সৌদি আরবের একটি নির্বাসনকেন্দ্রে কয়েকশ’ বন্দি অভিবাসীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে সৌদি আরব। নির্যাতনের মুখে নির্বাসনকেন্দ্রটিতে বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন। এমন উদ্বেগজনক এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরার বরাতে জানা যায়, সৌদি সরকার সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন চালাচ্ছে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার অধিবাসীদের ওপর। ওই এলাকার জনগোষ্ঠীর মাত্র ১৫ থেকে ১০ শতাংশ হচ্ছে শিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠী। এরাই সরকারের সবচেয়ে বড় টার্গেট এবং দীর্ঘদিন ধরে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রতি শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে এবং অন্তত ৩৪জন তরুণ ও ধর্মীয় নেতাকে ধরে নিয়ে গেছে।
এদিকে এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নির্বাসনকেন্দ্রটিতে বন্দিদের মধ্যে বেশিরভাগই ইথিওপিয়ার নাগরিক। রয়েছেন আফ্রিকা এবং এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকও। মূলত বসবাসের বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণেই তাদের গ্রেফতার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা সৌদির নির্বাসনকেন্দ্রের বেশ কয়েকজন বন্দির সঙ্গে কথা বলেছে। বন্দিরা জানিয়েছেন, সেখানে একটি কক্ষে অনেক অভিবাসীকে গাদাগাদি করে আটকে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীরা প্রায়ই তাদের রাবারের প্রলেপযুক্ত লোহার রড দিয়ে পেটান। গত অক্টোবর ও নভেম্বরের মধ্যে সৌদির নির্বাসনকেন্দ্রটিতে অন্তত তিনজন বন্দি মারা গেছেন বলে জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের শরণার্থী ও অভিবাসী অধিকার বিষয়ক গবেষক নাদিয়া হার্ডম্যান বলেন, বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ সৌদি আরবের কাছে একটি বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অভিবাসীদের কয়েক মাস আটকে রাখার কোনও অজুহাত থাকতে পারে না।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি নাগরিকদের বিরুদ্ধে শাসকবর্গের জুলুম নির্যাতনের ব্যাপারে একদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নীরব রয়েছে অন্যদিকে বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের দাবিদার বৃহৎ শক্তিগুলোও টু শব্দটিও করছে না। শুধুমাত্র হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সৌদি সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলছে ও সমালোচনা করছে। বেসরকারি এসব সংস্থার রিপোর্ট কিংবা তাদের সমালোচনার খুব একটা মূল্য না থাকায় এবং কোনো বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষমতা না থাকায় সৌদি সরকার তাদের সমালোচনায় কর্ণপাত করছে না।