি অডিটকারী কর্মকর্তাদের নাম নতুন করে অডিট রিপোর্টে তুলে ধরতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে বর্তমান পরিচালকগণ গ্রাহকদের থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি সাবেক পরিচালকরা কীভাবে করেছে তা খুঁজে বের করবেন এবং নিজেদের পর্যবেক্ষণ দেবেন।’
‘ইভ্যালির বর্তমান পরিচালকরা যদি দেখতে পান, ইভ্যালির আর্থিক কার্যক্ষমতা ঝুঁকিতে রয়েছে, তাহলে তারা ইভ্যালির নিয়ন্ত্রক, কর্তৃপক্ষ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাইবে। একইসঙ্গে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ অতীতে পণ্য বিতরণে ব্যর্থতার জন্য বিভিন্ন কারণ বিবেচনায় নিয়ে ক্রেতাদের আবেদন অনুযায়ী টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বা আইন অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের জন্য আবেদনগুলো বিবেচনা নেবেন।’
‘অডিট রিপোর্ট প্রস্তুত হওয়ার পর ইভ্যালির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক বোর্ড সদস্যদের নিয়ে সভা আহবান করবেন। সভায় অডিট রিপোর্ট ও অন্যান্য নথি যাচাই-বাছাই করবেন। যদি তিনি ইভ্যালি পরিচালনা অসম্ভব মনে করেন, তাহলে তিনি বোর্ড সদস্যদের কাছে কোম্পানিটির অবসায়নের বিষয়টি তুলে ধরবেন। এছাড়াও তিনি পরিচালনাপর্ষদের প্রথম সভায় সবার পরামর্শক্রমে প্রয়োজন মনে করলে নতুন করে কোম্পানিতে কাউকে নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগ করতে পারবেন। একইসঙ্গে তিনি ইভ্যালির সব সম্পদের দেখভাল করবেন।’
আদালত তার অন্য আদেশে ইভ্যালির বর্তমান পরিচালনাপর্ষদের কাছে কোম্পানির নগদ টাকা, শেয়ার, ঋণপত্র, এফডিআর, চাবিসহ সব নথিপত্র বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।