রোমে অনুষ্ঠিত হওয়া জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে বিশ্ব নেতারা স্বশরীরের হাজির হলেও সেখানে উপস্থিত হননি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় তিনি সরাসরি সম্মেলনে যোগ না দিয়ে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। এ নিয়ে দীর্ঘ ২১ মাস ধরে দেশের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকলেন চীনা প্রেসিডেন্ট। এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে তিনি সবশেষ বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন। এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএনআই।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সঙ্গে এখনও দেখাই হয়নি জিন পিংয়ের। অথচ প্রতিনিয়ত তারা একে অপরকে উদ্দেশ্য করে পাল্টাপাল্টি হুমকি-সতর্কতা দিয়ে আসছেন।
এদিকে নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জাতিসংঘের বৈঠকগুলোতে সশরীরে অংশ নিচ্ছেন না শি জিনপিং। সোমবার (১ নভেম্বর) জলবায়ু সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের উচ্চ-পর্যায়ের অংশে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। তবে এতে তিনি কোনো অতিরিক্ত অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেননি: সরকারগুলোকে প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে ও পারস্পরিক আস্থা-সহযোগিতা জোরদার করতে বলেছেন।
নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, আমি যতটা বুঝতে পেরেছি, সম্মেলনের আয়োজকেরা ভিডিও লিংকের মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ রাখেননি।
সম্মেলনে শি জিনপিং সরাসরি অংশ না নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন জলবায়ু পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে, সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট সশরীরে যোগ না দেওয়ার অর্থ হচ্ছে এই দফা আলোচনায় কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত না চীনারা।
গুরুত্বপূর্ণ দুটি সম্মেলনে যোগদান না করার যুক্তি হিসেবে বেইজিং বলছে, জিন পিং দেশের বাইরে গেলে কোভিড প্রটোকল অনুযায়ী তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ফলে তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যহত হবে। আর তিনি যদি কোয়ারেন্টিন প্রটোকল ভাঙেন, তবে তাকে জনগণের সমালোচনা সইতে হবে। কারণ দেশের জনগণ কোয়ারেন্টিন মানলে দেশের প্রেসিডেন্টকেও মানতে হবে।
আরও পড়ুনঃ টোল বাড়ছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছর চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় কংগ্রেস। জিন পিং আশা করছেন, সেখান থেকে তাকে আরও ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হবে। ফলে, প্রথম মেয়াদে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেকে পরিচিত করতে জিন পিংকে যতটা আগ্রহী দেখা গিয়েছিল এখন সেই আগ্রহটা নেই। এখন অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোনিবেশ করছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, উহানে লকডাউন ঘোষণার আগে জিন পিং সবশেষ মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন। সেটা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। তার বিদেশ সফরের ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, তিনি বছরে অন্তত ১৪টি দেশে সফরে যেতেন। যেখানে গড়ে ৩৪ দিন ব্যয় করতেন তিনি। কিন্তু মাঝখানে চীনের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পূর্বঘোষিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ সফর থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন শি জিন পিং।