মোশাররফ হোসেন: খেলার মাঠে জয় পরাজয়, কিংবা সংগঠনের নির্বাচন জয় পরাজয় মেনে নিয়ে এগিয়ে চলার আদর্শ সংগঠক তথ্য নিবেদিত ক্রীড়া সংগঠক আলহাজ শাহেদ অজগর চৌধূরী চলে গেলেন দূরে বহু দূরে। আকাশে ধ্রুব তারা হয়ে জলবেন।
কেমন আছ তুমি, চট্টগ্রামের জন্য কিছু করোনা। বড়ো উদার ছিলেন তিনি। ঢাকায় দেখা হলে আপনজনের মত এভাবে কথা বলতেন আমার সংগে। এম এ আজিজ সেটডিয়াম পেভিলিযান কাজ সমাপ্ত করার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিবকে একটু বলতে হবে। বলবো, চিন্তা করবেন না। কাজ শেষ হবার পর ভীষণ খুশি হয়ে হেসে দিলেন। যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। আজ তিনি দুর আকাশে ধ্রুব তারা হয়ে গেলেন।
চট্টগ্রামের অন্যতম ক্র্রীড়া পরিবারের সন্তান। এসটার সামার ক্রিকেট, যুব ক্রিকেট এর আয়োজক শাহেদ +রাশেদ আজগরের নাম ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে বিদেশে। ফুটবলে যেমন ছিল আজিজ শিল্ড। জাতীয় ক্রিকেট দলে নোভেল,মাসুম সূচনা করতো। নান্নু, আকরাম, শহীদ, মোরশেদ খেলতো।তখন যুব ক্রিকেটেও ছিল চট্টগ্রামের ক্রিকেটার । এককথায় চট্টগ্রাম ছিল ক্রিকেটারদের সূতিকাগার।
আমরা জমজমাট ক্রিকেট আসরের সংবাদ কাভার করতে গিয়ে হিমশিম খেতাম। মেট্রোপলিটন ক্রিকেট মাতিয়ে রাখত। চট্টগ্রামে খেলতে আসত আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, কোলকাতা ইসট বেংগল, মোহামেডান, মোহনবাগান। আজ সবই অতীত ।শাহেদ ভাই এথলেটিকস করতেন ।চাকতি নিক্ষেপে পদক জিতেছেন বহু বার ।সবই আজ সৃতি ।
শাহেদ আজগর চৌধূরী বৃটিশ আমল, পাকিস্তান আমল থেকে চট্টগ্রামের ক্রীড়াংগণে নিবেদিত ক্রীড়া সংগঠক কালিপদ সিংহ, রফিক আহমেদ চৌধূরী, জয়নাল আবেদীন, ডাঃ কামাল আহমেদ খান , আবদুর রহিম মিযা, আবু তাহের পুতুর মত সংগঠকদের কাছ থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এস এম কামাল, অধ্যাপক শায়েস্তাখান,দস্তগীর চৌধূরী সেলিম আবেদীন চৌধূরী, কামাল উদ্দিন, দিদারুল আলম চৌধূরী, হাজী রফিক আহমেদ, জালাল আহমেদ,আলহাজ মনজুরুল আলম মনজু, সেলিম আহমেদ, সালমান ইসপাহানী, মোজামমেল হক , আবদুল হাকিম, সুলতান আবেদীন চৌধূরী, শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধূরী, সৈয়দ আবুল বশর, হাফিজুর রহমান,বর্তমান সংগঠক আ জ ম, নাসির উদ্দিন, আলী আব্বাস, আবদুল হান্নান আকবর, সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীম, সিরাজ উদ্দিন মোঃ আলমগীর, সহ সকলের সংগে কাজ করেছেন। বলা যায় ৬০বছর ছিলেন ক্রীড়াংগণে।
তিনি স্ত্রী, ৫ কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমের নামাজে জানাজা বিকাল সাড়ে ৩টায় এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ও বাদ আছর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, রাউজান নিবাসী শাহেদ আজগর চৌধুরী ৬ অক্টোবর অসুস্থবোধ করলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
রাউজানের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ফকির মিয়ার সন্তান শাহেদ আজগর চৌধুরী ছাত্র জীবনে চট্টগ্রাম কলেজের জিএস ছিলেন। পড়াশুনায় তুখোর শাহেদ আজগর চৌধুরী খেলাধুলায় ছিলেন দুর্দান্ত। একাধারে ক্রিকেট, ফুটবলসহ ছিলেন স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এথলেট। বাংলাদেশে সাড়া জাগানো ক্রিকেট আসর স্টার সামারেরও আয়োজক তিনি। খেলেছেন স্টার ক্লাব, মোহামেডানের মত ক্লাবে। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষে নাম লেখান ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে। সেখানেও সাফল্য পান। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় টানা একযুগ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেন। ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব।
শাহেদ আজগর চৌধূরীর মৃত্যুতে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থা, আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সসহ বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং পরিবারের সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।