মোঃ আনিসুর রহমান : সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে ২৭৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০৪ জন নিহত ও ৪৯২ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে ৫৭ জন নারী এবং ৩৮ জন শিশু রয়েছেন। রোববার (৪ অক্টোবর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ৯৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৬ জনের মৃত্যু হয় যা মোট নিহতের ৩৪.৮৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৫.৫৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৮৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৮.২৮ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৪ জন, অর্থাৎ ১৭.৭৬ শতাংশ। এই সময়ে ৯টি নৌদুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত, ১৪ জন আহত ও ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১১টি পৃথক রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১০৮টি (৩৯.৫৬%) জাতীয় মহাসড়কে, ৬৯টি (২৫.২৭%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৪টি (১৯.৭৮%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৪২টি (১৫.৩৮%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাসমূহের ৭২টি (২৬.৩৭%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৬১টি (২২.৩৪%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৮৫টি (৩১.১৩%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৪৬টি (১৬.৮৪%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৯টি (৩.২৯%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২০.০৯ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৪.১৫ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স ৩.৪৬ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৯.১৬ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২২.৮৬ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-লেগুনা) ১৫.৪৭ শতাংশ, নসিমন-পাখিভ্যান-অটোভ্যান-ভটভটি ৭.১৫ শতাংশ, রিকশা-ভ্যান, বাইসাইকেল ৬.৬৯ শতাংশ এবং অন্যান্য (টমটম, পাওয়ারটিলার, হ্যান্ডট্রলি, তেলবাহী ট্যাংকার) ০.৯ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪৩৩টি (ট্রাক ৬৬, বাস ৮৩, কাভার্ডভ্যান ৯, পিকআপ ১২, লরি ৩, ট্রলি ১০, ট্রাক্টর ৫, মাইক্রোবাস ৭, প্রাইভেটকার ৬, অ্যাম্বুলেন্স ২, ডাক বিভাগের কাভার্ডভ্যান ১টি, নৌবাহিনীর বাস ১টি, হ্যান্ডট্রলি ১টি, মোটরসাইকেল ৯৯টি, নসিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-অটোভ্যান ৩১টি, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-লেগুনা ৬৭টি, টমটম ১টি, পাওয়ারটিলার ১টি, তেলবাহী ট্যাংকার ১টি, বাই-সাইকেল ৩টি, রিকশা ও রিকশাভ্যান ২৬টি)। সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫.১২%, সকালে ২০.৫১%, দুপুরে ২৩.৪৪%, বিকালে ২৫.২৭%, সন্ধ্যায় ৯.৮৯% এবং রাতে ১৫.৭৫%।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৭৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ৮৩ জন। সবচেয়ে কম রাজশাহী বিভাগে। ২০টি দুর্ঘটনায় নিহত ২২ জন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২৭টি দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত। সবচেয়ে কম সুনামগঞ্জে ১টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এতে আরো বলা হয়, আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উভয়ই কমেছে। আগস্ট মাসে ৩০২টি দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জন নিহত হয়েছিলেন। এই হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসে দুর্ঘটনা ৯.৬০% এবং প্রাণহানি ১৯.৭৮% কমেছে।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ১০টি সুপারিশও তুলে ধরেছে তাদের প্রতিবেদনে। যার মধ্য রয়েছে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য পৃথক পার্শ্বরাস্তা তৈরি করা, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়কপথের ওপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’র সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা।