রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশ ও স্থানীয় দখলদারদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে লালমাটি পলাশনগর ৩ নম্বর এভিনিউয়ের ৪ নম্বর সড়কের উভয় পাশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে নামে ডিএনসিসি। এলাকাটি আটকেপড়া পাকিস্তানী-অধ্যুষিত। এ সময় সড়কের একটি স্থাপনা ভাঙতে গেলে স্থানীয় ব্যক্তিরা ডিএনসিসির ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ডিএনসিসির কর্মকর্তা ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
খবর পেয়ে বেলা সোয়া ১১টার দিকে মেয়র আতিকুল ইসলাম ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক ঘটনাস্থলে আসেন। তারা ঘটনাস্থলে এলে স্বাভাবিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর চেষ্টা করে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু বিহারীদের বাধায় বেশ কয়েক দফা পিছু হটতে হয় উচ্ছেদ অভিযানের দলকে। এ সময় রাস্তার দুই পাশের বাসাবাড়ি থেকেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে বিহারী, স্থানীয় বাঙালী, পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের মধ্যে বহুমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে সিটি কর্পোরেশনের একজন চালকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ইট-পাটকেলের আঘাতে ভেঙ্গে যায় বুলডোজারের গ্লাস। উচ্ছেদ অভিযান কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর পুলিশ এ্যাকশনে নামে। অভিযানের এক পর্যায়ে পুলিশ ৪ নম্বর এ্যাভিনিউয়ের নান্নু মার্কেট মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয়। এ মোড়েই থাকা তিনটি দোকান এবং একটি তিনতলা বাড়ি ভেঙ্গে দেয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অভিযান।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক এক ব্রিফিংয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এখানে বছরের পর পর কেউ কেউ ৩০ বছর পর্যন্ত জনগণের রাস্তা দখল করে আছেন। বিহারীদের নির্দিষ্ট পিলার পর্যন্ত সীমানা রয়েছে। তারা কিন্তু এটা জানে, কিন্তু জেনেও পিলারের বাইরে এসে দখল করেছেন। এটা ৬৮ ফুট চওড়া সড়ক। আমরা তাদের আগেও বলেছিলাম নিজেদের থেকে সরে যেতে। তারা সেটি না করায় আমাদের অভিযানে আসতে হলো। মেয়র জানান, এ অভিযান কিন্তু আমার জন্য না, জনগণের জন্য। এই সড়ক তাদের। যারাই দখল করবে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান হবে। এমনকি সড়ক প্রশস্ত করতে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও উচ্ছেদ করে সড়ক প্রশস্ত করা হবে। সড়ক ও ফুটপাথে অবৈধ স্থাপনার কারণে নাগরিকদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। তাই যত বাধাই আসুক এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হবে।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, বুধবার মৌখিকভাবে দোকান ভাঙ্গার বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। স্বল্প সময়ে দোকান থেকে মালপত্র তেমন বের করা সম্ভব হয়নি। আবার অনেকে অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশন ভাঙ্গা কিংবা উচ্ছেদের বিষয়টি তাদের অবহিত করেনি। এতে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কোন বিকল্প ব্যবস্থা না করে, উচ্ছেদ অভিযান চালানোয় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ। তিনি বলেন, রাস্তার দুপাশে ফুটপাথের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের মাস্টারপ্ল্যানে ৬৮ ফুট রাস্তার কথা বলা থাকলেও, অবৈধ দখলের কারণে রাস্তার পরিধি কমে যায়। রাস্তা দখলমুক্ত করতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পার্শ্ববর্তী নান্নু মার্কেট এলাকায় বুলডোজার, হ্যামারের মতো ভারি সরঞ্জাম এনে রাখা হয়। তখন থেকে আশপাশের সব দোকানপাট বন্ধ করে রাখেন ব্যবসায়ীরা। তখন থেকেই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে শুরু করে। জড়ো হতে থাকেন বিহারী দখলদাররা। মিরপুর বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার মাহতাব উদ্দিন বলেন, সকাল পৌনে ১১টার দিকে অভিযান শুরু হওয়ার আগে ইট-পাটকেল মেরে পালিয়ে যায় দখলদাররা। এতে কেউ আহত হয়নি। পরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উচ্ছদ অভিযানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে পল্লবীতে থমথমে অবস্থা তৈরি হয়। অভিযান শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে পুলিশের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা সংঘর্ষে জড়ান। কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে দেলোয়ার নামের এক বাসিন্দা জানান। এরপরেও কর্মকর্তারা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অংশ হিসেবে মিরপুর-১২ নম্বরের এ ব্লকের একটি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় রাস্তার পাশে থাকা শতাধিক অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।