মোশাররফ হোসেন: ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চ সূচনা ছিল বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয়ের প্রতিরোধ গড়ে তোলার। পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন হল। আওয়ামী লীগের চমকে দেয়া বিজয়ের পর কেন্দ্রীয় সরকার সংসদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে। হোটেল পূর্বাণীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আওয়ামী লীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য জুরির সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নিলেন অসহযোগ আনদোলনের। ৭মার্চ রেসকোর্স মাঠে জনসভা ডাকলেন। এদিকে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বটতলার সমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সবুজ পতাকা উড়িয়ে দিল। সারা দেশের মানুষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। কখন কী হয়? প্রতিবাদে মুখর সারাদেশ।
এরকম অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তাল জনসমুদ্রে ৭মার্চ ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর
ধানমন্ডির ৩২নম্বর বাড়ির নির্দেশনায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ সবকিছু করতে শুরু করে। পাকিস্তান সরকার প্রস্তুতি নিতে থাকে অপারেশন সার্চলাইট এর। প্রেসিডেনট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকা ছেড়ে চলে যান। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তৈরি হয়েছে ২৫মার্চ ঢাকা সহ সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন অসহযোগ আনদোলন দমনে।
এ খবর বঙ্গবন্ধু আগে জেনেছিলেন। তিনি ও সশস্ত্র যুদ্ধের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন ২৫মার্চ মধ্যরাতে। বলেন, এটা আমার শেষ নির্দেশ। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সংগে চূড়ান্ত লড়াই শুরু। যার যা আছে তা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোল।
ইতিপূর্বে বঙ্গবন্ধু তিন ধাপে তাঁর ঘোষণা ইপিআর ওয়ারলেসের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। চট্টগ্রামসহ তড়িত প্রকৌশলীর তৈরি রেডিওতে এ ঘোষণা প্রচারিত হয়। চট্টগ্রাম রেডিওতে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। সারা দেশে তখন ছাত্র ছাত্রী,কৃষক, শ্রমিক, যুবক যুবতী, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ স্বেচ্ছাসেবক দল গড়ে প্রাথমিক ভাবে বাঁশের লাঠি, তীর ধনুক, বল্লম, সুরকি, বন্দুক ও গোলাবারুদ নিয়ে মুক্ত এলাকায় সৃষ্টি করে। বাড়ি, গাড়ি, রেল স্টীমার, লঞ্চ, নৌকায় উড়িয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সবুজ পতাকা।
পুলিশ, ইপিআর, সেনাবাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তা ও সেনা সদস্য, নৌ, বিমান বাহিনীর সদস্যরা একে একে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী জেনারেল টিক্কা খানের নির্দেশে ২৫মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও শিল্প এলাকাসহ সমগ্র শহরের বাতি নিভিয়ে আকাশে সিগন্যাল শেল ছুড়ে নিরীহ মানুষের বাড়ি ঘরে আক্রমণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাসভবন ও হলসমুহে গুলি চালিয়ে হত্যা করে শিক্ষক ও ছাত্রদের। পথে ঘাটে এ তাণ্ডবে মারা যান লক্ষাধিক মানুষ। মোফাজ্জল হায়দার চৌধূরী, ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ডঃ জোতির্ময় গুহ ঠাকুর, ডাঃ ফজলে রাব্বী, মুনির চৌধূরী সহ দেশবরেণ্য শিক্ষকদের। এরকম ঘটনা গণহত্যা। তাই জাতিসংঘের কাছে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার ও গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির দাবি করেছে বাংলাদেশ।
এর প্রামাণ্যচিত্র আছে। এজন্য দেশে দেশে এখন বাংলাদেশ বিশ্বজনমত গড়ে তুলছে ।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল দূরবীণ এর সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ মোশাররফ হোসেন ও সাংবাদিকরা এ আলোর মিছিলে একাত্মতা প্রকাশ করছে।