করোনার ঊর্ধ্বগতিতে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের টানা লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউন বিষয়ে সরকারি আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সরকার। জরুরি সেবা বলতে যেগুলো বুঝায় সেগুলো ছাড়া বাকি সবকিছুই পরবর্তী নির্দেশ না আশা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
তবে লকডাউনের চলাকালিন সাধারণ মানুষের চলাচল বেশ উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য করা গেছে। কেউ অফিসগামী, কেউ জরুরি সেবা নিতে, আবার নানাকাজে পায়ে হেঁটে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকালেও কিছু গণপরিবহন রাস্তায় যাত্রী উঠাতে দেখা গেছে। গণপরিবহণ ছাড়া অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলেছে সড়কে। নজর রাখছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও। সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে শাহবাগে লকডাউনের নিয়ম অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করতেও দেখা গেছে। ফলে সব মিলিয়ে এমন ঢিলাঢাল লকডাউনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে জনসাধারণদের মাঝে।
আরও পড়ুন: লকডাউন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার
রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেইট, মহাখালী, কাওরানবাজার ও শাহবাগ এলাকায় যানজট লক্ষ্য করা গেছে। বাড্ডা থেকে মালামাল নিতে কাওরানবাজার আসেন মুখলেসুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয় বিজয় স্মরণীতে। তিনি বলেন, অনেকই এখন কাজ করছে। কয়জনে মানে লকডাউন। শুধু গাড়ি বন্ধ, মানুষ তো প্রয়োজনে ঠিকই বাইরে যাচ্ছে। আমার কাজ আছে যেকোনভাবে আমাকে বের হতে হয়েছে। লকডাউনে গরীবদের কষ্ট ছাড়া আর কিছু নয়।
আরেকজন সাদ্দাম হোসেন বলেন, একদিকে খুলে অন্যদিকে সব বন্ধ রেখে তো লকডাউন হয় না। এখন যারা বইমেলায় যেতে চান কিন্তু ব্যাক্তিগত গাড়ী নেই তাহলে তারা কীভাবে যাবেন মেলায়।
স্কুল পড়ুয়া রায়হান আর মুন্না দুই বন্ধু ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোড দিয়ে হাঁটাহাটি করছে। গত বছর লকডাউনে ঘর থেকে বের না হলেও এবার তাদের কাছে লকডাউন মনে হচ্ছে না। কেনো মনে হচ্ছে না প্রশ্ন করা হলে মুন্না বলেন, গতবার অনেক ভয় ছিল বাবা-মা বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। আজকে লকডাউন নিয়ে বাবা-মা কিছু বলেনি। আমাদের কাছেও লকডাউনের মতো মনে হচ্ছে না।
এদিকে সকল ধরণের খাবার হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া নিষেধ রয়েছে। প্রয়োজনে পার্সেল নিয়ে বাসায় খেতে বলা হয়েছে। অথচ খোলা জায়গায় ঝট বেধে একসঙ্গে অনেক মানুষ খাওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে কেউ কেউ খোলা জায়গায় অনেকে মিলে আড্ডা দিচ্ছেন এমন দৃশ্য মিলেছে যেখানে-সেখানে।
খামার বাড়ির মোড়ে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য কেনার কথা বললেও বাস্তবে তার উল্টো স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছে।
সোমবার সকাল থেকে রাজধানীতে যারা মাস্ক পরছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে র্যাব। এ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
তিনি বলেন, আজ থেকে র্যবের পক্ষ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া করোনা সংক্রমণ রোধে সাধারণ মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, মাস্ক ও হ্যান্ড-স্যানিটাইজার বিতরণ করবে র্যাব। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের সুযোগ নিয়ে কোনো অসাধু চক্র যেন জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য আমরা মাঠে থাকব। কোনো অসাধু ব্যক্তি বা চক্র এ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে যেন কোনো ধরণের অবৈধ কাজ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।
এদিকে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলে লকডাউনের সময় বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের হারের ওপরই নির্ভর করবে লকডাউন বাড়বে কী না।’ তবে লকডাউনের সময় বাড়ানো হবে কিনা আগামী বৃহস্পতিবার সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।