নিজস্ব প্রতিবেদক : একটা ফ্রেমওয়ার্ক, ধারণাপত্র অথবা একটা দিকনির্দেশনা যদি সামনে থাকে তাহলে যেকোনো কাজ খুব সহজে যারাই ভবিষ্যতে আসুক তারাই করতে পারবে। কারণ আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে।
আমার তো ৭৪ বছর বয়স। কাজেই সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর কতদিন!
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভায় করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নগদ অর্থ প্রণোদনা ও সাহায্যের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো শ্রেণি যেন বাদ না যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করেছি। রিকশার পিছনে যারা পেইন্টিং করে তাদের খোঁজ করে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। যারা যন্ত্রসংগীতের সঙ্গে যুক্ত, যাদের স্থায়ী চাকরি নেই তাদেরও আমরা সাহায্য করেছি। বিভিন্নভাবে আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কাজ করে যাচ্ছি।
‘করোনা মোকাবিলা করে আমরা কীভাবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক গতিটা অব্যাহত রাখতে পারি সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো যারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে দাঁড়ানো। বাংলাদেশের এখন অবস্থা যে শুধু করোনার জন্য সর্বনাশ হচ্ছে সেটা তো না, প্রাকৃতিক দুর্যোগও আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অত্যন্ত সমযোপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা সেগুলি মোকাবিলা করতে পেরেছি। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আশঙ্কা ছিল বিশাল একটা বন্যা বা দীর্ঘস্থায়ী একটা বন্যা দেখা দিতে পারে। এখনও পানি আছে কিছু কিছু নদীতে। কিছু ভাঙনও হচ্ছে। এবার নদী ভাঙনটা ব্যাপক হয়েছে। নদী ভাঙনে কিছু কিছু এলাকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ একেবারে ঘর-বাড়িহারা হয়েছে। তারপরও এই অবস্থা মোকাবিলায় আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা একটা মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছি। বাজেটের ঘাটতি এবার আমরা ৬ শতাংশ ধরেছিলাম। এখানে আমার সিদ্ধান্ত ছিল দরকার হলে ১০ শতাংশ ধরবো। কিন্তু সেটা আমাদের লাগেনি। কাজেই তার মধ্যে রেখেই আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকাটা সচল রাখতে পেরেছি। কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যার একটা ইকোনমিক পলিসি আছে, সেটা মাথায় রেখেই আমরা কিন্তু কাজ করে যাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নদীগুলোর ভাঙন হচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে। নদীগুলো বাঁচানোর জন্য ড্রেজিং দরকার। ডেল্টা প্ল্যানের এটাই লক্ষ্য, আমাদের যতগুলি বড় নদী এবং যা আছে, আমরা ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বজায় রেখে এই বদ্বীপটা রক্ষা করবো। আগামী দিনের নতুন প্রজন্মের জন্য কীভাবে এই দেশটা এগিয়ে যাবে কীভাবে চলবে, সেটাই এখন থেকে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখবো বা আমরা নির্দেশনা দিয়ে রাখবো।
‘সময়ের বিবর্তনে সেটা কিন্তু সংশোধন করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে, পরিশোধন করতে হবে। এটা নিয়ম। সেটাও আমরা জানি। কিন্তু তারপরও একটা ফ্রেমওয়ার্ক, ধারণাপত্র অথবা একটা দিকনির্দেশনা যদি সামনে থাকে তাহলে যেকোনো কাজ খুব সহজে যারাই ভবিষ্যতে আসুক তারাই করতে পারবে। কারণ আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। আমার তো ৭৪ বছর বয়স। কাজেই সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর কতদিন!
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ ঘোষণা দিয়েছে এসডিজি-২০৩০। সাসটেইনবেল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নটা একটা স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সেখানে যে ধারাগুলি আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জন করেছিলাম। এসডিজি বাস্তবায়নেও আমাদের সাফল্য আসবে।
‘করোনার কারণে আমাদের এ কাজগুলি একটু শ্লথ হয়ে গেছে এটা ঠিক। কিন্তু আমরা মনে করি এই দারিদ্র্য যেন আবার মানুষকে গ্রাস করতে না পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছি। পাশাপাশি একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আর্থিকভাবে মানুষ যেন চলতে পারে তার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি। এই কারণে কোনোভাবে সাধারণ মানুষের যেন কষ্টটা না হয়।
তিনি আরো বলেন, কৃষকদের বিশেষ আমরা আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে দিয়েছি। সেখানে কৃষক যেন তার কাজ করতে পারেন। সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। এদেশের কৃষক, শ্রমিক এদেশের সাধারণ মানুষ, এমনকী চাকরিজীবী বা আমাদের সব ধরনের মানুষের কথা বিবেচনা করেই আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।