প্রতারক তামজিদের কাছ থেকে পাওনা টাকা উঠিয়ে নিতে গিয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় পুলিশের হাতে চার র্যাব সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া রানু বেগম প্রতারক তামজিদের কাছ থেকে তার পাওনা টাকা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য র্যাব সদস্যদের সহায়তা চেয়েছিল। র্যাব সদস্যরা রানু বেগমকে সহায়তা করতে গিয়ে তামজিদের বোন রাইয়ানা বেগম তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করেন।
এরপর এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের হাতে রানু বেগম ও চার র্যাব সদস্য গ্রেফতার হয়। গ্রেপ্তার হওয়া রানু বেগমকে রিমান্ডে নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানতে চাইলে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই সুব্রত দেবনাথ বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য বলে রানু বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। রানু বেগম গ্রেফতার হওয়া র্যাব সদস্যদের সহযোগী। পরস্পর যোগসাজসে এরা তামজিদ হোসেনকে অর্থের জন্য অপহরণ করেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:
এরা এর আগেও কাউকে অর্থের জন্য অপহরণ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে রিমান্ডে রানু বেগমকে এসব তথ্যের পাশাপাশি র্যাব সদস্যদের সঙ্গে তার কিভাবে পরিচয়, তারা এক সঙ্গে এর আগেও কাউকে অপহরণ করেছিল কিনা এমন আরো অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এদিকে পুলিশ ও আদালত সূত্র জানিয়েছে, অপহৃত তামজিদ হোসেন গতকাল শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি কিভাবে অপহৃত হয়েছিলেন জবানবন্দিতে তার বর্ণনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
তবে অপহৃত তামজিদ সম্পর্কেও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে মগবাজারের মীরবাগ এলাকার ১/২ নম্বর বাড়ির মালিক হাসানুজ্জামান টিপু বলেন, ‘তার বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে বাবা, বোন ও স্ত্রীকে নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে মাসিক ১৯ হাজার টাকায় ভাড়া ওঠেন তামজিদ। এরপর তিন মাসের ভাড়া পরিশোধ করেছেন তামজিদ। এরপর আর ভাড়া দেয়নি। তার কাছে ভাড়া বাবদ ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পাই আমি।’
বাড়ির মালিক হাসানুজ্জামান বলেন, ‘দিচ্ছি দিবো বলে তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়ে এলেও ভাড়া পরিশোধ করেনি। আবার বাসাও ছাড়েনি তারা। তামজিদকে অপহরণ করার কথা শুনেছি। তবে দুই দিন আগে থেকে পরিবারের কেউই বাসায় নেই।’
আরও পড়ুন:
তিনি আরো বলেন, তামজিদের কাছে অনেক মানুষ টাকা পাবে। জামিল হোসেন নামে একজন তাকে জানিয়েছিলেন, ফ্ল্যাট বিক্রির করার কথা বলে তামজিদ তার (জামিল) কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন মানুষ এর আগে মাঝে মধ্যেই তামজিদের কাছে টাকা পাওয়ার কথা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। আমি বলেছি, এসব টাকার বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
জিজ্ঞাসাবাদে রানু পুলিশকে জানিয়েছে, রানু অপহৃত তামজিদ হোসেনের কাছে টাকা পেতো সেই টাকা উঠাতে র্যাব সদস্যদের সহযোগিতা নেয়। র্যাবের যেসব সদস্যরা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মধ্যে একজন সদস্য রানুর আত্মীয়।
এদিকে, তামজিদ নামের ওই ব্যক্তিকে অপহরণ করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার তাজজিদ হোসেনকে মগবাজারের বাসা থেকে উত্তরা এলাকায় যাওয়ার পথে অপহরণ করে ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে র্যাবের চার সদস্যকে রানু বেগম নামে এক নারীসহ র্যাবের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় তামজিদের বোন রাইয়ানা হোসেন গত বৃহস্পতিবার রাতে হাতিরঝিল থানায় অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা করেন। অপহরণের পর রানু বেগম মুক্তিপণের টাকা পেতে তামজিদের পরিবারকে বারবার ফোন দেয় বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।