মোশাররফ হোসেন : টরন্টোয় না থাকলে হয়তো রোহিঙ্গাদের এই ঐতিহাসিক নতুন জীবনের উৎসব দেখতে যেতাম । টেকনাফের পাহাড় চুড়ায় ছিল প্লাস্টিকের ছাউনি আর বেড়ার ছোট্ট ঘর। মাটির মেঝেতে বসবাস করত রোহিঙ্গাড়া । ছিলনা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। নোয়াখালীর ভাসানচরে পাকা দালানে নিজ কক্ষে বিছানা ,রান্নার চুলা আর সৌরবিদ্যুৎ পেয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে শিশু কিশোর যুবক বৃদ্ধ রোহিঙ্গারা । এর নাম মানবতা ।সাবাস বাংলাদেশ,সাবাস.. জ্বলে পুড়ে মরে ছাড়খাড় , তবুমাথা নোয়াবার নয় ..।
সারি সারি পাকা দালান । লাল রংয়ের ছাউনি । আবার কিছুদূর পর পর ৫ তলা নিরাপদ আশ্রায়কেন্দ্র । বাজার , মসজিদ , পুকুর , ̄স্কুল ,২০ শয্যার হাসপাতাল, পাকা রাস্তা । এলাকায় চড়ছে গরু মহিষের পাল । হাঁসের দল সাঁতার কাটছে জলাশয়ে । গাছপালায় পখিও রয়েছে । এরকম একটি পরিবেশ পেয়ে রোহিঙ্গারা মেতে ওঠে উৎসবে । যা ছিলনা তাদের আদিনিবাস রাখাইনে । টেকনাফে । এ যেন আমার গ্রাম , আমার শহর ।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্বসম্প্রদায় যখন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারছেনা তখন বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের পরিবেশ রক্ষা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচরে প্রায় ১লক্ষ রোহিঙ্গার আবাসনের ব্যবস্থা করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে । যদিও জাতিসংঘ ও কিছুবিদেশী এনজিও এর বিরোধিতা করেছে ।
বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফের কুতপালং আশ্রয়কেন্দ্র থেকে তালিকাভুক্ত ১৬৪২ রোহিঙ্গা নিয়ে বাসে করে চট্টগ্রাম নেয়া হয় । শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের বোট ক্লাব এলাকার জেটি থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ৬টি জাহাজ যাত্রা করে । জাহাজে ওঠার আগে সবাইকে মাস্ক ও লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে দেয়া হয় ।কেউ কেউ ডেকের চেয়ারে বসে মাথায় ছাতা মেলে ধরেন ।মোবাইলে ছবি তোলেন । জীবনে প্রথমবার জাহাজে করে নদী সাগরে ভ্রমনের আনন্দই আলাদা ।তারপর উন্নত ও নতুন জীবনের যাত্রা এসব মিলে রোহিঙ্গারা ছিল প্রাণবন্ত । ফুরফুরে মেজাজে ।
দুপুর ১: ৩০মিনিটে নৌবাহীনির তত্তাবধানে ৬টি জাহাজ ৫০০ রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভাসানচর পৌছে যায় । এরপর পর্যায়ক্রমে প্রথম দলের অন্যান্যদেরও আনা হবে বলে কমোডর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরি জানান ।
ভাসানচর আশ্রায়ন-৩ প্রকল্পের পরিচালক কমোডর মামুন বলেন , দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আসা শুরু হলো । এতে আমি আনন্দিত । তিনি আশা করেন রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের চেয়ে ভাল পরিবেশ পাবে ।
আগামী ৭ দিন তাদের রান্না করা খাবার দেয়া হবে । শনিবার থেকে দেয়া হবে ১৯ টি সহায়তা সামগ্রী ।এরপর কক্সসবাজারের মত নিজেদের খাবার নিজেরা রান্না করে খাবে । এজন্য চুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবসন বিষয়ক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদদৌজা বলেছেন ,শনিবার থেকে ২২টি এনজিও রোহিঙ্গাদের খাবার ও অন্যান্য চাহিদা পূরনে কাজ করবে। এই ২২ এনজিওর প্রতিনিধিরা ভাসানচরে রোহিঙ্গারা নামার পর তাদের করোনা পরীক্ষার জন্য সকলের শরীরের তাপমাত্রা যাচাই করেন ।এরপর সকলকে নেয়া হয় ওয়্যারহাউসে ।সেখানে রোহিঙ্গা ইমাম দোয়া অণুষ্ঠান পরিচালনা করেন । দোয়ায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও ভাসানচরে আবাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করা হয় ।
এসময় ইউনুস মাঝি নামে এক রোহিঙ্গা নিউজ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের বলেছেন , তারা অপেক্ষাকৃত ভাল জীবনের আশায় এখানে এসেছেন । তারা মিয়ানমার বা তৃতীয় দেশে স্থানান্তরে অগ্রাধিকার পাবেন ।