জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা: স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে কুমিল্লা জেলা। দেশের অন্যতম বৃহৎ এ জেলার সিংহভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষকে উদ্ধার করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। বিতরণ করছেন খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে বন্যাকবলিত জেলার বুড়িচং উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
ট্রাক-পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে বন্যার্তদের উদ্ধারে শতাধিক ছোট-বড় নৌকা, স্পিডবোট ও বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবীদের। তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।
সরজমিনে দেখা গেছে, বুড়িচংয়ের ভরাসার বাজার হয়ে ইছাপুরা বাজারের পাশে একের পর এক বড় ট্রাক, পিকআপ ও ট্রাক্টর আসছে। এসব গাড়িতে ছোট-বড় নৌকা এবং ত্রাণ সামগ্রীর সঙ্গে কিছু স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন।
সেখানে উপস্থিত সেনাবাহিনীর একটি দল এবং ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব স্বেচ্ছাসেবীদের পথ দেখিয়ে বিভিন্ন দুর্গম এলাকার দিকে পাঠাচ্ছেন পানিতে আটকা মানুষদের উদ্ধার এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে বড় একটি নৌকা নিয়ে আসা আজমীর হোসেন নামের এক স্বেচ্ছাসেবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কুমিল্লার পরিস্থিতি দেখে বিবেকের তাড়নায় এসেছি। আমরা ১৪ জনের একটি দল নিজেরা ফান্ড গঠন করে নৌকাটি নিয়ে এসেছি উদ্ধারকাজের জন্য।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে আসা হাসান আহমেদ নামের এক উদ্ধারকর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সকাল ৯টার দিকে এসেছি। এখন পর্যন্ত ৩০টির মতো পরিবারকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে দিয়ে এসেছি।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আসা আসমা আক্তার নামের এক নারী উদ্ধারকর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘুরে ঘুরে যেটা দেখলাম—আসলে ত্রাণের কোনো সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ বিতরণ চলছে। তবে নৌকা বা স্পিডবোট আরও কিছু হলে ভালো হতো। এখন যারা আসছেন, তাদের কাছে নৌকা বা স্পিডবোট নিয়ে আসার অনুরোধ করব।
চাঁদপুর থেকে আসা জুয়েল আহমেদ নামের এক উদ্ধারকর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বেশ কিছু মানুষকে উদ্ধার করে আনলেও অনেক মানুষ তাদের ভিটেমাটি রেখে আসতে চাচ্ছেন না। অনেক অনুরোধ করেও তাদের আনা সম্ভব হচ্ছে না। সেসব মানুষদের নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
অপরদিকে সন্ধ্যার দিকে সেনাবাহিনীর কয়েকটি দল বেশ কিছু স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধারকাজের জন্য ইছাপুরার দিকে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও উদ্ধার কাজ করছেন অর্ধশতাধিক বেসরকারি সংগঠনও।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার বলেন, বুড়িচংয়ে এখন পর্যন্ত দুই লাখের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেসব মানুষদের উদ্ধারে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। তাদের এই মানবিক উদ্যোগ দেশের প্রতিটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।