# ড. ইউনুসের ভূয়সী প্রশংসা রামোস হোর্তার
# বাংলাদেশিদের পূর্ব তিমুরে বিনিয়োগের আহ্বান
# বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনীতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর প্রত্যয়
# বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সহায়তার আশ্বাস
# ভিসা অব্যাহতি চুক্তি ও ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকায় চারদিনের সফরে এসেছেন পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হোর্তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিমানবন্দরে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা দেয়া হয়।
চারদিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে কম্যব্যস্ত সময় কেটেছে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তার । এদিন সকালে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রেসিডেন্ট হোর্তা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দুই শীর্ষ নেতা একান্তে কিছু সময় আলাপ করেন। পরে প্রতিনিধিদল নিয়ে বৈঠকে বসেন ইউনূস-হোর্তা। বৈঠক শেষে তারা যৌথ প্রেস কনফারেন্স করেন। এরপর দুই শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি ও ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শতাধিক ডিগ্রি রয়েছে, যা বিস্ময়কর। পৃথিবীতে সম্ভবত তিনি একমাত্র নেতা, যিনি এত সম্মানিত এবং এমন শক্তশালী একাডেমিক যোগ্যতা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রসঙ্গে রামোস হোর্তা বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত নেতা, যিনি এখনও সক্রিয়ভাবে অফিসে কাজ করছেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে নেলসন ম্যান্ডেলা, জন এফ কেনেডি, মহাত্মা গান্ধী, ফিদেল কাস্ত্রো এবং চে গুয়েভারের মতো বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে তুলনা করেন।
রামোস হোর্তা বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, খুবই ভাগ্যবান যে এমন একজন নিরহংকার ও বিনয়ী মানুষ দেশের নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি আপনাদের তরুণদের সঙ্গে কাজ করছেন দেশের পরিবর্তনের জন্য।
বাংলাদেশ ও পূর্ব তিমুরের জনগণের ভোগান্তির ইতিহাস প্রায় একই রকম উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দৃঢ়চেতা, পরিশ্রমী, সৃজনশীল ও সফল।
অধ্যাপক ইউনূসকে তার ভাই, বন্ধু ও পরামর্শক উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশ সরকারকে আতিথেয়তার ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এখানে এসে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন।
এর আগে কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ও পূর্ব তিমুর। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠায় সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে এই চুক্তি সই হয়।
ভিসা অব্যাহতি চুক্তির আওতায় দুই দেশের কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই একে অপরের দেশে প্রবেশ, অবস্থান এবং প্রস্থান করতে পারবেন।
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কে সূচনা হয়েছে। সামনের দিনে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনীতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে আগ্রহী।’
এ সময় পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট বলেন, সামনের দিনে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনীতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে আগ্রহী।
সফররত দেশটির প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পূর্ব তিমুরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে রামোস হোর্তা বলেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করতে পারি এবং বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে পূর্ব তিমুরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
তিনি বলেন, আগামী বছর আমরা আসিয়ানের সদস্য হবো এবং সেই সঙ্গে ৭০০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর অঞ্চলের অংশ হয়ে উঠব। আগামী বছর পূর্ব তিমুরে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি জিডিপি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রেসিডেন্ট রামোস আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ তার দেশের উন্নয়নে অংশীদার হবে।
এদিকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘কিছু দিনের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) সদস্য হবে পূর্ব তিমুর। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেশটি আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করবে বলে প্রেসিডেন্ট রোমেস আশ্বস্ত করেছেন।’
জানা যায় সফররত প্রেসিডেন্ট আজ সোমবার বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া এদিন তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। তিনি বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।
প্রেসিডেন্ট হোর্তা ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএস) অডিটরিয়ামে ‘দা চ্যালেঞ্জেস অব পিস ইন দ্যা কনটেম্পোরারি ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক থিমের ওপর বক্তৃতা করবেন। পরে তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও তরুণ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন। একই দিন বিকেলে তিনি বাংলাদেশের ছাত্র এবং তরুণদের উদ্দেশ্যে তার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিজ্ঞতা, তার নেতৃত্ব, দীর্ঘ সংগ্রামে জনগণের ভূমিকা ও স্বাধীনতা পরবর্তী তিমুর লেস্তের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে সম্যক বক্তব্য রাখবেন।