1. doorbin24bd@gmail.com : admin2020 :
  2. reduanulhoque11@gmail.com : Reduanul Hoque : Reduanul Hoque
June 15, 2025, 11:57 pm

বাঙালির স্বপ্নপূরণের ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ শুরু

  • প্রকাশিত : শুক্রবার, মার্চ ১, ২০২৪
  • 78 বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: অগ্নিঝরা মার্চ— বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়।
১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে, তার গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনের পথ ধরে ৬৯’র গণ অভ্যুন্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিকে স্পর্শ করে। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহীনে লালন করা তখনো অধরা ‘স্বাধীনতা’র দুর্বার আকাঙ্খা যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
‘তুমি যে সুরের আগুন ছড়িয়ে দিলে, মোর প্রাণে সেই আগুন ছড়িয়ে গেলো সবখানে, সবখানে’- কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্রষ্ঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ স্বাধীনতার অমর কাব্যের এই পঙিটি বাঙালি জাতিকে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় বলীয়ান করে তোলে।
এই মার্চেই বাঙালি পাকিস্তানকে বিদায় জানায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে কামান, মর্টার, রাইফেল নিয়ে অতর্কিতে ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু তখন গ্রেপ্তার হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তার সর্বশেষ বাণী বাংলার মানুষের কাছে পাঠান এই বলে, ‘এই হয়ত তোমাদের জন্য আমার শেষ বাণী। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। যে যেখানেই থেকে থাক, যে অবস্থায়ই থাক, হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তোল। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে, যতদিন পর্যন্ত না দখলদার পাকিস্তানিদের শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটিতে থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষাপট শুরু হয় মার্চের প্রথম দিন থেকে। এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেডিও পাকিস্তানের সকল কেন্দ্রে একযোগে প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণা প্রচার করা হয়। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায়, দেশ আবার কঠোর সামরিক ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে এবং সামরিক আইন কঠোর করে ভেতরে ভেতরে কোনো গভীর প্রস্তুতি চলছে। দুপুরে রেডিওতে যখন জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করার সংবাদ প্রচারিত হচ্ছিল, তখন ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানরত পাকিস্তান ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে এক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ধারা বিবরণী চলছিল। তাই মাঠের ক্রিকেট দর্শকরাই রেডিওতে প্রথম ইয়াহিয়ার এই ঘোষণা শুনতে পান।
রেডিওতে খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরে সর্বপ্রথম সংঘটিত প্রতিক্রিয়াটি ব্যক্ত করে স্টেডিয়ামের হাজার হাজার ক্রিকেট দর্শক। তারা সমস্বরে চিৎকার করে উঠে ‘জয় বাংলা’ বলে। ধাওয়া করে পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের এবং শ্লোগানে উত্তাল হয়ে জঙ্গি মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের খবর শুনে পিআইএ’র বাঙালি কর্মচারীরাও জনসাধারণের সঙ্গে রাস্তায় নেমে পড়েন। জগন্নাথ কলেজ ও পার্শ্ববর্তী কায়েদে আযম কলেজের ছাত্ররাও লাঠিসোটা হাতে রাস্তা প্রদক্ষিণ করতে থাকে। আদমজী মিলের শ্রমিকরা চাকা বন্ধ করে শোভাযাত্রা সহকারে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
মিছিলকারীরা এ সময় বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নির্দেশ জানার জন্য হোটেল পূর্বাণী অভিমুখে মিছিলের পর মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলে। বঙ্গবন্ধু তখন হোটেল পূর্বাণীতে। সেখানে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক হওয়ার কথা। লাখ লাখ মানুষের শ্লোগান আর মিছিলে হোটেল পূর্বাণীর চত্বর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সকলেই বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নির্দেশ শোনার জন্য উৎকণ্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এক্ষুণি চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তিনি মওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, আতাউর রহমান খানসহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত তেজোদৃপ্ত ভঙ্গিতে বলেন, অধিবেশন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি তিনি বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দিতে পারেন না। তিনি বলেন, আগামী ৭ মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ বুধবার সারাদেশে হরতাল পালিত হবে। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে বলব।’ এরই মধ্যে শহরের বিভিন্ন অলিগলি পথ থেকে শত শত মিছিল পল্টন ময়দানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে জমায়েত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে এই জমায়েত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সমাবেশে বক্তৃতা করেন সাবেক ছাত্রনেতা ও নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, আর ৬ দফা, ১১ দফা নয়, এবার বাংলার মানুষের ১ দফার সংগ্রাম শুরু করব। আর এই এক দফা হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব।

সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
© All rights reserved © 2024 doorbin24.Com
Theme Customized By Shakil IT Park