রমনা পার্ক-সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বলা হয় ঢাকার ফুসফুস। সবুজে ঘেরা পাখ-পাখালির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত এ উদ্যানে নগরবাসীর কাটে স্বস্তির সময়। অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রকৃতির রূপ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান! রেস্টুরেন্ট বানানোর নামে উদ্যানের অর্ধ-শতাব্দীর শতাধিক পুরনো গাছ কেটে উজাড় করছে গণপূর্ত অধিদফতর।
গত কয়েকদিন ধরে খোদ রাজধানীর বুকে বৃক্ষ হত্যার এই আয়োজন দেখে হতাশা আর ক্ষোভে উদ্বেলিত নগরবাসী। গাছ কাটারে প্রতিবাদে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধম্যে বইছে সমালোচনার ঝড়। এর আগেও কয়েকবার উদ্যানের গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি গাছের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য স্বাধীনতা জাদুঘরও নির্মাণ করা হয়েছে উদ্যানের মাটির নিচে। তাই এ সামান্য রেস্টুরেন্ট বানাতে নির্দয়ভাবে গাছ কাটা মেনে নিতে পারেননি নগরবাসী।
জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবগুলো প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭ টি রেস্টুরেন্ট স্থাপন করার কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। তাদের দাবি, এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও রয়েছে। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী শামিম আখতার জানান, নিয়ম মেনেই গাছ কাটছেন তারা।
নিয়মানুযায়ী নগরে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকতে হবে। রাজধানীতে ২৫ ভাগ বনভূমি নেই উল্লেখ করে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট বানানো ভয়াবহ অপরাধ। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
আরও পড়ুন:
ছিনতাইকারী ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, রিকশা থেকে পরে নারীর মৃত্যু
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত আড্ডা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গাছ কাটার প্রতিবাদে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে শিল্প প্রদর্শনীর। এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী জানান, ইতিহাসের সাক্ষী সবুজের সমারোহ গাছ-গাছালির ছায়াঢাকা পাখিডাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশের নতুন প্রজন্ম, পরবর্তী প্রজন্ম বংশপরম্পরায় শত শত বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেখবে এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্মরণ করবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো চিহ্নিত করেই ঢাকার এই খোলা ময়দানকে উন্মুক্ত রাখা সম্ভব।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাত কাটে ছিন্নমূলদের। এভাবে দয়া-মায়া-হীন গাছ কাটার কারণে তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করে। সেলিম নামে এক পথ কিশোর বলেন, গাছগুলো থাকলে আমাদের মাথার উপর ছাদ থাকে।
এদিকে মঙ্গলবার (৪ মে) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অযথা রেস্টুরেন্ট নির্মাণ ও নির্বিচারে গাছ নিধন বন্ধ করাসহ ৬ দফা সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
সুপারিশে বলা হয় হয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবেশ, তত্ত্বাবধান, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, দৈনন্দিন পরিচালনা বিশ্বমানের করতে হবে। রমনা গ্রিন ধরে রাখতে হবে। উদ্যানের স্থান ও পরিবেশ সংরক্ষণ করতে একটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিতে হবে; উদ্যানে রেস্তোরাঁ, ওয়াকওয়ে কিংবা এ জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বিস্তৃতভাবে অবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং উদ্যানসহ সব ঐতিহাসিক স্থাপনা বা এলাকার উন্নয়নের জন্য নগর পরিকল্পক, স্থপতি, শিল্পী, ইতিহাসবিদ, উদ্যানবিদ, প্রকৌশলী, শিক্ষক, পরিবেশবিদ ও কবি-সাহিত্যিক সব স্টোকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে হবে। যারা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে উন্নয়ন কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন ও প্রয়োজনীয় মতামত দেবেন।
এতকিছুর পরও গাছ কাটা বন্ধ করেনি গণপূর্ত অধিদফতর। সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন করে আরও অনেক গাছের গায়ে ‘লাল চিহ্ন’ দেওয়া হয়েছে; যেগুলোও কাটা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে রাতের আঁধারেও গাছ কেটে নেওয়া হয়।