পঞ্চম শ্রেণি পাস করে শ্রমিক হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি দেন এ এস এম শামসুজ্জামান চৌধুরী বিপ্লব ওরফে দোহা চৌধুরী। সেখানে বিবিএ পাসের ভুয়া সনদ সংগ্রহ করেন। দীর্ঘদিন অবস্থান করায় ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষাও রপ্ত করেন। দেশে ফিরে নিজেকে প্রথমে পরিচয় দিতেন লি সান হো নামে। পরে কখনও নেহাল চৌধুরী, কখনও আদিল, কখনও অনিক। এরপর সরকারি- বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ধনী ব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে দেশি-বিদেশি বড় প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
র্যাব ৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, তার প্রতারণার হাত থেকে বিদেশি নাগরিকরাও রেহাই পায়নি। কোরিয়ার জং নামে এক ব্যক্তিকে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর লোভ দেখিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সে। তার কাজে যেন কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য মিরপুর ডিওএইচএস-এর অফিসে বিভিন্ন সময় বিদেশিদের নিয়েও মিটিং করেছে। এ ছাড়াও জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়েছে। এই চক্রে জড়িত বাকিদের আইনের আওতায় আনা হবে। দোহার কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
১৬ মার্চ রাতে রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী এলাকা থেকে ওয়াও গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম শামসুজ্জামান চৌধুরী বিপ্লব ওরফে দোহা চৌধুরীকে র্যাব গ্রেফতার করে। প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩৮টি মামলা রয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাব আরও জানতে পারে, দক্ষিণ কোরিয়া থাকার সুবাদে তিনি দেশে কোরিয়া ভিত্তিক বিনিয়োগ করার জন্য ওয়াও গ্রুপ অব কোম্পানি নামে নাম সর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। বারিধারার ডিওএইচএসের ৪ নম্বর রোডের ২৮৮ নম্বর বাড়িতে তিনি অফিস খোলেন। এছাড়া প্রতারণার জন্য বনানীর ইস্টার্ন হাউজিং হোটেল ও মিরপুর ডিওএইচএসে আরও দুইটি অফিস খোলেন। অফিস ও প্রকল্প দেখিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে পৌনে ৩ একরের প্লট বরাদ্দ নেন। সেখানে ওয়াও সান ই-এলইডি ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার চুক্তি করেন। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানটির কাছে ওয়াও গ্রুপের প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে।
এছাড়া কোরিয়া ভিত্তিক আরও একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওয়াও গ্রুপ ১৮শ কোটি টাকা বিনিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর করেন যার পুরোটাই ভুয়া। বিভিন্ন প্রকল্পের শেয়ার দেওয়ার নামে চলতো দোহার প্রতারণা। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতেন তিনি। তার প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পায়নি নারীরা। নিজেকে বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয় দিয়ে ঘনিষ্ঠ হতেন তাদের সঙ্গে। কারও সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে ভিডিওচিত্রও ধারণ করতেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীদের বাধ্য করতেন বিভিন্ন প্রভাবশালী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে শয্যাসঙ্গী হতে।