1. doorbin24bd@gmail.com : admin2020 :
  2. reduanulhoque11@gmail.com : Reduanul Hoque : Reduanul Hoque
February 12, 2025, 7:52 am
সংবাদ শিরোনাম :
বাংলাদেশের সংস্কার কাজে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা পুনর্ব্যক্ত এ‌প্রিলে থাইল্যান্ডে দেখা হবে ইউনূস-মোদির রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের দাবি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা বাংলাদেশের জনগণকে অগ্রাধিকার দিতে ভারতের প্রতি শশী থারুরের আহ্বান আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু ডিগ্রি পেতে কানাডা পাড়ি, তারপর ‘উধাও’ ২০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে ততই আমাদের মঙ্গল: সুপ্রদীপ চাকমা রঙ করে ঢেকে দেওয়া হলো শেখ মুজিবুরের ‘সবচেয়ে বড়’ ম্যুরাল কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকতে চাই না: সিইসি সোনা পাচারের সময় বেবিচকের নিরাপত্তাকর্মী গ্রেপ্তার

দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা: অনিশ্চয়তায় কৃষি খাত

  • প্রকাশিত : সোমবার, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
  • 17 বার পঠিত

 

# সবজির  বাজারে বড় সিন্ডিকেট

# ৮ টাকায় কিনে বিক্রি ৩০ টাকা

# বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই দৃশ্যমান উদ্যোগ

#আড়তদারদের দুষছেন কৃষকরা

 

বরিশাল প্রতিনিধি: অ্যাই পানির দরে শসা-খিরাই। শসা-খিরাই ৩০ টাকা, ৩০ টাকা।’—হ্যান্ডমাইকে ক্রেতা ডাকছিলেন ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা ময়নাল গাজী। প্রতিদিন সকালে বরিশাল শহরের রূপাতলী বসুন্ধরা হাউজিংয়ে এভাবেই ক্রেতা আকৃষ্ট করেন। এসব সবজি তিনি এনেছেন কীর্তনখোলা নদী লাগোয়া পাইকারি বাজার থেকে। 

শীতকালে শসা-খিরাই প্রতি কেজি ৩০ টাকা দামের বিবেচনায় অতিরিক্ত—বলতেই এক ক্রেতার ওপর চটলেন মাঝবয়সী ময়নাল। তার দাবি, ‘যেইদিন বেশি দামে কিনি হেইদিন ব্যাঁচতেও অয় বেশি দামে। কাস্টমারে তো বোঝে না। ৭০ টাহার শসা নামছে ৩০-এ। হ্যারপরও হস্তা খোঁজে? ৩০ টাহাও অতিরিক্ত হইলে শসা-খিরাই খাওন লাগবে না।’

এই খুচরা বিক্রেতার ভাষ্য কেজিতে চার-পাঁচ টাকা লাভ করেন। অর্থাৎ ২৫-২৬ টাকায় কিনে ৩০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। অনেক সময়ে পঁচে যায়, ভেঙে যায়। সেই লোকসানও বহন করতে হয়।

ঠিক কত দামে বিক্রি হয় শসা ও খিরাই জানতে খোঁজ নেওয়া হয় পাইকারি বাজারে। আড়ৎদাররা জানান, চাষিদের সঙ্গে তারা কমিশনে ব্যবসা করেন। তা ছাড়া যেদিন বাজারে বেশি আমদানি হয় সেদিন দাম কমে যায়, যেদিন কম পণ্য আসে সেদিন দাম বাড়ে।

 

উৎপাদনের বিভাগীয় পরিসংখ্যান:

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বরিশাল বিভাগে ২০২৩-২৪ মৌসুমে শসার মোট আবাদ হয়েছে ২,৫৪৬ হেক্টর। ফলন পাওয়া গেছে ৪৭ হাজার ৪২ মেট্রিক টন। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় ১৪৫ হেক্টরে ১৮১১ মেট্রিক টন, পিরোজপুরে ৯৬ হেক্টরে ১২০০ মেট্রিক টন, ঝালকাঠিতে ৮৫ হেক্টরে ৯৭৫ মেট্রিক টন, পটুয়াখালীতে ২০৬ হেক্টরে ৩০৯০ মেট্রিক টন, বরগুনায় ১৯৭ হেক্টরে ৩,৭৪৩ মেট্রিক টন ও ভোলায় ১,৮১৭ হেক্টরে ৩৬ হাজার ৫৯৩ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি গড়ে প্রায় ১৯ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে।

ওই মৌসুমে খিরাই আবাদ হয়েছে, ১০৮৭ হেক্টর। ফলন পাওয়া গেছে ১৭ হাজার ৯০৭ মেট্রিক টন। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় ১৫৪ হেক্টরে ১,৬২৭ মেট্রিক টন, পিরোজপুরে ৮১ হেক্টরে ৯৭২ মেট্রিক টন, ঝালকাঠিতে ৭১ হেক্টরে ৮২৭ মেট্রিক টন, পটুয়াখালীতে ৩২০ হেক্টরে ৪,৮০০ মেট্রিক টন ও ভোলায় ৪৬১ হেক্টরে ৯,৬৮১ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি গড়ে সাড়ে ১৬ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গত মৌসুমে মোট সবজি আবাদ হয়েছিল ৫৪ হাজার ৯০৩ হেক্টর জমিতে। চলতি (২০২৪-২৫) মৌসুম শেষ না হওয়ায় পুরোপুরি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ৪৭ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। মৌসুম শেষ হলে গত বছরের আবাদের পরিমাণ এবার ছাড়িয়ে যাবে। যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে, শসা ও খিরাই গত বছরের তুলনায় বেশি পাওয়া যাবে।

 

নুন আনতে পান্তা ফুরায় চাষিদের:

বরিশালে সবজি উৎপাদনে অন্যতম ভূমিকা রাখে সদর উপজেলার চরলড়াইপুর। লাহারহাট ফেরিঘাট থেকে নদী বিচ্ছিন্ন এই চরে কয়েকশ হেক্টর জমিতে প্রায় সারা বছরই নানা ধরনের সবজি চাষ হয়। এসব সবজির মধ্যে অন্যতম শসা ও খিরাই। চরে নামতেই চোখে পড়লো নানান বয়সী নারী-পুরুষ সবজির খেতে কাজে ব্যস্ত। খেতের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে ট্রলার চলে এসেছে দেখে চাষি সাদ্দাম হোসেন একটু বেশি ব্যস্ত। বস্তা ভর্তি খিরাই তুলে দিচ্ছেন ট্রলারে।

সাদ্দাম বলেন, ফলন অনেক ভালো হয়েছে। চরের জমিতে চাষের সুবিধা হলো সার-ওষুধ খুব বেশি দিতে হয় না। বর্ষার জোয়ারে যে পলি পরে তাতেই উর্বরতা বাড়ে। চাষ ভালো হলেও দাম ভালো পাই না।

তিনি জানান, খেত থেকে খিরাই তুলে শ্রমিক দিয়ে ট্রলারে ভরে, ট্রলার ভাড়া দিয়ে বরিশাল সিটি মার্কেটে পৌঁছে দিয়ে আসি। সব খরচই আমাদের। আড়ৎদার শুধু ট্রলার থেকে নামিয়ে তার দোকানে সাজিয়ে রাখেন। সেখান থেকে খুচরা ক্রেতারা কিনে নিয়ে বিক্রি করেন।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, বর্তমানে ৭/৮ টাকা কেজি দরে খিরাই দিচ্ছি আড়তে। এই মৌসুমে একবার চড়া দাম পেয়েছিলাম ১০/১২ টাকা কেজি। গত বছর ছিল আরও কম।

‘মোট কতা মোরা আছি না খাইয়া। ছোডকালে ময়-মুরুব্বি শ্লোক কইতো, নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এহন কেরমে কেরমে টের পাই। কষ্ট কইরা ফলন ফলাই, মধু নিয়া যায় মাঝের মাইনসে।’

সাদ্দামের কথায় যুক্ত হন আরেক চাষি ইব্রাহিম মিয়া। ভোলা ইলিশায় বাড়ি হলেও এই চরে জমি ভাড়া নিয়ে কৃষিকাজ করেন তিনি। ছোট শসা বাদ দিয়ে মান সাইজের শসা বস্তায় রাখছিলেন। সাদ্দামের মাল নেওয়া হলে তার খেতের কাছে আসবে ট্রলার।

ইব্রাহিম মিয়া বলেন, প্রতি বস্তার ভাড়া ৬০ টাকা। দিনে তুলে দিনেই মাল পৌঁছে দিতে হয়। না হলে আড়তে নেয় না। আড়তে শসা আর খিরাই একই দামে কিনে নেয়। প্রতি কেজি ৭/৮ টাকা। তারা কত টাকায় খুচরা বিক্রি করে তা আমরা জানি না। শুনেছি বাজারে এখনো ৩০/৩৫ টাকায় শসা-খিরাই বিক্রি হয়। বাজারে যদি ঠগবাজি না থাকতো, চাষিরা যদি ন্যায্য দাম পেত তাহলে আমরা আরেকটু ভালো থাকতাম।

তিনি বলেন, আমাদের চরে অনেক মানুষ আছেন যারা ঋণের চাপে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কষ্ট করে জমি চাষ করে বাজারে দাম না পেয়ে নিঃস্ব হয়ে যাই।

তবে আড়ৎদাররা জানিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। সিটি পাইকারি মার্কেটের আড়ৎদার আমিনুল ইসলাম শুভ বলেন, আমরা চাষিদের সঙ্গে কমিশনে ব্যবসা করি। এতে আমাদের উচ্চ লাভ হয় না। বর্তমানে সিটি মার্কেটে শসা-খিরাই বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা কেজিতে। আনুপাতিক হার এমন চাষিদের ১ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করে দিলে আমাদের ৫০ টাকা থাকে। অধিকাংশ আড়ৎদার এভাবে ব্যবসা করেন। কেউ কেউ হয়তো ব্যাতিক্রম আছেন। আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে কে কত টাকায় বিক্রি করেন তা আমাদের জানা নেই।

আরেক আড়ৎদার রাজীব বলেন, পচনশীল পণ্যে দাম স্থির থাকে না। বেশি পণ্য আসলে দাম কমে। কম পণ্য থাকলে দাম বাড়ে। আমরা চাষিদের কাছ থেকে দর কষাকষি করে কিনে রেখে কিছু লাভ রেখে বিক্রি করি। দাম বাড়ায় খুচরা বিক্রেতারা।

বরিশাল বিভাগীয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ২৩ জানুয়ারির বাজার দরের তথ্য বলছে শসা ও খিরাইয়ের সর্বোচ্চ মূল্য ২৫ টাকা কেজি ও সর্বনিম্ন ছিল ২০ টাকা।

 

কৃষি অধিদপ্তর যা বলছে:

বিভাগীয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুশফিকুর রহমান বলেন, কৃষক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে দরদামের বড় ধরনের তারতম্য আমরা দেখি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকার কাজ করছে। এর আগে দেখেছেন আলু, ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছিল। সরকার ওএমএস চালু করায় সিন্ডিকেট ভেঙেছে। এখন তুলনামূলক কম দামেই পাচ্ছেন ক্রেতারা। তেমনি শসা ও খিরাইয়ের মূল্যে উল্লম্ফন ঠেকাতে আমরা কাজ করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
© All rights reserved © 2024 doorbin24.Com
Theme Customized By Shakil IT Park