এনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নিজ নির্বাচনী এলাকায় মামলার আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে। এ সময় গাড়ির শুল্ক নিয়ে মামলার বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই সংসদ সদস্য।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ এর ব্যক্তিগত কৈফিয়ত চেয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, এই মামলায় আমাকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। সঙ্গে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আপিল বিভাগে আপিলের পর সেটি স্থগিত ছিল, আবার কে যেন রিট পিটিশন করেছে। কেন আমাকে এভাবে বিব্রত করা হচ্ছে? মিডিয়ায় বলছে, এই মাসেই আমার সংসদ সদস্য পদ চলে যাবে। আমাকে কোর্ট থেকে কিছু করতে হবে না। সংসদ নেতা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বললে আমি পদত্যাগ করে চলে যাব। আমাকে ফেবার করতে হবে না।
স্পিকারকে উদ্দেশে এমপি হারুন বলেন, আপনি আমাদের সংসদের অভিভাবক। আমরা এখানে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য আছি। ৩৫০ জনের মধ্যে ৩৪২ জনই হচ্ছে মহাজোটের শরিক। আর আমরা ৭ জন বিএনপির, একজন গণফোরামের। আমরা ৮ জন মিলে বিরোধী দল। এখানে সংসদ নেতা আছেন। আমি এমপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল স্পিকারের কাছে একটি আবেদন দিয়েছিলাম। গত বছরের ৪ এপ্রিল আমার এলাকায় আমাকে, আমার বড় বোন ও আমার ভগ্নিপতিকে আসামি করে জাল-জালিয়াতির একটি মামলা দায়ের করা হয়। গত বছর এপ্রিল মাসে করা মামলা দীর্ঘদিন যাবৎ ওইভাবেই পরে থাকে। আজ ১৮ মাস হয়ে গেছে।
এমপি হারুন বলেন, আমি যে বিষয়ের সঙ্গে অপরাধী নই, কেন আমাকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে। আমার বোন প্রায় ষাটোর্ধ বয়সের, ভগ্নিপতির বয়স ৭০ বছর। এক মাস পর পর তাদের হাজিরা দিতে হচ্ছে। আমি বার বার তাগাদা দিচ্ছি, আমি কোনো ফেবার চাই না। যা তদন্ত করে পাও তুমি রিপোর্ট দাখিল কর। এই বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টিতে নিয়ে আসছি। ওনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। দুঃখটা এই কারণে, গতকাল যখন অধিবেশন শেষ করে গেলাম, বিকাল ৪টার দিকে তখন আমার জেলার একজন এসআই বলল স্যার আপনার মামলাটি থানা থেকে সিআইডিতে স্থানান্তর করে দিচ্ছি। ১৮ মাস ধরে কেন মামলাটি ফেলে রাখল? এটি তো ১৮ মাস আগেই সিআইডিতে দিতে পারত। এটা তো সিআইডিতে দেয়ার মতো মামলা নয়।
তিনি বলেন, আমি যে এলাকার এমপি, আমি আইন-শৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা, সেখানে আমি প্রতিকার পাব না? আমাকে কেন হয়রানি করা হবে। একটি মামলা ১৮ মাস ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে? কেন? যে তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি ঝুলিয়ে রেখেছে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এমপি হারুন বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ চতুর্থ সংসদে এমপিদের জন্য কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং গাড়ি আমদানির সুযোগ দিয়েছিলেন। আমার নামে ১/১১ সময় একটি মামলা হয়েছিল। ২০০৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলা দিল। অথচ গাড়ি হস্তান্তর হয়নি। আপিল বিভাগে আবেদন করার পর মামলা স্থগিত হল। এমপি হওয়ার পর মামলাটি উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত হয়ে নিম্ন আদালতে গেল। আমার নামে ৫ বছরের জেল এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করল। আপিল করাতে জামিন দিল। সর্বোচ্চ আদালতে আপিল বহাল করেছে। আবার কে যেন রিট পিটিশন করেছে।
এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হারুন বলেন, আপনি এমপিদের সুযোগ বাতিল করে দেন। আমি কেন বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে থাকব। কেন আমাকে মিডিয়াতে উত্তর দিতে হবে, এমপিশিপ আগামী মাসেই চলে যাবে। সংসদ নেতা আপনি বলে দেন, কোর্ট থেকে বলা লাগবে না, আমি কালকেই সংসদ থেকে পদত্যাগ করে চলে যাব। আমি রিজাইন দেব। পরিষ্কারভাবেই বলতে চাই।