মোঃ আনিসুর রহমানঃ বাঘের থাবায় ক্যাঙ্গারু লন্ডবন্ড বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে সর্বনিম্ন রানের লজ্জা ‘উপহার’ দিল বাংলাদেশ। টাইগারদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন ৬২ রানে অল-আউট হলো স্ট্রেলিয়া। এর আগে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাউদাম্পটনে ৭৯ রানে অল-আউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, টি-টোয়েন্টিতে এতদিন সেটিই ছিল তাদের সর্বনিম্ন স্কোর।
সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচের শেষ টি-টোয়েন্টি ১২৩ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৩.৪ ওভারে ৬২ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ দলনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যা বললেন
‘অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের জন্য ছেলেরা ক্ষুধার্থ ছিল। তারা তাদের সেরাটা দিয়েছে। আমার আমাদের পরিকল্পনায় দুর্দান্তভাবে সফল হয়েছি। অবশ্যই এই উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশ কঠিন। তবে স্কোর ১২০-১৩০ এ নিয়ে যেতে আমরা সফল হয়েছি। দলের সব বোলার ভালো বল করেছে। ছেলেদের পারফরম্যান্সের এই উন্নতিটা দারুণ হয়েছে। জিম্বাবুয়ের পর ঘরের মাঠের এই সিরিজেও আমাদের ফাস্ট বোলার ও স্পিনাররা কঠোর শ্রম দিয়েছে। সংকটের সময়েও তারা তাদের মেজাজ ঠিক রেখেছে, এবং এটাই টি-টোয়েন্টির বড় বিষয়। এখানে সব সময় চাপে থাকতে হয়। গোটা দলের সবাই সেরাটা ঢেলে দিয়েছে।’
‘সিরিজ শুরুর আগে আমি দলের বোলারদের বলেছিলাম যে, এই সিরিজে ভালো করার প্রধান দায়িত্ব বোলারদের। বোলারাই ম্যাচ জেতাতে পারে এখানে। তারা তাদের দায়িত্ব চমৎকার নিভিয়েছে। ছেলেরা যেভাবে লড়াই করেছে তা সত্যি অসাধারণ ও উপভোগ্য। আমরা সবসময়ই অনুভব করে আসছি যে, আমরা খুব ভালো দল। বাংলাদেশে আসা বিশ্বের যে কোনো দলকে আমরা চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারি। সিরিজ জিততে পারি। যদিও র্যাংকিং সে কথা বলছিল না। হৃদয়ের ভেতর থেকেই আমি সবসময় অনুভব করি যে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমরা দুর্দান্ত দল হতে পারি।’
রেকর্ড জয়ের পর যা বললেন সাকিব
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড ও তারকা ব্যাটসম্যান অ্যাস্টন টার্নারকে আউট করে বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব।
ক্রিকেট বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সাকিব ব্যাট হাতে ১ হাজার রান সংগ্রহের পাশাপাশি শিকার করেন ১০০ উইকেট।
আর এই কৃর্তী গড়ায় সতীর্থদের ধন্যবাদ জানিয়ে সাকিব বলেন, আমি এখনও খেলা উপভোগ করছি, এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার সতীর্থদের ধন্যবাদ, তাদের সাহায্য ছাড়া এই অর্জন সম্ভব হতো না।
সবশেষ জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটের সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ে দেশে ফিরে বাংলাদেশ। দেশে ফেরার মাত্র সপ্তাহ খানেক ব্যবধানে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারায় টাইগাররা।
অস্ট্রেলীয় দলের অধিনায়ক ম্যাথিউ ওয়েড
নিজেদের টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় পড়ল অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের সেই ব্যর্থতার কথাই জানালেন অস্ট্রেলীয় দলের অধিনায়ক ম্যাথিউ ওয়েড।
বললেন, ‘এটা বলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে যে, আমাদের আরো পজিটিভ খেলার কথা ছিল। এখান থেকে অনেক কিছু শিখার আছে আমাদের। গত কয়েক বছর ধরে আমি খেলছি, কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য এমন দুর্বোধ্য কন্ডিশন আগে দেখিনি। দলের নবীনদের জন্য এ সফর বেশ শিক্ষণীয়। আসলে দুর্ভাগ্যক্রমে গোটা সিরিজটাই আমাদের পক্ষে গেল না। দলের ক্রিকেটাররা কম খেলেছে এমন অযুহাত দেখাতে চাই না। আমরা তো এই সফরের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে দারুণ খেলেছি। আমরা আসলে পারিনি। সমস্ত প্রশংসার দাবিদার বাংলাদেশই। তারাই ভালে খেলেছে। আমাদের স্পিনাররা বেশ ভালো বল করেছে, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেভাবেই হোক এই উইকেট থেকে ১১০-১২০ এর বেশি রান বের করে নিয়েছে। মিচেল মার্শ এই উইকেটে রান পাওয়ার চেষ্টায় সবসময়ই সংগ্রাম করেছে। আমরা আজ একেবারেই ভালো বল করতে পারিনি। আসলে আমরা যদি বোলিংয়ে তাদেরকে ১০-১৫ রান কম দিতে পারতাম, আর বাটিংয়ে ১০-১৫ রান বেশি করতে পারতাম তাহলে এতো বড় ব্যবধানে হারতাম না। এমন কন্ডিশনে খেলা বড় একটা চ্যালেঞ্জ। যদিও এই চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্যই বেশি, বাংলাদেশের জন্য নয়। বাংলাদেশ দল খুবই ভালো খেলেছে। তাদের জন্য শুভকামনা।’