বরিশালে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজার মৃত্যুর অভিযোগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন রেজাউল করিমের বাবা ইউনুস আলী। আদালতের বিচারক মো. আনিছুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারির মেধ্য পিবিআইর একজন পুলিশ পরিদর্শককে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দেন। মামলায় এসআই মহিউদ্দিন ছাড়াও অজ্ঞাত দুই পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় ইউনুস মুন্সী উল্লেখ করেন, ‘রেজাউল করিম রেজা বরিশাল আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী জাকির হোসেন মিন্টুর সঙ্গে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। ২৯ ডিসেম্বর ছেলেকে পুলিশ আটক করেছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে হামিদ খান সড়কে গিয়ে দেখতে পাই রেজাউলকে এসআই মহিউদ্দিনসহ তিন পুলিশ ধরে রোলার দিয়ে পেটাচ্ছিলো। এসময় ছেলেকে ধরার কারণ জানতে চাইলে এসআই মহিউদ্দিন জানায় আপনার ছেলের কাছে মাল পাওয়া গেছে। দুজন লোককে ধরাইয়া দিলে তাকে ছেড়ে দেব। রেজাউলকে তার কথায় রাজি না হলে আমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি।’
‘এসময় এসআই মহিউদ্দিন অনুরোধের তোয়াক্কা না করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে রেজাউলকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন ৩০ ডিসেম্বর ইউনুস মুন্সীর আরেক ছেলে আজিজুল করিম রেজাউলের সঙ্গে বরিশাল আদালতে দেখা করতে গেলে রেজাউল জানায় শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং সারারাত এসআই মহিউদ্দিনসহ তিনজন পুলিশ সদস্য তাকে রোলার দিয়ে পিটিয়েছে। যে নির্যাতনে রেজাউল মল-মূত্র ত্যাগ করে দেয় বলে জানায়। তাকে সারারাত কোনো শীতবস্ত্র ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি এবং কোনো খাবারও খেতে দেওয়া হয়নি। রেজাউল তখন আদালতের হাজতখানায় ঠিকমত দাড়াতে পারছিলেন না। ১ জানুয়ারি কারা কর্তৃপক্ষ ফোন করে বলে আমাদের ছেলে খুবই অসুস্থ। রাত ১২টার পর আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’
মামলায় ইউনুস মুন্সী আরো উল্লেখ করেন, ‘বরিশালের কারা কর্তৃপক্ষ (জেলার ও সুপার বরিশাল) আসামিদেরকে খুনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আসামিদের পরস্পর যোগাযোগে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে ভর্তি করাসহ যাবতীয় নাটকের সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে মামলা করিতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হয়। এ ঘটনার মামলায় উল্লেখিত ৬ জন সাক্ষী ব্যতীত আরো অনেক সাক্ষী রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।’
বরিশাল আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মহসিন মন্টু জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন আহম্মেদকে ক্লোজড করা হয়েছে। সোমবার রাতে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ থেকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।
তিনি বলেন, প্রশাসনিক কারণে তাকে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের তদন্ত চলায় তাকে ক্লোজড করা হয়।
প্রসঙ্গত, বরিশাল আইনজীবী সমিতির শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজাকে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে গ্রেফতারের পর নির্যাতন করায় মৃত্যুবরণ করেন বলে অভিযোগ পরিবারের।
গত শনিবার রাত ১২টা ৫ মিনিটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন রেজাউল।
এ ঘটনার প্রতিবাদে গত রবিবার বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও এসআই মহিউদ্দিনের বাড়িতে হামলা করে।